দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ সদস্যদের অনেককেই দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে কদমবুসি করতে।
প্রধানমন্ত্রীকে কদমবুসি করায় আগ্রহ বেশি দেখা গেছে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের। এমনকি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির দু’একজন এমপিকেও দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর চরণ ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিতে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় মঙ্গলবার বিকাল ৩টায়। অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ আগে ২টা ৫৪ মিনিটের দিকে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী এলেই তাকে ঘিরে ধরেন সংসদ সদস্যরা। সালাম ও কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়েও সালাম করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি থাকতে সরকার দলীয় এমপিদের চেয়েও আগ্রহ বেশি ছিল আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপিদের।
নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য অনেকেই প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ছিলেন। জাতীয় পার্টির দুই একজন এমপিও প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দিতে দেখা যায়।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্যদিয়ে গঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। এই নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।
২০১৯ সালে ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। আইন অনুযায়ী, ওই সংসদের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি শেষ হয়।
গত সংসদে বিএনপি থাকলেও এবার দলটি নেই। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ায় ভোট বর্জন করে তারা। একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষের আগে দলটির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগও করেছিলেন।
এবার ভোটের তিন দিন পর গত ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তার ২০ দিন পর মঙ্গলবার অধিবেশন শুরু হয়।
ঘিয়ে রঙের জমিনে বেগুনি আঁচল ও পাড়ের শাড়ি পরে সংসদ অধিবেশনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। আসনে বসার আগেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জড়ো হন সংসদ সদস্যরা। তারা সবাই সংসদ নেতাকে সালাম দেন। তখন কয়েকজন এমপিকে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে।
খালেদা জিয়ার সরকারে আইন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন শাহজাহান ওমর। নির্বাচনের আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঝালকাঠি-১ আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়া শাহজাহান ওমরকেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। পরে তিনিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দল গঠন করা ইবরাহিম নিজের এলাকা হাটহাজারি ছেড়ে এবারই প্রথম এমপি হলেন কক্সবাজার-১ আসন থেকে।
দ্বাদশ সংসদে ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপির সবাই আওয়ামী লীগের। তাদের অনেকেই এতদিন দল করলেও শেখ হাসিনার দেখা পাননি। মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তারা ছিলেন আপ্লুত।
প্রধানমন্ত্রীকে সরকার দলীয় এমপি ছাড়াও স্বতন্ত্র এমপিরা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। ভিড়ের কারণে যারা কাছে এসে সালাম করতে পারেননি তারাও দূরে দাঁড়িয়ে সালাম দেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে।
বেলা ৩টার দিকে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে এমপিরা নিজ নিজ আসনের দিকে চলে যান। এ সময় সবাইকে নিজ নিজ আসনে গিয়ে বসার জন্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে তাগদা দিতে দেখা যায়।
সংসদের প্রথম সারিতে বসলেন যারা
সরকারি বেঞ্চের (স্পিকারের ডান পার্শ্বে) প্রথম আসনে বরাবরের মতোই সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসছেন। এর পরের আসনটি ছিল ফাঁকা।
এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ওবায়দুল কাদের ও তোফায়েল আহমেদ বসেন।
মাঝের (স্পিকারের মুখোমুখি) অংশের প্রথম সারির বাম দিকের (স্পিকারকে মুখ করে) প্রথম আসনে বসেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
এরপর পর্যায়ক্রমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, শিল্পমন্ত্রী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এবং শেষ আসনে বসেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
বিরোধী দলীয় বেঞ্চের (স্পিকারের বাম দিকে) প্রথম আসনে বসছেন বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তার বামে বসছেন সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
এরপর পর্যায়ক্রমে বসেছেন জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) ইবরাহিম, স্বতন্ত্র হুসামউদ্দিন, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শাজাহান খান, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হওয়া ২৯৯টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি। স্বতন্ত্র ৬২টি ও জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন।
স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ আসনে ভোট হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।
নির্বাচনের পর ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেন, সরকার গঠিত হয় পরদিন ১১ জানুয়ারি।