Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

লন্ডনে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ চান টিউলিপ সিদ্দিক

০০
[publishpress_authors_box]

দুর্নীতি সংক্রান্ত ‘ভুল বোঝাবুঝি’ নিরসনে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করতে চান সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশের প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগের পর সমালোচনার মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকারের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

রবিবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। শেখ হাসিনা ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি।

শেখ রেহানা সেদিন বোনের সঙ্গে ভারত যান; সেখান থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য ২০১৫ সাল থেকে। গত বছর লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে তাকে সিটি মিনিস্টার করা হয়েছিল। কিন্তু লন্ডনে ভবন কেলেঙ্কারির অভিযোগের মুখে তিনি কয়েক মাস আগে পদত্যাগ করেন।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তার ১৫ বছরের শাসনামলের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার অভিযোগ করেছে যে, টিউলিপ সিদ্দিক পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে সুবিধা পেয়েছেন।

গণমাধ্যমে এনিয়ে একাধিক অভিযোগও প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি অভিযোগ বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে এসেছে। তারা দাবি করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক অথবা তার মা ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি প্লট ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে গ্রহণ করেছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবীরা এসব অভিযোগকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” ও ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করেছেন। টিউলিপ সিদ্দিক আরও জানান, এসব অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের কোনও কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

মন্ত্রীদের আচরণবিধি পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস টিউলিপ সিদ্দিককে কোনও ভুল কাজে জড়িত মনে করেননি। তারপরও তিনি নতুন সরকার গঠনের পর কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় অর্থ সচিব ও সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

এক চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরকালে তার সাক্ষাৎ চেয়েছেন চলমান বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করার জন্য। লন্ডন সফরে ইউনূস রাজা চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন এবং ডাউনিং স্ট্রিটে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক লিখেছেন, তিনি আশা করেন একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে “দুদকের তৈরি ভুল ধারণা” দূর করা যাবে। 

ধারণা করা হচ্ছে, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে জবাবদিহি করতে পারেন।

চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, “আমি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। আমি লন্ডনে জন্মেছি এবং গত এক দশক ধরে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট এলাকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি পার্লামেন্টে।

“বাংলাদেশে আমার কোনও সম্পত্তি নেই এবং কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থও নেই। বাংলাদেশ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেটি আমার জন্মস্থান নয়। আমি সেখানে থাকি না বা পেশাগত জীবনও গড়ে তুলি নাই।”

তিনি লিখেছেন, “আমি বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছি দুদকের কাছে। কিন্তু তারা লন্ডনে আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। বরং ঢাকার একটি অজানা ঠিকানায় বারবার চিঠি পাঠাচ্ছে।”

টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, “এই কাল্পনিক তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ আগে থেকেই গণমাধ্যমে জানানো হচ্ছে। অথচ আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি।”

তিনি চিঠিতে আরও বলেন, “আমি জানি আপনি বুঝবেন, এই ধরনের প্রতিবেদন যাতে আমার প্রতিনিধিত্বে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সেটা নিশ্চিত করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। এই অভিযোগগুলো শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ববি হাজ্জাজের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, তার খালার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বদনাম ছড়ানোর অভিযানে” লিপ্ত হয়েছে।

গত মাসে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়, বাংলাদেশের একটি আদালত টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

তবে তিনি জানিয়েছেন, এই পরোয়ানা বা কোনও শুনানির বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। যুক্তরাজ্য একটি ২বি ধরনের প্রত্যার্পণ চুক্তির দেশের অংশ হওয়ায়, সেখানে মন্ত্রী ও বিচারকরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তারি আদেশ কার্যকর করেন না।

গত বছর টিউলিপ সিদ্দিক নিজ থেকেই মন্ত্রীদের আচরণবিধি পর্যালোচনাকারী উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ তোলেন। তখন তার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি অর্জন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।

উপদেষ্টা ম্যাগনাস জানান, টিউলিপ সিদ্দিকের কোনও সম্পদ অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরিবারের সম্পর্ক থেকে যে ভাবমূর্তিগত ঝুঁকি তৈরি হয়, তা সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।

তদন্তে ২০১৩ সালে মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও শেখ হাসিনার মধ্যে একটি পারমাণবিক চুক্তি সইয়ের সময় সিদ্দিকের উপস্থিতির বিষয়টিও দেখা হয়। সে সময় গণমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তবে টিউলিপ সিদ্দিক জানান, তিনি সামাজিক সফরে মস্কো গিয়েছিলেন এবং পর্যটক হিসেবে সেখানে ছিলেন। উপদেষ্টা তার এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেন।

গত মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিলাসবহুল লন্ডনের সম্পত্তি জব্দ করে। এই সম্পত্তির মালিক দুই ব্যক্তি। টিউলিপ সিদ্দিকের খালার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে।

টিউলিপের কোনও চিঠি পাইনি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিকের কোনও চিঠি তারা পাননি।

ওই চিঠির বিষয়ে রবিবার বিকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, “আমরা টিউলিপ সিদ্দিকের কোনও চিঠি পাইনি। ৫ (জুন) তারিখ থেকে আমরা ছুটিতে আছি।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার ৯ জুনলন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং ১৪ জুন দেশে ফিরে আসবেন।

বিডিনিউজ জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি হাতে না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, যে চিঠিতে ইউনূসকে হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্নভোজ বা বিকালে চা পানের আমন্ত্রণ জানান যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেী হচ্ছেন দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ এগিয়ে নিতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যাচ্ছেন তারা।

মূলত এ সফরেই ইউনূসের সঙ্গে বসার ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি পাঠানোর কথা বলছেন টিউলিপ।

প্রেস সচিবের ভাষ্য, “ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমরা ৫ জুন থেকে ছুটিতে আছি। আগামীকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমরা যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হব। যেহেতু চিঠি হাতে পাইনি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।”

কিন্তু টিউলিপের ঘনিষ্ঠ একজন বিডিনিউজের লন্ডন প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশাকে বলেছেন, গত ৪ জুন চিঠি পাঠানোর পর ইউনূসের দিক থেকে এখানও কোনো সাড়া পাননি এই ব্রিটিশ এমপি।

ওই ব্যক্তি বলেন, “দুদক কেন পেছনে লেগেছে টিউলিপ তা বুঝতে পারছেন না। তারা লন্ডনে যোগাযোগ না করে ঢাকায় সুধা সদনের ঠিকানায় চিঠি পাঠাচ্ছে।

“টিউলিপ এখন মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সবকিছু তাকে বুঝিয়ে বলতে চান। সমস্ত কাগজপত্র তার কাছে আছে, সেগুলো তিনি দেখাতে চান।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত