Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার আগেই ফাঁস হয়েছিল ইরানি ষড়যন্ত্র

TRUMP_Iran
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গত শনিবার যে হত্যাচেষ্টা হয় তার আগেই তাকে হত্যার একটি ইরানি ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়েছিল। ওই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে তার নিরাপত্তাও বাড়িয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ট্রাম্পকে শনিবার পেনসিলভেনিয়ায় গুলি করে হত্যার যে চেষ্টা হয় তার সঙ্গে ইরানের কথিত চক্রান্তের কোনও যোগসাজশ আছে কিনা- তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এমন প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের নিরাপত্তা জোরদারের খবর সামনে আসায় কীভাবে ২০ বছর বয়সী টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস ট্রাম্পের এতো কাছের একটি ভবনের ছাদে উঠতে পারল- সে প্রশ্নও উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সামনে রেখে গত ১৩ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় হামলার শিকার হন ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মাত্র ১৩০ মিটার দূর থেকে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে গুলি করেন ক্রুকস। এতে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ডান কান ফুঁড়ে যায় তার।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস ও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরকেও ইরানি হুমকির বিষয়ে জানানো হয়েছিল। এরপর তার নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছিল।

তবে, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন এই অভিযোগকে ‘অপ্রমাণিত এবং বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছে। ইরানি মিশন এও বলেছে, ট্রাম্প “একজন অপরাধী যাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে আদালতে বিচার করতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।”

গোয়েন্দা সূত্র বিবিসির সংবাদ অংশীদার সিবিএসকে জানিয়েছে, ইরানের হুমকির প্রেক্ষাপটে সিক্রেট সার্ভিস জুন মাসেই ট্রাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করে। ট্রাম্পের জন্য অতিরিক্ত কাউন্টার-অ্যাসল্ট ও কাউন্টার-স্নাইপার এজেন্ট এবং ড্রোন ও রোবোটিক কুকুরও মোতায়েন করা হয়।

সিবিএস বলেছে, ইরানের সম্ভাব্য হামলার বিশদ বিবরণ ‘মানব গোয়েন্দা উৎস’ থেকে পাওয়া গেছে। ট্রাম্পকে হামলা নিয়ে ইরানিদের কথাবার্তা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল।

২০২০ সালে ইরানের আল কুদস বাহিনীর কমান্ডার কাসেম সোলেয়মানিকে ইরাকের বাগদাদ বিমান বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকেই ট্রাম্প এবং তার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইসহ কয়েকজন কর্মকর্তা তেহরানের পাল্টা হামলার হুমকির মুখে রয়েছেন।

ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি বলেন, তারাসহ অন্য সংস্থাগুলো ‘নিয়ত নতুন সম্ভাব্য হুমকির তথ্য পাচ্ছিলেন এবং প্রয়োজন অনুসারে রিসোর্স সমন্বয় করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন।”

অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি বলেন, “আমরা কোনও নির্দিষ্ট হুমকি সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারি না। শুধু বলতে পারি, সিক্রেট সার্ভিস হুমকিগুলোকে গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয় এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও নেয়।”

ট্রাম্পের প্রচার শিবির বলছে, তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি এবং বিবিসির প্রশ্নগুলোকে সিক্রেট সার্ভিসের কাছে তুলে ধরেছে।

হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বছরের পর বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইরানি হুমকির খোঁজ রাখছিলেন।

তিনি বলেন, “এই হুমকিগুলো কাশেম সোলায়মানির হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইরানের ইচ্ছা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। আমরা এটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটি জাতীয় এবং স্বদেশ নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করি।”

তদন্তে এখনো ক্রকসের সঙ্গে “বিদেশি বা অভ্যন্তরীণ কোনও সহযোগী বা সহ-ষড়যন্ত্রকারীর সম্পর্কের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একজন সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ ঘোষণা করে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন।

প্রসিকিউটররা বলেছেন, ষড়যন্ত্রটি ‘সম্ভবত সোলায়মানিকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য’ করা হয়।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্পের সমাবেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা এবং সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রুকস কীভাবে ট্রাম্পের এত কাছাকাছি যেতে সক্ষম হলেন।

সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক স্বীকার করেছেন, ক্রুকস যখন ছাদ থেকে ট্রাম্পকে গুলি করেন তখন পুলিশ সদস্যরা ভবনটির ভেতরেই ছিলেন।

সিবিএস নিউজ বলছে, স্থানীয় পুলিশের তিনজন স্নাইপার ভবনে ছিলেন। তারা ক্রুকসকে ছাদেও উঠতে দেখেছিলেন।

স্থানীয় পুলিশ বিবিসির প্রশ্নগুলো রাজ্য পুলিশের কাছে তুলে ধরেছে। তাদের দাবি ভবনটি যে এলাকায় তার নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের হাতে ছিল না।

রাজ্য পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, তারা ৩০ থেকে ৪০ জন সৈন্যসহ সিক্রেট সার্ভিসের চাওয়া ‘সমস্ত রিসোর্স’ সরবরাহ করেছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বন্দুকধারী কীভাবে ট্রাম্পের এতো কাছাকাছি গিয়েছিল তা নিয়ে একটি স্বাধীন পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। সিক্রেট সার্ভিস সংসদীয় তদন্তের মুখোমুখিও হয়েছে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত