রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অচিরেই এক শান্তি সম্মেলনে বসতে পারেন। সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের জরুরি বৈঠকের পর এমন ইঙ্গিত মিলেছে। ওই আলোচনার মূল কেন্দ্র ছিল কিয়েভের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রশ্ন।
হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের ও জেলেনস্কির সঙ্গে “খুব ভালো” বৈঠকের পর ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। গত সপ্তাহে আলাস্কার আঙ্কোরেজে দুজনের মুখোমুখি বৈঠকের পর এটাই প্রথম সংলাপ। এতে সম্ভাব্য অগ্রগতির আশা আরও জোরালো হয়েছে।
পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক হলে তা হবে মস্কোর পূর্ণমাত্রার অভিযানের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর রুশ ও ইউক্রেনীয় নেতার মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ।
শান্তি আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখেই ট্রাম্প সোমবার নিজের ট্রুথ সোশাল অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “রাশিয়া/ইউক্রেনের জন্য শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে সবাই খুবই খুশি।”
“চুক্তি করতে চায়”
সোমবার ৭ জন ইউরোপীয় নেতাকে হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দেন ট্রাম্প। তাদের মধ্যে ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন ও ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সমন্বিতভাবে নিশ্চিত করার পথ খুঁজে বের করা।
বৈঠকের আগে হঠাৎই একটি হট মাইকে ধরা পড়ে ট্রাম্পের মন্তব্য, যা পরে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাক্রোঁকে তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট আসলে “চুক্তি করতে চায়। আমার মনে হয় তিনি (পুতিন) চুক্তি করতে চান। আমি মনে করি তিনি আমার সঙ্গেই চুক্তি করতে চান, বুঝতে পারছেন তো? শুনতে হয়তো অদ্ভুত লাগছে, কিন্তু এটাই আমার ধারণা।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, সাম্প্রতিক আলাস্কার বৈঠকে তিনি পুতিনের কাছ থেকে একটি সমঝোতার ইচ্ছার ইঙ্গিত পেয়েছেন।
জেলেনস্কি: “পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তুত”
হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে “প্রস্তুত”।
মস্কো থেকেও ক্রেমলিনের এক সহকারী জানিয়েছেন, পুতিন সরাসরি আলোচনার “ধারণার প্রতি উদার”।
ইউক্রেন যুদ্ধ এখন কার্যত অচলাবস্থায় পৌঁছেছে, যদিও সম্প্রতি রাশিয়ার সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। গত শুক্রবার ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক কোনও যুদ্ধবিরতি এনে দিতে পারেনি।
এরপরই ট্রাম্পের চাপের মুখে জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে দৌড়ে আসেন। কারণ ট্রাম্প বারবার তাকে রাশিয়ার প্রতি কিছু ছাড় দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। পরে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় কমিশন এবং ন্যাটোর নেতারা ঘোষণা দেন তারাও ওয়াশিংটনে আসবেন। এটি ছিল মূলত কিয়েভের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের প্রকাশ।
ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির একান্ত বৈঠকও হয়। এটিই ছিল ফেব্রুয়ারির সেই তিক্ত মুখোমুখির পর তাদের প্রথম সাক্ষাৎ।
জেলেনস্কি সাংবাদিকদের জানান, এটি ছিল তাদের “সেরা বৈঠক”। আগের মতো তীব্র উত্তেজনা এবার দেখা যায়নি। ফেব্রুয়ারির আলোচনায় ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স টিভি ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে তাকে অকৃতজ্ঞ বলে সমালোচনা করেছিলেন।
তথ্যসূত্র : সিএনএন।



