নির্বাচনী সমাবেশে হামলার শিকার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, তাকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলি তার কান ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় গুলি চালানো হয় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে। তবে প্রাণে বেঁচে যান ট্রাম্প। গুলি কানে বিদ্ধ হয়ে ট্রাম্প আহত হলেও তার সমাবেশে আসা এক ব্যক্তি নিহত এবং আরও দুজন আহত হয়েছেন।
পরে ট্রাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হন হামলাকারী। সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন।
এ ঘটনার পর ট্রাম্প পরে তার সোশাল মিডিয়া ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। গুলি আমার কান ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। গুলিতে ডান কানের উপরের দিকের চামড়া চিড়ে গেছে।”
তিনি লিখেছেন, “হঠাৎ আমি অদ্ভুত শব্দ শুনি, সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি অঘটন ঘটেছে। আর তখনই অনুভব করি গুলি আমার কান ফুটো করে দিয়েছে। অনেক রক্ত পড়তে থাকে, আমি তখন বুঝতে পারি কী ঘটেছে।”
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, “এটা অবিশ্বাস্য যে আমাদের দেশে এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারী সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। হামলাকারী নিহত হয়েছেন।”
দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ট্রাম্প তার পোস্টে সিক্রেট সার্ভিস ও অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তার এক নিহত সমর্থকের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানিয়েছেন ট্রাম্প।
পোস্টের শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘ঈশ্বর আমেরিকার মঙ্গল করুন!’
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ট্রাম্প। এই নির্বাচন সামনে রেখেই শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভেনিয়ায় এক সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। সেখানেই হত্যাচেষ্টার শিকার হন ট্রাম্প।
পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে নির্বাচনী সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্য শুরুর পাঁচ মিনিট পরই গুলির শব্দ শোনা যায়।
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া হামলার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রাম্প মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার মধ্যেই হঠাৎ গুলির শব্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে কানে হাত দিয়ে নিচে বসে পড়েন ট্রাম্প। এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত তাকে ঘিরে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর ট্রাম্প উঠে দাঁড়ান। সে সময় ট্রাম্পের ডান কান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। রক্ত লেগেছিল তার মুখেও।
মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্লোগান দিতে শুরু করেন ট্রাম্প। ডান হাতের মুঠি শক্ত করে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ফাইট, ফাইট, ফাইট।’
এরপর সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ট্রাম্পকে দ্রুত একটি গাড়িতে তোলেন। এ সময় ট্রাম্পের কান ও গাল বেয়ে রক্ত পড়তে দেখা যায়। ওই গাড়িতে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সমাবেশের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ট্রাম্প মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ পরই পাশের একটি ভবনের ছাদে হামলাকারীকে হাতে রাইফেল নিয়ে উঠতে দেখেন তিনি।
গ্রেইগ নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, তিনি সমাবেশে বাইরে ছিলেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট কী বলছিলেন সেটিই কেবল শুনতে পারছিলেন। তখনি ছাদে থাকা এক ব্যক্তি তার নজরে আসে।
“আমি লক্ষ্য করি যে আমাদের পাশের ভবনের ছাদে একজন গুলি হাতে অগ্রসর হচ্ছে। সে আমাদের ৫০ ফুট দূরে ছিলো। তার কাছে একটা রাইফেল ছিলো, আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম যে একটা রাইফেল ছিলো।
“আমি ভাবছিলাম ট্রাম্প কেন এখনও বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। তাকে কেন স্টেজ থেকে নামানো হচ্ছে না। তার দিকে তাঁকিয়ে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর পরপর পাঁচটি গুলির শব্দ হল।”
জেন ও থেরেসা নামে আরও দুজন প্রত্যক্ষদর্শী পেনসিলভ্যানিয়ার বাটলার কাউন্টির ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। বিবিসি নিউজকে তারা জানিয়েছেন, মোট ছয় থেকে আটটি গুলি ও পাল্টা গুলির শব্দ শুনেছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বাইডেন বলেছেন, “এ ধরনের সহিংসতার কোনও জায়গা আমেরিকায় নেই। এটা জঘন্য, জঘন্য। এ হামলায় কে বা কারা জড়িত তার সব তথ্য খুঁজে বের করা হবে। এর নিন্দা জানাতেও এক জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
সিক্রেট সার্ভিস মুখপাত্র অ্যান্থনি গুগলিয়েলমি বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিরাপদ আছেন এবং ঘটনাটি সিক্রেট সার্ভিস তদন্ত করছে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার রাতে প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরছেন এবং রবিবার সকালে হোয়াইট হাউসে ফিরবেন। হামলার সময় তিনি ডেলাওয়্যারের রেহোবোথ সমুদ্র সৈকতে ছিলেন।
কার্যালয়ে ফিরে তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তদন্তের হালনাগাদ তথ্য নেবেন।
সিএনএন জানায়, এই ঘটনার পর ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের কী কথা হয়েছে- এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে কোনও প্রেসিডেন্টের ওপর হামলা এবারই প্রথম নয়। ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকেসহ সাবেক চার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।