Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

খামেনিকে খুনের ছক, ঠেকিয়ে দিলেন ট্রাম্প

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি।
[publishpress_authors_box]

সংঘাতের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার একটি ছক এঁটেছিল ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে দেশটির সংবাদমাধ্যমে এসেছে এমন তোলপাড় করা খবর।

তবে তা বাস্তবায়িত হলো না কেন? ওই কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা ঠেকিয়ে দিয়েছেন।

বছর ধরে উত্তেজনা চলার পর শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায় ইরানে। হামলা হয় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে। সেই হামলায় ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন।

ইরানও তার পাল্টা জবাব দেয় ইসরায়েলে ড্রোন হামলায়। মাঝে অন্তত দুটি দেশ জর্ডান ও ইরাককে রেখে তারপর থেকে দুই দেশই পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এরমধ্যেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে খবর আসে যে ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় দুজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইসরায়েলিদের ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করার একটি সুযোগ ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে জানিয়ে দেয় যে এতে ট্রাম্পের সায় নেই। সেই কারণে পরিকল্পনাটি কার্যকর করা হয়নি।

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, ট্রাম্প উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী। মধ্যপ্রাচ্যকে আরেকটি বড় যুদ্ধের মধ্যে ফেলতে চান না তিনি।

যুক্তরােষ্ট্র বিবিসির পার্টনার সিবিএস নিউজও ওয়াশিংটনের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলের পরিকল্পনা এবং ট্রাম্পের তা আটকে দেওয়ার খবর দিয়েছে।

তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে এই ধরনের চিন্তা মোটেই ভালো কিছু নয়।

সিবিএস নিউজ জানায়, এই বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আলোচনাটি হয় গত শুক্রবার সংঘাত শুরুর পরপরই।

ইসরায়েলের পরিকল্পনা এবং ট্রাম্পের তা ঠেকিয়ে দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কোনও ভাষ্য পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স নিউজকে রবিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুকে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা স্বীকারও করেননি, আবার নাকচও করেননি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এবিষয়ে উত্তর দেওয়া এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, এসব কথোপকথনের এমন সব ভুয়া খবর রয়েছে যে তিনি এনিয়ে কথা বলতে চান না।

হত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ফেরার পর ট্রাম্প আশা দেখিয়েছিলেন যে তিনি সব যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু আগের যুদ্ধের সঙ্গে নতুন যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখাই তার জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুরুর পর ট্রাম্প বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়াবে না। আবার সেই সঙ্গে বলেন যে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার চেষ্টায় পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প যুদ্ধে না জড়ানোর কথা বললেও ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবর যে ওয়াশিংটনের জানা ছিল, তা এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।

সংঘাত বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে উঠলেও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী।

তাদের ভাষ্য হলো, ট্রাম্প একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এড়াতে চান। কারণ তা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।

ট্রাম্প রবিবার সকালেও এবিসি নিউজকে বলেন, “আমরা এতে জড়িত নই। আমরা জড়িত হতে পারি, এমন সম্ভাবনা আছে। তবে এই মুহূর্তে আমরা জড়িত নই।”

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা বাতিলের পরও শনিবার সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে তিনি বলেন, সংঘাতের অবসান হওয়া দরকার।

তিনি তেহরানের সঙ্গে একটি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী, যা ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করবে।

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের তেহরানের একটি ভবন।
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের তেহরানের একটি ভবন।

ট্রাম্প এক সময় তার পূর্বসূরিদের সমালোচনা করতেন এই বলে যে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের মরতে পাঠাচ্ছে।

তিনি গত মাসেও ওয়েস্ট পয়েন্টে স্নাতক ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “অন্তত দুই দশক ধরে উভয় দলের রাজনৈতিক নেতারা আমাদের সামরিক বাহিনীকে এমন মিশনে টেনে নিয়ে গেছে, যেখানে তাদের কখনোই থাকার কথা ছিল না।”

ইরানে হামলায় সহায়তা না করলেও ইসরায়েলকে আত্মরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিচ্ছে। তবে স্বার্থে আঘাত এলে যুক্তরাষ্ট্রও যে এই যুদ্ধে জড়াবে, তাও বলে রেখেছেন ট্রাম্প।

গত শনিবারই সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে তিনি বলেন, “যদি আমরা ইরানের দ্বারা কোনোভাবে, কোনোরূপে আক্রান্ত হই, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ শক্তি ও ক্ষমতা এমন মাত্রায় নেমে আসবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।”

হোয়াইট হাউস এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ধারণা দিয়েছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযান সপ্তাহ ধরে চলবে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন নিয়েই।

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক সপ্তাহের সময়সীমার বিরোধিতা করেনি।

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগতই ছিল।

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে চলমান অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতা চুরমার করে দেওয়া। এটা নিশ্চিত করা যে ইরান আর ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি নয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত