Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

চীনবিরোধীদের বড় পদে বসাতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও (বামো) এবং মাইক ওয়াল্টজ (ডানে)।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও (বামো) এবং মাইক ওয়াল্টজ (ডানে)।
[publishpress_authors_box]

ভোটে জিতে এখন নিজের প্রশাসন সাজাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; আর তাতে চীনবিরোধীরা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে যাচ্ছে বলেই আভাস মিলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রগুলোর খবর যদি ঠিক হয়, তাহলে ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মার্কো রুবিওকে বসাতে যাচ্ছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানাচ্ছেন মাইকেল ওয়ালটজকে।

সেনেটর রুবিও এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ওয়ালটজ দুজনই চীনের কড়া সমালোচক হিসাবে পরিচিত।

ডেমোক্রেট প্রার্থী, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে নিজের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হলে কাকে কী বানাবেন, তার ফর্দ এখন তৈরি করছেন তিনি। তবে ট্রাম্প এখনও এবিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও ঘোষণা না দিলেও নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে নামগুলো আসছে।

ফ্লোরিডার সেনেটর রুবিও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকার সবচেয়ে আগ্রাসী প্রার্থী। বিগত বছরগুলোতে তিনি চীন, ইরান ও কিউবাসহ আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্র নীতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

তবে গত কয়েক বছর ধরে ট্রাম্পের মতামতের সঙ্গে মেলানোর জন্য তিনি তার কিছু অবস্থান নমনীয়ও করেছেন।

ট্রাম্পের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্টরা আমেরিকাকে ব্যয়বহুল এবং নিরর্থক যুদ্ধে জড়িয়েছেন। এজন্য তিনি আরও সংযত পররাষ্ট্র নীতির কথা বলেন।

২০১৬ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নের লড়াইয়ে মার্কো রুবিও ছিলেন। এবার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে তাকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছিল। তবে জেডি ভ্যান্সকেই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে বেছে নেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতায় ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে রুবিও একজন অনানুষ্ঠানিক পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন এবং ট্রাম্পকে ২০২০ সালে বাইডেনের বিরুদ্ধে তার প্রথম বিতর্কের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্যও করেছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে রুবিওর নিয়োগ নিশ্চিত হলে তিনি হবেন প্রথম লাতিন আমেরিকান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক হিসাবে কাজ করবেন।

তবে চপলমতি হিসাবে খ্যাত ট্রাম্প শেষ মুহূর্তে এসেও তার মত বদলাতে পারেন, এমনটাও বলে রাখছেন সাংবাদিকরা।

একটি সূত্র অবশ্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত ট্রাম্প তার পছন্দে স্থির ছিলেন বলে মনে হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।

মার্কো রুবিও তার পুরোপুরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি থেকে সরে এলেও তার সম্ভাব্য নিয়োগ ট্রাম্পের অধীনে রিপাবলিকান পররাষ্ট্র নীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

একসময় সামরিক হস্তক্ষেপ ও আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির পরামর্শ দেওয়া ট্রাম্পের বেশিরভাগ মিত্র এখন সংযমের প্রচার করে, বিশেষ করে ইউরোপের ক্ষেত্রে।

রিপাবলিকানদের অভিযোগ ছিল, ইউরোপীয় মিত্ররা নেটো জোটের প্রতিরক্ষায় তাদের ন্যায্য অংশ শোধ করছে না।

রুবিও সেপ্টেম্বরে এনবিসিকে বলেছিলেন, “আমি রাশিয়ার পক্ষে নই। তবে দুর্ভাগ্যবশত বাস্তবতা হলো যে ইউক্রেনের যুদ্ধ যেভাবে শেষ হতে চলেছে, তা হল একটি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে।”

ওয়াল্টজ একজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এবং ট্রাম্পের অনুগত, যিনি কর্নেল হিসেবে ন্যাশনাল গার্ডে দায়িত্ব পালন করেছিলে। তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের কার্যকলাপের কড়া সমালোচনা করেছেন এবং ওই অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

গত ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ওয়াল্টজ পূর্ব-মধ্য ফ্লোরিডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসাবে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট জেমস স্টকটনকে পরাজিত করেছেন, যিনি একজন যাজক এবং স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার সংগঠনের সাবেক সভাপতি।

ওয়াল্টজ সেনাবাহিনীর বিশেষ যোদ্ধা ইউনিটের কর্মকর্তা ছিলেন এবং সাবেক হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের নীতিগত উপদেষ্টা। ২০১৮ সালে রিপাবলিকান রন ডিস্যান্টিসকে হারিয়ে তিনি প্রথম নির্বাচিত হন।

ওয়াল্টজ আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছেন এবং তাকে চারটি ব্রোঞ্জ স্টার দেওয়া হয়। গত জুলাইয়ে পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার তদন্তের জন্য একটি দ্বিদলীয় কংগ্রেসনাল টাস্কফোর্সে নিযুক্ত আইন প্রণেতাদের একজন ছিলেন তিনি।

সেনাবাহিনী ছাড়ার পর ওয়াল্টজ জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড এবং রবার্ট গেটসের নীতি পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন।

সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির অধীনে ওয়াল্টজ সন্ত্রাসবিরোধী উপদেষ্টা হিসাবেও কাজ করেছিলেন।

২০২১ সালে জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সরে আসার নির্দেশ দেওয়ার পর, ওয়াল্টজ বাইডেনকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান পুনরায় চালু করতে বলেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর বুশের অধীনে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হয়।

দ্য ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে কংগ্রেসে নির্বাচনের আগে ওয়াল্টজ আফগানিস্তানে একটি লাভজনক প্রতিরক্ষা ঠিকাদারি সংস্থা পরিচালনা করেছিলেন।

ওয়াল্টজ ধারাবাহিকভাবে আফগান জনগণের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সৈন্যদের সেখানে আবারও ফিরে যেতে হবে’।

সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগঠন প্রচেষ্টায় ৪৮ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং ৬৬ হাজার আফগান পুলিশ ও সামরিক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে এবং ব্যাপক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

 এছাড়া ট্রাম্প স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিতে চলেছেন দক্ষিণ ডাকোটার গভর্নর ক্রিস্টি নয়েমকে। তিনিও কট্টর চীনবিরোধী বলে পরিচিত।

গত বুধবার জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরপরই ট্রাম্প তার প্রচার শিবিরের সহ-সভাপতি সুসি ওয়াইলসকে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ পদে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এরপর ট্রাম্প তার বিগত প্রশাসনের অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোম্যানকে ‘বর্ডার জার’ হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেন।

পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিও) প্রধান হিসেবে ট্রাম্প তার রাজনীতির শুরুর দিককার মিত্র লি জেলডিনের নাম প্রস্তাব করেছেন।

আর নিউ ইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য এলিসে স্টেফানিককে জাতিসংঘের দূত হিসেবে বেছে নিয়েছেন। স্টেফানিক ইসরায়েলের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে থাকেন।

স্টেফানিক ও জেলডিনের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তবে সিনেটের তদারকি এড়াতে সেখানে ছুটি চলাকালেই নিয়োগগুলো দিতে চাইছেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি বিষয়টিকে রীতিমতো আনুগত্যের পরীক্ষায় পরিণত করেছেন।

গত শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, সিনেটের নেতা হতে চাওয়া যেকোনও রিপাবলিকান সদস্যকে অবশ্যই ‘ছুটিকালীন নিয়োগে’ সম্মতি দিতে হবে।

এটাকে ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের প্রকাশ হিসাবেও দেখা হচ্ছে।

ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই সিনেটের নেতা হতে ইচ্ছুক তিন সিনেটর আলাদা করে বলেছেন, তারা এ ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন কিংবা এ ধারণাকে তারা অন্ততপক্ষে সাদরে বিবেচনা করছেন।

ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প প্রায় ৪ হাজার রাজনৈতিক নিয়োগ দিতে পারবেন।

২০১৬ সালে প্রথম মেয়াদের সময় মন্ত্রিসভা গঠনে ট্রাম্প কয়েক মাস সময় নিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি, রয়টার্স, সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত