আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার মিরপুরে আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী নামে একজনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটাবিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার।
মামলায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট মিরপুর গোলচত্বর এলাকায় গুলিতে নিহত হন আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী। এ ঘটনায় তার বাবা আল আমিন পাটোয়ারী মিরপুর মডেল থানায় মামলাটি করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন সরকার তুরিন আফরোজকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলেন। আদালত তার উপস্থিতিতে শুনানির দিন ২১ এপ্রিল ধার্য করেন।
এদিন শুনানিতে তুরিন আফরোজকে হাজির করা হয়। পরে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে। আদালতে অনেকটা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন তুরিন আফরোজ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনের শিক্ষক তুরিন আফরোজ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনায় ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই প্রসিকিউশন দল থেকে বাদ পড়ার পর একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য হিসাবে সক্রিয় ছিলেন তুরিন।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উত্তরায় তুরিনের বাড়িতেও হামলা হয়েছিল। তার প্রায় আট মাস পর আন্দোলনে উত্তরায় আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি হিসেবে গত ৭ এপ্রিল রাতে তাকে উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে ১২ এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার ৭ মাস পর গত ২৭ মার্চ উত্তরা পশ্চিম থানায় জব্বার মামলাটি করেন। তাতে আসামি হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তুরিন আফরোজসহ ৫০ জনের নাম রয়েছে। তুরিনের নাম ৩০ নম্বরে।
ওই মামলায় বলা হয়, তুরিনসহ আসামিরা ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার এবং বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুভূতিতে আঘাত করে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সারাদেশে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে দুপুর ১২টার দিকে উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হন জব্বার। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সেরে ওঠেন তিনি। জব্বারসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য আসামিদের দায়ী করা হয় মামলায়।
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আমু-আনিসুল-পলক
একই আদালত এদিন পৃথক মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, আনিসুল হক, শাজাহান খানসহ সাত জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছে।
অন্য আসামিরা হলো সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, কামাল আহমেদ মজুমদার, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটির দিলীপ কুমার আগারওয়াল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
শাহবাগ থানাধীন এলাকায় ব্যবসায়ী মো. মনির হত্যা মামলায় আমীর হোসেন আমু ও শাজাহান খানকে এবং পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন রাব্বি হত্যা মামলায় আনিসুল হক ও জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এছাড়া মিরপুর থানার এক মামলায় কামাল আহমেদ মজুমদার ও শেরেবাংলা নগর থানার এক মামলায় দিলীপ কুমার আগারওয়ালকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।