Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ট্রাম্প কি আসলেই ইরানের শাসন ব্যবস্থা বদলাতে চাইছেন

image
[publishpress_authors_box]

ইরানে হামলা চালানোর পরদিনই দেশটিতে ‘রেজিম চেঞ্জ’র কথাটি ভাসিয়ে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তা নিয়ে যখন চলছে তুমুল আলোচনা; তখন হোয়াইট হাউস জানাল, এটা ট্রাম্পের ইচ্ছা নয়।

তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে দুই দেশের যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে।

রবিবার এক সোশাল মিডিয়া পোস্টে ইরানে শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের আলাপ তোলেন ট্রাম্প।

ট্রুথ সোশালে তিনি লেখেন, “রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘রেজিম চেঞ্জ’ বলাটা ঠিক হয় না, কিন্তু ইরানের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী যদি মেইক ইরান গ্রেট এগেইন করতে না পারে, তাহলে সেখানে রেজিম চেঞ্জ কেন হবে না???”

তার একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বাধুনিক বাংকার বাস্টার বোমা নিয়ে হামলা চালায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে। তার মধ্যদিয়ে জড়িত হয় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে।

পাঁচ দশক আগে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশীল শুরু থেকেই। ট্রাম্প তাদের হটিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলার পর তা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়ে ওঠে, টেলিভিশনগুলোতে শুরু হয় আলোচনা।

তারমধ্যেই হোয়াইট হাউস জানাল যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কথা বলেননি।

প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্টের অবস্থান এবং আমাদের সামরিক অবস্থান পরিবর্তিত হয়নি।”

তাহলে ট্রাম্প কেন ওই কথা বললেন, তার ব্যাখ্যায় প্রেস সচিব বলেন, “প্রেসিডেন্ট কেবল একটি প্রশ্ন উত্থাপন করছিলেন, যা আমি মনে করি বিশ্বের অনেক মানুষ জিজ্ঞাসা করছে- যদি ইরানি শাসন তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করতে বা আলোচনায় জড়িত হতে অস্বীকার করে, যদি তারা ভবিষ্যতে কূটনীতিতে অংশ নিতে অস্বীকার করে, তাহলে কেন ইরানি জনগণ এই বর্বর সন্ত্রাসী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে না?”

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট।

তার এই কথার মানে দাঁড়ায়, ট্রাম্প বলছেন যে ইরানিরাই হয়ত ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ ঘটাতে পারে।

তাহলে ইরানে হামলার উদ্দেশ্য কী? ট্রাম্পের আগের কথা ধরলে উদ্দেশ্যটি হচ্ছে, পরমাণু বোমা তৈরির উচ্চাভিলাষ থেকে ইরানকে সরিয়ে এনে তাকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা। ওয়াশিংটন চায় না, ইরান কোনোভাবে পরমাণু বোমার অধিকারী হোক।

কিন্তু গত ১৩ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর এক সপ্তাহে ট্রাম্পের মত বদল কয়েকবারই দেখেছে বিশ্ববাসী।

বিশ্বের সব যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই দফায় ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প শুরুতে বলেছিলেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে না।

এরপর খবর আসে যে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। তখন আবার তিনি বলেন যে অনুমোদন দিলেও হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

এরপর ইরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ফিরতে দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু দুই দিন না যেতেই সরাসরি হামলা চালালেন তিনি; বললেন, শান্তি ফেরাতে এই পদক্ষেপ।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলা চালাবে কি না, এনিয়ে গুঞ্জন চলার মধ্যে কয়েকদিন আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তার মনে কী চলছে, তা কেউ জানে না।

ফলে ‘রেজিম চেঞ্জ’ নিয়ে তার বক্তব্য হোয়াইট হাউস কথার পিঠে কথা বলে নাকচ করে দিেলও তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’র কথাটি বলা যতটা সহজ, তা করাটা ততটাই কঠিন বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।

এরমধ্যে আবার রয়টার্স লিখেছে, ট্রাম্প ইরানে শাসনব্যবস্থা বদলানোর প্রসঙ্গ তুললেও এনিয়ে তার পরামর্শকদের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানে শাসন পরিবর্তন হলেও তা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার আসাটা নিশ্চিত করবে না। বরং ক্ষমতা চলে যেতে পারে আরও আগ্রাসী কোনও শক্তির হাতে, যারা পারমাণবিক বোমার অধিকারী হতে আরও মরিয়া হবে।

বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি নিহত হলে তা যে ইরানের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যেও বিপর্যয় নামিয়ে আনতে পারে, সেটাও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় রাখা দরকার।

আরেকটি বিকল্প হিসাবে ইরানের সামরিক বাহিনীর একটি অংশ ক্ষমতা নিতে পারে। তবে সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের মনমতো হবে না বলে ওয়াশিংটনের কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পার্সি মনে করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘকাল ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলোর আঁতুরঘর ইরান, যদি তার সরকারের পতন হয়, তবে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। শূন্যতা পূরণে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নৃশংস এক প্রতিযোগিতা দেখা দিতে পারে।   

“শাসন ব্যবস্থার পতন মানে রাষ্ট্রের পতন এবং এর ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা বাড়তে দেওয়া,” বলেন পার্সি।

বোস্টন ইউনিভার্সিটির ফ্রেডরিক এস পার্ডি সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লংগার-রেঞ্জ ফিউচারের ভিজিটিং ফেলো আরাশ আজিজি বলছেন, ইরানে লাগাতার হামলা দেশটির শাসন ব্যবস্থায় মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবে স্বৈরশাসনের পরিবর্তে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হবে, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তার মতে, ইরানের নিয়ন্ত্রণ তখন চলে যাবে ওলিগার্ক ও জেনারেলদের হাতে। সংক্ষেপে বলা যায়, তখন ইরান তার আশেপাশের অনেক আরব দেশের মতো হয়ে উঠবে।

তথ্যসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত