ডোনাল্ড ট্রাম্প যা বলেন, তা কি ঠিক বলেন? কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কের পর এই প্রশ্ন আবার এসেছে সামনে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার তারা প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে নেমেছিলেন। সেখানে এক ঝুড়ি মিথ্যাচার ট্রাম্প করেছেন বলে সিএনএন খুঁজে বের করেছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবার আবার রিপাবলিকান প্রার্থী হয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছেন। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
কমলার জন্য প্রথম হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের জন্য এটি ছিল দ্বিতীয় বিতর্ক। প্রথম বিতর্কটি হয়েছিল জুনের শেষদিকে ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে। তখন পর্যন্ত বাইডেন িছলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী।
সেই বিতর্কে বাজেভাবে হেরে যাওয়ার কারণেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে হয়। ট্রাম্পের মিথ্যাচার ও কৌশলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন বাইডেন।
প্রথম বিতর্কের মতো এবারও ট্রাম্প প্রচুর মিথ্যা কথা বলেছেন। তবে কমলার কৌশলের কাছে এবার তিনি নাস্তানাবুদ হন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বিতর্কে ট্রাম্পের ৩০টিরও বেশি মিথ্যা শনাক্ত করেছে।
সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প আবারও বিস্ময়কর পরিমাণ এবং বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা দাবি করেছেন। এর মধ্যে গর্ভপাত, অভিবাসন ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মারাত্মক কিছু মিথ্যা বলেন তিনি।
অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস প্রায় কোনও মিথ্যা বলেননি বললেও অত্যুক্তি হবে না। সিএনএনের প্রাথমিক বিেশ্লষণে তার কাছ থেকে একটি মিথ্যা দাবি পাওয়া গেছে, যদিও তিনি এমন কিছু দাবিও করেছেন, যেগুলো বিভ্রান্তিকর বা মূল প্রসঙ্গে ছিল না। তবে ট্রাম্পের মিথ্যার তুলনায় সেগুলো নগণ্যই ছিল বলা চলে।
ট্রাম্প যেসব মিথ্যা বলেছেন
১. বিতর্কে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার প্রশাসনের সময় (২০১৬-২০২০) কার্যত কোনও মূল্যস্ফীতি ছিল না। এটি পুরোপুরি একটি মিথ্যা দাবি। ট্রাম্পের সময় গড়ে ৭.৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।
২. অভিবাসনবিরোধী ট্রাম্প দাবি করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারাগার ও পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পাওয়া মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হতে আসছে।
ট্রাম্প বলেন, “কারাগার ও মানসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং পাগলা গারদ থেকে লাখ লাখ মানুষ আমাদের দেশে প্রবেশ করছে।”
এবারের নির্বাচনী প্রচারেও বারবার ট্রাম্প এই দাবি করেন। এমনকি ট্রাম্প বলেন, যেকোনোভাবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারাগার এবং মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে খালি করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই দাবির সত্যতার পক্ষে কোনও প্রমাণ নেই। এমনকি অভিবাসনবিরোধী দুটি সংস্থার প্রতিনিধিরাও গত বছর সিএনএনকে বলেছিলেন, তারা ট্রাম্পের এই দাবির পক্ষে কিছু শোনেননি, যেমনটি অভিবাসনের প্রতি অনুকূল সংস্থার তিনজন বিশেষজ্ঞও বলেন।
সিএনএন-এর নিজস্ব অনুসন্ধানেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গুজব নির্ণয়কারী ওয়েবসাইট FactCheck.orgও কিছুই খুঁজে পায়নি।
ট্রাম্প কখনও কখনও তার এই দাবির পেছনে যুক্তি দেন যে, বিশ্বব্যাপী কারাগারের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এটাও ভুল।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞদের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী কারাগারের জনসংখ্যা ২০২১ সালের অক্টোবরে ছিল ১০.৭৭ মিলিয়ন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে তা বেড়ে ১০.৯৯ মিলিয়ন হয়েছে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশের ব্যাপারে ট্রাম্প আরও দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে প্রতি মাসে ২১ মিলিয়ন মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে।
ট্রাম্পের দাবি করা এই সংখ্যা মিথ্যা এবং অনেক বেশি অতিরঞ্জিত। বাস্তবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তিন বছরেরও বেশি সময়ে উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে সর্বমোট ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে এদের অনেকেকই ফিরিয়েও দেওয়া হয়।
জুনেও ট্রাম্প এমন দাবি করেছিলেন। তখন মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মুখপাত্র মিশেল মিটেলস্ট্যাড বলেছিলেন, বৈধ-অবৈধভাবে মিলিয়ে গত তিন বছরেরও বেশি সময়ে সর্বোচ্চ ১৮ মিলিয়ন (১ কোটি ৮০ লাখ) মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করে।
৪. মঙ্গলবার ট্রাম্প পুনরায় দাবি করেন যে, ওহাইওর স্প্রিংফিল্ড শহরে হাইতিয়ান অভিবাসীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের পোষা কুকুর ও বিড়াল চুরি করে নিয়ে জবাই করে খেয়ে ফেলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনেটর জেডি ভ্যান্সসহ অন্যান্য রিপাবলিকান নেতারাও এই প্রচার চালাচ্ছে।
এটাও মিথ্যা দাবি। স্প্রিংফিল্ড কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ বলেছে, এই দাবির পক্ষে তারা কোনও প্রমাণ দেখতে পাননি। তারা জানান, ফেইসবুকের একটি পোস্ট থেকে থেকে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। নিজেকে স্থানীয় বাসিন্দা বলে দাবি করা একজন ফেইসবুকে তাদের প্রতিবেশীর মেয়ের এক অভিবাসী বন্ধুর গল্প বলেছিল।
৫. ট্রাম্প দাবি করেন তিনি শুল্ক আরোপ করার ফলে চীন থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এটিও ট্রাম্পের একটি মিথ্যা দাবি। সাধারণত অন্য দেশের নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানি পণ্য আমদানি করে তাদেরকেই শুল্ক দিতে, যখন তারা একটি বিদেশী পণ্য আমেরিকায় নিয়ে আসে। আমদানি পণ্যের শুল্কের খরচ সাধারণত সরাসরি আমেরিকান আমদানিকারকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আসে।
ফেডারেল সরকারের দ্বিদলীয় ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের গবেষণাসহ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, চীনা পণ্যের উপর ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের প্রায় পুরোটাই বহন করেছে আমেরিকানরা।
এটা সত্য যে, আমদানি করা সৌর প্যানেল, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম এবং চীনের তৈরি পণ্যের উপর ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক থেকে ২৪২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়েছে। তবে সেই শুল্ক চীনকে নয় যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের দিতে হয়েছে।
৬. ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছে।
ট্রাম্পের এই দাবিও মিথ্যা। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ২০২২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৯.১ শতাংশে উঠেছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি নয়। তবে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে ১৯৮০ সালে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। তার আগে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১৯১৭ সালে— প্রায় ১৮ শতাংশ।
৭. ট্রাম্প দাবি করেন, ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার দৌড়ে কমলা হ্যারিস সবার আগে বাদ পড়েন। কারণ তিনি কোনও ভোটই পাননি।
এটাও সত্য নয়। জো বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও কমলা হ্যারিস ওয়াশিংটন, মন্টানা এবং কলোরাডোর বর্তমান বা সাবেক গভর্নরদের চেয়ে এগিয়ে আগে ছিলেন।
৮. ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে বাইডেন প্রশাসনের ‘সীমান্ত জার’ বলে আখ্যা দেন। ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন প্রশাসনে কমলা হ্যারিসই সীমান্ত ও অভিবাসন ইস্যু নিয়ে কাজ করত।
ট্রাম্পের দেখাদেখি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও কমলা হ্যারিসকে বর্ডার জার বলে সম্বোধন করা হলেও হোয়াইট হাউস বারবার বলেছে এটা ঠিক নয়। বাইডেন প্রশাসনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মায়োরকাস ছিলেন সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা।
বাইডেন কমলা হ্যারিসকে ২০২১ দায়িত্ব দিয়েছিলেন এল সালভাদর, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। যেসব পরিস্থিতির কারণে ওই দেশগুলোর নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের চেষ্টা করতে প্ররোচিত হয়েছিল সেসব নিরসনে নিয়ে আলোচনার জন্য।
৯. ট্রাম্প দাবি করেন, আইন বিশেষজ্ঞরাও গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নয় বরং রাজ্যগুলোর হাতে ছেড়ে দিতে চান।
ট্রাম্প বলেন, “প্রত্যেক আইনি পণ্ডিত, প্রত্যেক ডেমোক্র্যাট, প্রত্যেক রিপাবলিকান, উদারপন্থী, রক্ষণশীল, সকলেই চেয়েছিলেন এই ইস্যুটিকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হোক যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারে এবং সেটাই হয়েছে।”
আইন বিশেষজ্ঞরা সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্পের এই দাবি সত্য নয়। তাদের অনেকেই চেয়েছিলেন, গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকুক।
১০. ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার জন্য ট্রাম্প সেসময়কার প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ওপর দায় চাপান। ন্যান্সি ছিলেন ডেমোক্রেট প্রতিনিধি। ট্রাম্প বলেন, ন্যান্সি পেলোসি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই হামলা হতে পেরেছিল।
ট্রাম্পের এই দাবিও মিথ্যা। স্পিকার ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন না। ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তা ক্যাপিটল পুলিশ বোর্ড তত্ত্বাবধান করে। এই সংস্থায় প্রতিনিধি পরিষদ এবং সেনেটের অস্ত্রসজ্জিত সার্জেন্টরা থাকেন। পার্লামেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর স্পিকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ বা দায়িত্ব থাকে না।
১১. ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার কয়েক দিন আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তাকে আক্রমণ থেকে বিরত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
ট্রাম্পের এই দাবিও সত্য নয়। হ্যারিসকে শান্তি আলোচনার জন্য পাঠানো হয়নি এবং তিনি পুতিনের সঙ্গে কখনও দেখাও করেননি। বাস্তবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের আগের দিনগুলোতে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে দেখা করেছিলেন। পুতিন সেই সম্মেলনে ছিলেন না।
১২. মঙ্গলবার রাতের বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি পরিচিত দাবির পুনরাবৃত্তি করেন, যা তিনি এর আগে অনেক বক্তৃতায়ও করেছিলেন। ট্রাম্পের দাবি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় যুক্তরাষ্ট্র ৮৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম তালেবানদের কাছে রেখে আসে।
ট্রাম্পের ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পরিসংখ্যান মিথ্যা। এটা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্র আফগান বাহিনীকে যেসব সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ তালেবানদের হাতে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের হিসাবে সেসবের মূল্য ৮৫ বিলিয়ন ডলার নয়, বড় জোর ৭.১ বিলিয়ন ডলার হবে। যুক্তরাষ্ট্র আফগান সেনাবাহিনীকে ২০০৫-২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮.৬ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রশিস্ত্র দিয়েছিল। এসবের মধ্যে কিছু সরঞ্জাম ব্যবহার অযোগ্যও হয়ে পড়েছিল।
১৩. ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের অধীনে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত যত কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি করা হয় তার মধ্যে ৮ লাখ ১৮ হাজার চাকরি ছিল ‘ভুয়া’।
ট্রাম্পের এই দাবিও মিথ্যা। বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন কোনও ভুয়া কর্মসংস্থান দেখাননি।
শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত যত কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল বাস্তবে তার চেয়ে ৮ লাখ ১৮ হাজার কম চাকরি ছিল। এটি ছিল সংশোধিত প্রতিবেদন। ট্রাম্পের সময়ও শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো এভাবে সংশোধিত প্রতিবেদন প্রকাশ করত।
১৪. ট্রাম্প আরও অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার মস্কোর মেয়রের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩.৫ মিলিয়ন ডলার সহ চীন ও ইউক্রেন থেকেও অর্থ নিয়েছেন।
এটাও মিথ্যা দাবি। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বা বেসরকারী নাগরিক হিসাবে কোনও বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পেয়েছিলেন এমন কোনও প্রকাশ্য প্রমাণ নেই। তবে হাউস রিপাবলিকানদের তদন্তে পাওয়া গেছে যে, বাইডেন পরিবারের সদস্যরা, যারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, যেমন তার ছেলে হান্টার বাইডেন ও জেমস বাইডেন (এবং তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি) বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলারেররও বেশি গ্রহণ করেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজে কোনও বিদেশী অর্থ পেয়েছেন এমন প্রমাণ তারা দেখাতে পারেননি।
১৫. ট্রাম্পের দাবি, তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করা হয়েছে, সেসবের পেছনে বাইডেন প্রশাসনের হাত রয়েছে।
এই দাবিও সত্য নয়। বাইডেন বা তার প্রশাসন এই মামলাগুলোর কোনওটির পেছনে ছিল এমন কোনও প্রমাণ নেই। এই কর্মকর্তাদের কেউ প্রেসিডেন্ট বা এমনকি ফেডারেল সরকারের কাছেও দায়বদ্ধ নয়।
১৬. মঙ্গলবার ট্রাম্প পুনরায় দাবি করেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠন করেছেন।
এই দাবিরও কোনও সত্যতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সরঞ্জামের বেশিরভাগই ট্রাম্পের আগের সময়কার।
১৭. ট্রাম্প দাবি করেন, ইউক্রেনকে ইউরোপের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। তার এই দাবিরও সত্যতা নেই। বাস্তবে ইউরোপে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশিই অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
১৮. ট্রাম্পের দাবি, ডেমোক্রেট শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ বেড়েছে।
অথচ এফবিআই রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০২৩ সাল থেকে অপরাধ কমেছে।
১৯. ইউরোপে তেল-গ্যাস সরবরাহের জন্য রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন বন্ধে নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন ট্রাম্প।
তবে সত্য হল, ট্রাম্প যখন ওই পাইপলাইন নির্মাণে যুক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তখন এর প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে এসেছিল। এমনকি নিষেধাজ্ঞার পরও জার্মানি ও রাশিয়া এর নির্মাণ অব্যাহত রাখে।
পরে ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে জার্মানি এর কাজ স্থগিত করে। আর ২০২২ সালের শেষদিকে এক বিস্ফোরণে পাইপ লইনটি ফেটে যায়।
২০. ট্রাম্প দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে গর্ভধারণের নবম মাসে গর্ভপাতসহ শিশুর জন্মের পরও গর্ভপাত করার অধিকার রয়েছে। এটা আসলে গর্ভপাত নয়, শিশু হত্য। সত্য হল যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্যেই শিশু হত্যা নিষিদ্ধ।
এছাড়া ট্রাম্প ন্যাটোর খরচ বহনে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ব্যয়, ওবামার স্বাস্থ্যসেবা রক্ষায় তার অবদানসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা দাবি করেন।
বিপরীতে কমলা হ্যারিস মাত্র একটি মিথ্যা বলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ছিল মহামন্দার পর সবচেয়ে বেশি। কমলার এই দাবি সত্য নয়।
এটা ঠিক যে ২০২০ সালের এপ্রিলে ট্রাম্প যখন ক্ষমতায়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত শতকের ত্রিশের দশকের বৈশ্বিক মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেকারত্ব এটি। তবে এর জন্য করোনা মহামারি দায়ী ছিল। একই বছরের ডিসেম্বরে ট্রাম্প যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
তথ্যসূত্র : সিএনএন