চীন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার থেকে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে ১০ শতাংশ করে শুল্ক বসবে।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদারের পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশ তিনটি।
মেক্সিকো ও কানাডা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর তারাও শুল্ক বসাতে যাচ্ছে। অন্যদিকে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানিয়েছে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাঠ, স্টিল, অটোমোবাইল খাত থেকে শুরু করে হিমায়িত খাবার, মদের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
যুক্তরাষ্ট্র বছরে যত পণ্য আমদানি করে, তার ৪০ শতাংশের বেশি হয় চীন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে।
গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, অবৈধ অভিবাসী ও মাদক পাচার ঘিরে তার উদ্বেগ চীন, মেক্সিকো ও কানাডা যদি আমলে না নেয়, তাহলে তাদের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন তিনি।
শনিবার তিন ব্যবসায়িক অংশীদারের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার সময় ট্রাম্প এও বলেন, দেশ তিনটি যদি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসায়, তাহলে তাদের পণ্যে শুল্কের হার আরও বাড়ানো হবে।
এনিয়ে শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি বিবৃতি পোস্ট করে হোয়াইট হাউস। তাতে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত মাদকের ঢল বন্ধে চীন, মেক্সিকো ও কানাডা অঙ্গীকার করেছিল। সেই অঙ্গীকারের বিষয়ে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আজকের শুল্ক আরোপের ঘোষণা জরুরি ছিল।”
এছাড়া বিবৃতিতে মেক্সিকো সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তাদের সঙ্গে দেশটির মাদক চোরাচালানি চক্রের ‘সুসম্পর্ক’ আছে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে এক পোস্টে বলেন, “অবৈধ অভিবাসীর হুমকি এবং ফেন্টানিলসহ অন্যান্য মাদক আমাদের নাগরিকদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এ কারণে ইন্টারন্যাশনাল ইমারজেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্টের (আইইইপিএ) মাধ্যমে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।”
এদিকে, মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে দেশটির মাদক চোরাচালানি চক্রের ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে বলে হোয়াইট হাউসের অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম পারদো।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “মেক্সিকোর মাদক পাচারকারী চক্রগুলোর কাছে অবৈধভাবে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
“তাছাড়া পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং আলোচনার মাধ্যমেই সংকট কাটানো সম্ভব।”
বিবিসি জানিয়েছে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট তার অর্থমন্ত্রীকে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে মেক্সিকো।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও।
শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা এই জায়গায় আসতে চাইনি। এখন কানাডার জনগণের কল্যাণে আমরা পিছপা হব না।”
ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৫ বিলিয়ন মূল্যের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এছাড়া ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে চীন।
এক বিবৃতিতে দেশটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘অন্যায় কাজের’ বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) তারা মামলা করবে। একই সঙ্গে চীনের নাগরিকদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় পাল্টা পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, সিএনএন