Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ইউএফও তবে কি দৃষ্টিভ্রম

এমন দৃশ্য দেখে এলিয়েন নিয়ে কত যে কল্পগাথা তৈরি হয়েছে।
এমন দৃশ্য দেখে এলিয়েন নিয়ে কত যে কল্পগাথা তৈরি হয়েছে।
[publishpress_authors_box]

শুরুটা হয়েছিল গত শতকের পঞ্চাশের দশকের দিকে, আকাশে রহস্যময় উড়ন্ত বস্তুর আবির্ভাবে ভিন গ্রহের প্রাণী খুঁজতে শুরু করে মানুষ।

১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে প্রায়ই ইউএফও তথা আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টস বা অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু দেখা যেত। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় পৃথিবীর নানা দেশে থেকেও এমন বস্তু দেখার দাবি আসতে থাকে।

বিচিত্র আকারের আকাশযানের মতো দেখতে ইউএফও অত্যন্ত দ্রুত গতিতে উড়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যেত বলে এগুলো হয়ে ওঠে রহস্যের আধার। এনিয়ে হলিউডেও প্রচুর সিনেমা-টিভি সিরিজ হয়েছে। লেখা হয়েছে অনেক গল্প-উপন্যাস। জনমনে তৈরি হয়েছে বিস্তর রহস্য।

অনেকের ধারণা পোক্ত হয়েছিল, এগুলো হয়তো এলিয়েন বা ভিনগ্রহ থেকে আসা মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান প্রাণীদের নভোযান।

তবে সেই রহস্যের অবসান ঘটালো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগনের একটি প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে দেখা যাওয়া ইউএফওগুলো ছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের গোপন গোয়েন্দা বিমান ও বিভিন্ন মহাকাশ প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন।

ওই সময়টায় স্নায়ুযুদ্ধের শুরু; সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক এমন প্রযুক্তির পরীক্ষা চালাত তখন।

শুক্রবার কংগ্রেসে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে পেন্টাগন বলছে, পৃথিবীতে ভিনগ্রহের প্রাণী ও তাদের মহাকাশযান আসার বা দেখা যাওয়ার কোনও প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে নেই। আকাশে দেখা যাওয়া ইউএফওগুলো পৃথিবীর সাধারণ বস্তুই ছিল।

পেন্টাগনের অল-ডোমেন অ্যানোমালি রেজোলিউশন অফিস (এএআরও) এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

অবশ্য পেন্টাগন বলছে, তাদের এই গবেষণা প্রতিবেদন ভিনগ্রহী প্রাণী সম্পর্কে জনমনে যে বিশ্বাস আছে, তা নাকচ করছে না।

মহাফেজখানায় থাকা সব নথিপত্র ও গোপন ফাইলসহ ১৯৪৫ সাল থেকে ইউএফও সম্পর্কিত সমস্ত সরকারি তদন্ত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এএআরও ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইউএফও নিয়ে বিপুল সংখ্যক টেলিভিশন প্রোগ্রাম, বই, চলচ্চিত্র এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক মিডিয়া কনটেন্ট এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা বেশি উস্কে দিয়েছে এবং জনগণের মধ্যে ভিনগ্রহী প্রাণী সম্পর্কিত বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছে।”

১৯৬০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার আমেস গবেষণা কেন্দ্রে ভিজেড-৯এভি অ্যাভ্রোকার ফাইটার-বোম্বারের পরীক্ষা চলছে।

প্রতিবেদনটি ইউএফও নিয়ে রহস্য সমাধানের জন্য মার্কিন সরকারের একটি বড় গণ প্রচেষ্টার অংশ। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নাসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা এবং কংগ্রেসে শুনানিও হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণভাবে গণমানুষের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার হয়ত ভিনগ্রহের প্রাণী এবং তাদের মহাকাশযান পেয়েছে এবং গোপনে সেসব নিয়ে গবেষণা করছে। কিন্তু এই ধারণা সত্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন পর্যন্ত কোনও ভিনগ্রহের প্রাণী ও তাদের মহাকাশযান পায়নি।

মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার সাংবাদিকদের বলেন, “সব স্তরের সমস্ত অনুসন্ধানমূলক প্রচেষ্টা থেকেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে যে, বেশিরভাগ ইউএফও ছিল সাধারণ কোনও বস্তু ও ঘটনা এবং মানুষের চোখের দেখার ভুল।”

২০২১ সালে গ্যালাপের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ভিনগ্রহের মহাকাশযান পৃথিবীতে এসেছে। অথচ দুই বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৩৩ শতাংশ। দিন দিন এই সংখ্যা আরও বাড়ছে।

গবেষকরা ভিনগ্রহের মহাকাশযান সম্পর্কিত গুজবগুলোরও রহস্যভেদ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইউএফও সম্পর্কে ১৯৬১ সালে ফাঁস হওয়া কথিত নথিটি আসল ছিল না। এছাড়া ইউএফও নিয়ে তদন্তকারী সংস্থার সংগৃহীত কথিত ভিনগ্রহের মহাকাশযানের নমুনা অন্য কোনও জাগতিক উপাদান দিয়ে নয় বরং পৃথিবীতে প্রাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও বিসমাথ দিয়ে তৈরি ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে দেখা যাওয়া কথিত ইউএফওগুলো ছিলো মূলত নতুন নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন। এসবের মধ্যে অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বেলুন ও গোয়েন্দা বিমানও ছিল।

১৯৪৭ সালে নিউ মেক্সিকোর রোজওয়েলের কাছে এমনই একটি বেলুন ও ইউ-২ নামের গোয়েন্দা বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল। যেগুলোকে সাধারণ মানুষ ইউএফও তথা ভিনগ্রহী প্রাণীদের মহাকাশযান ভেবেছিল। সরকারও সেসময় মানুষের মনের এই ভুল ধারণা দূর করতে এগিয়ে আসেনি। ফলে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগন।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়, সেই সময়ে দেখা যাওয়া কথিত ইউএফওগুলোর বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন।

এছাড়া গোলাকার উড়োজাহাজ তৈরির বেশ কয়েকটি গোপন গবেষণা প্রকল্পও ছিল। যেমন, কানাডিয়ান ভিজেড-৯এভি অ্যাভ্রোকার ফাইটার-বোম্বার। এই যুদ্ধবিমানটি উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য নকশা করা হয়েছিল। এটি অনেকটা কাল্পনিক মহাকাশযানের মতোই দেখতে।

ইউএফও নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনেকগুলো গবেষণা কার্যক্রম চালায়, তবে সেগুলোর বড় অংশ গোপন রাখা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের কালে দ্রুত প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটলেও বর্তমানেই মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বেশি রহস্য বিরাজমান।

২০২৩ সালে ডেভিড গ্রুশ নামের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাও যুক্তরাষ্ট্রর একটি সংসদীয় কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেন যে, তার বিশ্বাস সরকারের কাছে ভিনগ্রহী প্রাণীর দেহ ও মহাকাশযান রয়েছে। গ্রুশ বলেন, বিভিন্ন নথি, রেকর্ডিং ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে তার এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

গবেষকরা এর জন্য সরকারের প্রতি আস্থার অভাব এবং অনলাইনে এলিয়েন-সম্পর্কিত জনপ্রিয় কন্টেন্টগুলোর সহজলভ্যতাকে দায়ী করেছেন।

এএআরওর প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ১০০টির মতো ইউএফও দেখার দাবি উঠছে। ভিনগ্রহের প্রাণী নিয়ে সরকারের গোপন গবেষণার গুজবও অব্যাহত রয়েছে।

তবে এএআরও জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ইউএফও দর্শনের ঘটনা ও গুজবগুলোর রহস্যভেদ করার জন্যও সামনের দিনে আরও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত