Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

তেহরান ছাড়ার হিড়িক, কিন্তু যাবে কোথায়

ইসরায়েলের হামলার পর তেহরান ছাড়ার হিড়িকে ব্যাপক যানজট বহির্গমন সড়কগুলোতে।
ইসরায়েলের হামলার পর তেহরান ছাড়ার হিড়িকে ব্যাপক যানজট বহির্গমন সড়কগুলোতে।
[publishpress_authors_box]

একের পর এক ইসরায়েলের গোলা এসে পড়ছে; তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলার পর শঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় তেহরান ছাড়ার হিড়িক পড়েছে।

“কিন্তু ১ কোটি মানুষ কীভাবে তেহরান ছাড়বে?” প্রশ্নটি তুলেছেন তেহরানের এক বাসিন্দা ভিডিও গেম স্ট্রিমারদের একটি গ্রুপের চ্যাটে।

প্রাণ বাঁচাতে অসম্ভব এক চেষ্টায় নেমেছেন ইরানের রাজধানীর বাসিন্দাদের অনেকে। তাতে পেট্রোল পাম্পে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভিড়, আর সড়কে ব্যাপক যানজট।

তা দেখে নার্গিস নামে এক নারী বললেন, শহর ছেড়ে যেতে রাস্তায় আটকে পড়ার কোনও মানে আছে বলে মনে হয় না।

বছরজুড়ে উত্তেজনার পর গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের পরমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানোর পর বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা।

আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের কোনও ঘোষণা না এলেও মাঝে ইরাক ও জর্ডানকে রেখে দুই দেশই পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

তাতে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব যেমন নিরাপদ থাকছে না, তেমনি অনিরাপদ এখন ইরানের রাজধানী তেহরান।

তার মধ্যেই সোমবার কানাডায় জি-সেভেন বৈঠকের ফাঁকে তেহরানবাসীকে শহর ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ট্রাম্প।

পারমাণবিক চুক্তিতে ইরান সই করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তিনি ট্রুথ সোশালে লেখেন, “স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারে না। সবার দ্রুত তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিৎ।”

তেহরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাওয়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক দিন আগে তেহরানের কিছু অংশের বাসিন্দাদের চলে যেতে বলেছিলেন। এখন ট্রাম্প পুরো শহর খালি করতে বলায় ইরানিদের উদ্বেগ চরমে উঠেছে।

ট্রাম্প আহ্বান জানালেও তার কোনও কারণ ব্যাখ্যা করেননি। তবে তার ঠিক পরপরই মঙ্গলবার সকালে তেহরানে বিস্ফোরণের বিকট শব্দেই তার ব্যাখ্যা খুঁজে নিচ্ছেন ইরানিরা।  

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তেহরানের একটি ভবনে উদ্ধারকর্মীরা খুঁজে ফিরছে লাশ।

বিবিসি জানিয়েছে, তেহরান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

আরাশ (ছদ্মনাম) নামে একজন তেহরান থেকে আর্মেনিয়ায় গিয়ে উঠেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তারা সোমবার সকাল পৌনে ৯টায় যাত্রা শুরু করেছিলেন। উত্তর-পশ্চিম ইরানের কাজভিন শহরের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেড় ঘণ্টার পথ পাঁচ ঘণ্টায় পাড়ি দেন।

“অনেকেই, বিশেষ করে যারা বিদেশে থাকেন, দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন,” বলেন তিনি।

আরেকজন বলেন, “আমার পরিচিত একটি পরিবার তেহরান থেকে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল এবং যে যাত্রা সাধারণত তিন ঘণ্টা লাগার কথা, সেটি ১৪ ঘণ্টায় শেষ হয়েছে। তারপরও তারা বলেছিল যে বের হতে পেরে তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছে।”

পথের এই ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে অনেকে তেহরান ছাড়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে চাইছে।

একজন বলেন, “আমি রাতে একজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তারা তেহরান ছেড়েছে কি না? তখন সে আমাকে বলল- “রাস্তাগুলো আক্ষরিক অর্থেই বন্ধ, তাই এখন গিয়ে যানজটে আটকে থাকাটার কোনও মানে নেই।”

এই পরিস্থিতি দেখে নার্গিস নামে এক নারী তেহরানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন; যদিও তার মনে আতঙ্ক ক্রমেই বাড়ছে।

“শহরটা খুব খালি খালি লাগছে। গত রাতে ট্রাম্প মানুষকে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানোর পর থেকে মনে হচ্ছে আরও অনেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

শহর ছাড়তে গিয়ে রাস্তায় আটকে থাকায় ঝুঁকি দেখছেন নার্গিস। কিন্তু শহরও নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। তিনি যেখানে থাকেন, তার পাশেই ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্রের সদর দপ্তর সোমবার আক্রান্ত হয়েছিল।

ওই এলাকার ফারানাক নামে একজন বলেন, “আমি মনে করি না গাড়ি করে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা নিরাপদ।”

তবে থেকেও যে ভালো আছেন, তা নয়। সোমবার রাতভর বিস্ফোরণের বিকট সব শব্দের সঙ্গে থাকতে হয়েছে তাবে। এক পর্যায়ে ভবন ছেড়ে শেল্টারে আশ্রয় নেন বৃদ্ধা মাকে সঙ্গে করে। ফেরার পথে পেট্রোল পাম্পে দেখেন কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ি লাইন।

তেহরানের কেউ কেউ উত্তর ইরানে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফারানাকের মতো অনেকে তেহরানে থেকেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন।

মেসেজিং অ্যাপে ইরানি গ্রুপগুলোতে এখন আলোচনার একটিই বিষয়, তা হলো কোথায়, কখন হামলা হয়েছে।

একজন লিখেছেন, “আমি শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্ত। গত চার রাত ধরে ঘুমাতে পারিনি।”

ট্রাম্প ইরানিদের তেহরান খালি করার তাগাদা দিলেও কেন তা বলছেন, এর কোনও ব্যাখ্যা দেননি।

গত শুক্রবার সংঘাত শুরুর পর তিনি বলেছিলেন, ইরান-ইসরায়েলের এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানলে তারা ছেড়ে কথা কইবে না।

সোমবার তেল আবিব যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের একটি অংশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের খবর আসে। আবার পরমাণু আলোচনা থেকে ইরানও তাদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

কানাডা ছাড়ার আগে এয়ারফোর্স ওয়ানে ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এরই মধ্যে কানাডায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন।

সেখানে যৌথ বিবৃতিতে অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে দায়ী করা হয়। তাদের পারমাণবিক অস্ত্রে অধিকারী হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতিও সমর্থন জানানো হয়।

সম্মেলন শেষ হওয়ার একদিন আগেই কানাডা ছেড়ে ওয়াশিংটনে রওনা হন ট্রাম্প। তিনি সাংবাদিকদের শুধু বলেন, কিছু ‘জরুরি কারণে’ তাকে ফিরতে হচ্ছে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি পদক্ষেপ নিতে ট্রাম্পের এই প্রত্যাগমন বলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ধারণা দিলেও তা ‘ভুল’ বলে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইসরায়েল আর ইরানের মধ্যেকার চুক্তির সঙ্গে তার এভাবে চলে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমি কেন ওয়াশিযংটন ফিরছি, সে বিষয়ে তার (ম্যাক্রোঁ) কোনও ধারণা নেই। তবে সেটা অবশ্যই যুদ্ধবিরতি বিষয়ক কিছু নয়। বরং তার থেকে বড় কিছু।”

তার আগে তেহরান খালি করার আহ্বান জানিয়ে লেখা পোস্টে ট্রাম্প আরও লেখেন, “আমি যে চুক্তির কথা বলেছিলাম, সেখানে ইরানের সই করা উচিৎ ছিল। কী লজ্জা, এভাবে মানব জীবনের অপচয় হচ্ছে।”

এর আগে শোনা গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহেই পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসবে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত