যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের সদস্যরা এমন সামরিক অফিসারদের তালিকা করছেন যাদের বরখাস্ত করা হতে পারে।
দুটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ওই তালিকায় জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ বা প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের নামও রয়েছে।
এরা হলেন- জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ, নৌবাহিনীর প্রধান, বিমান বাহিনীর প্রধান, মেরিন কর্পসের কমান্ড্যান্ট, ন্যাশনাল গার্ড ব্যুরো প্রধান ও মহাকাশ অভিযানের প্রধান।
সূত্র জানায়, পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং নতুন প্রশাসন মূর্ত হওয়ার পাশাপাশি এটি পরিবর্তিতও হতে পারে।
একটি সূত্র পেন্টাগনে ব্যাপক রদবদলের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প শিবির মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
ট্রাম্প নিজে এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করবেন কিনা তাও এখনও অস্পষ্ট। যদিও অতীতে তিনি তার বিরোধিতা করা প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।
দ্বিতীয় সূত্রটি বলেছে, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত এমন সামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে পারে যাদের ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলির সঙ্গে সম্পর্ক আছে।
গত মাসে প্রকাশিত বব উডওয়ার্ডের ‘ওয়ার’ বইয়ে মার্ক মিলিকে উদ্ধৃত করা হয়েছিল, যেখানে তিনি ট্রাম্পকে ‘স্বভাবগতভাবে ফ্যাসিবাদী’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের মিত্ররা মিলিকে তার প্রতি আনুগত্যহীনতার জন্য টার্গেট করেছে।
দ্বিতীয় সূত্রটি বলেছে, “মার্ক মিলি যাদের নিয়োগ ও প্রমোশন দিয়েছেন তাদের সকলকে ট্রাম্প প্রশাসন সরিয়ে দিতে পারে।
“মিলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের একটি বিস্তারিত তালিকা করা হয়েছে এবং তাদের সবাইকে চলে যেতে হবে।”
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ঊর্ধ্বতন সামরিক নেতৃত্বের অনেকের সঙ্গেই তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মার্ক মিলিও তেমনই একজন, যিনি জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান থাকাকালে ট্রাম্পের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
ট্রাম্প তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে ফক্স নিউজের হোস্ট ও রক্ষণশীল লেখক পিট হেগসেথকে বাছাই করার একদিন পর সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডারদের বরখাস্ত করার এই পরিকল্পনার কথা ফাঁস হলো।
সামরিক বিষয়ে জ্ঞান রাখা পিট হেগসেথ পেন্টাগনকে পরিষ্কার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
হেগসেথ তার ২০২৪ সালের বই ‘দ্য ওয়ার অন ওয়ারিয়র্স: বিহাইন্ড দ্য বিট্রেয়াল অব দ্য মেন হু কিপ ইউ ফ্রি’-তে বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে এবং আমাদের শত্রুদের পরাস্ত করতে প্রস্তুত করার জন্য পেন্টাগনের সিনিয়র নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। অনেক লোককে চাকরিচ্যুত করতে হবে।”
হেগসেথ তার বইয়ে মিলির উত্তরসূরি এয়ার ফোর্স জেনারেল চার্লস কিউ. ব্রাউনকে প্রধান টার্গেট করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ব্রাউন কৃষ্ণাঙ্গ না হলে প্রতিরক্ষা বাহীনিগুলোর চেয়ারম্যানের পদ পেতেন কিনা।
হেগসেথ বইয়ে লিখেছেন, “এটা কি তার গায়ের রঙের কারণে হয়েছিল? নাকি তার দক্ষতা? তা আমরা কখনোই জানতে পারব না।”
ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত প্রথম সূত্রটি বলেছে, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান ব্রাউনকেও অনেক অফিসারের সঙ্গে চলে যেতে হবে।
“জয়েন্ট চিফদের প্রধানদের এবং সমস্ত ভাইস চিফদের অবিলম্বে বরখাস্ত করা হবে।” তবে সূত্রটি জানায়, পরিকল্পনাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং চূড়ান্ত করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তা অবশ্য এই ধরনের একটি বড় ঝাঁকুনির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার সময়ে এটি অপ্রয়োজনীয় এবং ছন্দপতন ঘটাবে।
প্রথম সূত্রটি বলেছে, আমলাতান্ত্রিকভাবে এতো বেশি সংখ্যক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা এবং প্রতিস্থাপন করা কঠিন হবে।
তবে দ্বিতীয় সূত্রটি বলেছে, ট্রাম্প শিবির বিশ্বাস করে, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক প্রভাব প্রতিপত্তি কমানো দরকার।
সূত্রটির মতে, এই ধরনের রদবদল সামরিক বাহিনীর মাপকাঠিতেও সম্ভব।
সূত্রটি বলেন, “এই মানুষগুলো অপরিবর্তনীয় নয়। তারা খুবই প্রতিস্থাপনযোগ্য। আর দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসার মতো লোকেরও অভাব নেই।”
তিনি আরও বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমরা খুব দ্রুত মাত্র ৩০ বছরের বেশি বয়সী তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগ্যদের জেনারেল পদে নিয়োগ দিয়েছিলাম। এরপর আমরা যুদ্ধেও জিতেছি।”
সামরিক কর্মকর্তারাও পেন্টাগনে ব্যাপক রদবদলের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি কী কী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে তা নিয়ে ভাবছেন বলে জানা গেছে।
গত রবিবার (১০ নভেম্বর) একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছিলেন, “আমরা সবাই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”