Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ইসরায়েলে আর পণ্য পাঠাবে না তুরস্ক

Turkey
Picture of কল্লোল কর্মকার

কল্লোল কর্মকার

গাজা যুদ্ধের ছয় মাস পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তুরস্ক। মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতির দাবিতে জাতিসংঘের পাশাপাশি তুরস্কও তার বাণিজ্যিক মিত্র ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছিল।

এনিয়ে গত সপ্তাহে আঙ্কারা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তেল আবিবের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল।

এরই প্রতিক্রিয়া হিসাবে তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে জানানো হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আঙ্কারা ইস্পাত ও জেট জ্বালানিসহ বিভিন্ন উপকরণ ইসারায়েলে রপ্তানি সীমিত করবে।

গাজায় ইসরায়েলের অবিরাম হামলার মধ্যেই তুরস্ক সেখানে কয়েক হাজার টন খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে। দেশটির ধারাবাহিকতায় আরও কয়েকটি দেশ ও সংস্থা গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের বাধার মুখে পড়ে।

গাজা যুদ্ধের কারণে তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তুরস্কের এই পদক্ষেপ দেশটির অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এনিয়ে এরদোগান প্রশাসনকে সংসদে আইনপ্রণেতাদের জোরালো প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়।

তুরস্কের বিধিনিষেধের মধ্যে লোহা, মার্বেল, ইস্পাত, সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়াম, ইট, সার, নির্মাণ সরঞ্জাম, বিমানের জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিভাগের ৫৪টি পণ্য রয়েছে।

তুর্কি রপ্তানিকারক সমিতির (টিআইএম) তথ্য অনুসারে, অক্টোবরের ৭ তারিখের পর ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য কমে। কিন্তু ২০২৪ সালে প্রতি মাসে ইসরায়েলে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৪২৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ কম।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন মেনে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং সেখানে নিরবিচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেবে, ততক্ষণ এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।”

এমন বিবৃতি প্রকাশের পর ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ তুরস্কের রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন’ বলেছেন। আঙ্কারার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া তেল আবিব জানাবে বলেও তিনি জানান।

ইসরায়েল কাটজ বলেন, “তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান হামাসকে সমর্থন দিতে আবারও তুরস্কের জনগণের অর্থনৈতিক স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছেন। আমরা এর জবাব দেব।”

তুরস্ক ছাড়া ফ্রান্সও এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন সেজার্নে পরামর্শ দিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরায়েলকে গাজায় আরও সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চাপ দেওয়া।

তিনি বলেন, “পশ্চিম তীরে সহিংসতাকারী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি ফ্রান্স। গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমরা পদক্ষেপ নিতে থাকব।”

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস একযোগে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে ১২০০ ইসরায়েলি নিহত ও আড়াইশ জন জিম্মি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সেদিন থেকেই গাজায় স্থল ও বিমান হামলা চালাতে শুরু করে। এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

যুদ্ধের মধ্যে গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজাবাসী দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তের দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কোনও আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত