Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

জেলেনস্কির সঙ্গে এবারের বৈঠকে ট্রাম্পের ভিন্ন বার্তা

trump-zelensky-meeting-in-vatican-260425-02
[publishpress_authors_box]

গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে উত্তপ্ত এক আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক। সেই বৈঠকের পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকেই দোষ দিয়ে আসছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

তবে দুই মাস পর রোমে ভ্যাটিকানে নিবিড় এক বৈঠকে ট্রাম্পের কথায় পাওয়া গেল ভিন্ন সুর। তিনি এবার সন্দেহ প্রকাশ করলেন, যুদ্ধবিরতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসলেই আগ্রহী কি না?

ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহের প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। তারপর তিন বছর ধরে চলা সেই যুদ্ধে গোটা বিশ্বই ভুগছে।

ট্রাম্প গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময়ই বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে একদিনের মধ্যেই এই যুদ্ধ থামিয়ে দিতেন।

গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেন তিনি। তারমধ্যেই ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে তার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসে ট্রাম্প।

তবে সেই বৈঠকে নজিরবিহীন উত্তপ্ত আলোচনার পর হোয়াইট হাউস থেকে একরকম বেরই করে দেওয়া হয় জেলেনস্কিকে। যুদ্ধবিরতির চেয়ে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতেই বেশি আগ্রহী বলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়।

ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া চালিয়ে যেতে অনাগ্রহী ট্রাম্প এরপর কয়েকবারই জেলেনস্কির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তবে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতাদের মধ্যস্থতায় শনিবার দুজনের বৈঠকটির আবহ ছিল হোয়াইট হাউসের আলোচনার ঠিক বিপরীত।

সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকাতে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে দুজনকে একান্তে গভীর আলোচনায় নিমগ্ন দেখা যায়। ১৫ মিনিটের ওই বৈঠককে ‘খুব ফলপ্রসূ’ বলেছে হোয়াইট হাউস। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও বলেছেন, ঐতিহাসিক কিছু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বৈঠক শেষে রোম ছাড়ার আগে ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে এই সপ্তাহের শুরুতে কিয়েভে মস্কোর হামলার ঘটনা ধরে পুতিনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি লিখেছেন, এই হামলা দেখে তার মনে হচ্ছে পুতিন হয়ত এই যুদ্ধ থামাতে চাইছেন না।

“তিনি হয়ত আমাকে ফাঁদে ফেলতে চাইছেন। এখন আমরার মনে হচ্ছে, নতুন ভাবে ভাবতে হবে।”

সেক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিতও দিয়েছেন ট্রাম্প।

অথচ কয়েকদিন আগেও ট্রাম্প তার দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠকের সূত্র ধরে বলেছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এদিকে ক্রেমলিন শনিবার বলেছে, পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দূত উইটকফকে পূর্বশর্ত ছাড়াই ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে রাশিয়া প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

তবে এখন জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্পের কথায় পুতিনকে নিয়ে সন্দেহের বিষয়টি ঘুরে-ফিরে আসছে।

বৈঠকের দুটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ট্রাম্পকে নীল স্যুট এবং জেলেনস্কিকে কালো পোশাকে একে অন্যের কথা আগ্রহ ভরে শুনতে দেখা গেছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিয়ি সিবিহা একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছেন- “এই ঐতিহাসিক বৈঠকের গুরুত্ব বর্ণনা করতে কোনও শব্দ ব্যয়ের প্রয়োজন নেই।”

ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের পোস্ট করা অন্য একটি ছবিতে ট্রাম্প-জেলেনস্কিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে ম্যাক্রোঁর হাত ছিল জেলেনস্কির কাঁধে।

এর মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট, দুই ইউরোপীয় নেতা পোপের শেষকৃত্যের বিষণ্ণ পটভূমিতে দুজনকে একত্রিত করতে ভূমিকা রাখছিলেন।

বৈঠকের পর ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ব্যাসিলিকার সিঁড়ি দিয়ে একসঙ্গে হেঁটে যান এবং অতিথিদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসেন। তাদের তখন করতালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা অবশ্য দ্বিতীয় একটি বৈঠকের সম্ভাবনার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের মোটর শোভাযাত্রা সঙ্গে সঙ্গেই সেন্ট পিটার্স স্কয়ার থেকে চলে যায় এবং তার বিমান কিছুক্ষণ পরেই রোম ছাড়ে।

জেলেনস্কি পরে ভিলা বোনাপার্টের বাগানে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। ভিলা ওলকনস্কিতে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। দেখা করেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়নের সঙ্গেও।

যুদ্ধ শেষ করার জন্য মস্কোর সঙ্গে একটি চুক্তি করতে কিছু ছাড় মেনে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের কাছ থেকে চাপের মধ্যে ছিলেন জেলেনস্কি।

তবে এখন পরিস্থিতির বদলের ইঙ্গিত মিলছে। জেলেনস্কি শুক্রবার বলেন, একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিই আলোচনার ক্ষেত্রগুলো উন্মুক্ত করবে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত