Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪

অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে থাকা কি লেবারদের জয়ের বার্তা দিচ্ছে

যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার (বামে) এবং প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক (ডানে)।
যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার (বামে) এবং প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক (ডানে)।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে এবারের ভোট পালাবদলের ইঙ্গিতই দিচ্ছে; অর্থাৎ ১৪ বছর পর আবার ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে লেবার পার্টি। তার আগে ভোটের ব্যয় মেটাতে তহবিল সংগ্রহেও দলটিকে প্রতিদ্বন্দ্বী টোরিদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

বর্তমান রক্ষণশীল সরকারের প্রকৃত মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় ৬ মাস আগেই আগামী ৪ জুলাই নতুন সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে যুক্তরাজ্যে।

আগামী ৪ জুলাই দেশটিতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রক্ষণশীল দলের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সময় থেকে জনমত জরিপে এগিয়ে লেবার পার্টি।

এদিকে গত ৩০ মে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরদিন থেকেই দলগুলো নির্বাচনী প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ শুরু করে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, বিরোধী লেবার পার্টি দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্ষমতাসীনদের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি অনুদান সংগ্রহ করেছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৬-১২ জুনের মধ্যে প্রায় ৪৪ লাখ পাউন্ড সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে রক্ষণশীল দল পেয়েছে মাত্র ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ পাউন্ড।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবার পার্টির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি হওয়ায় যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরাও দলটির দিকে ঝুঁকছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পার্টির জন্য আর্থিক সহায়তা কমে গেছে।

প্রথম দুই সপ্তাহে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র প্রায় ৯ লাখ পাউন্ড সংগ্রহ করতে পেরেছে। অথচ ২০১৯ সালে বরিস জনসনের অধীনে প্রথম দুই সপ্তাহে দলটি প্রায় ৯০ লাখ পাউন্ড পেয়েছিল।

লেবার পার্টি এবার প্রথম দুই সপ্তাহে ৫৩ লাখ পাউন্ড সংগ্রহ করেছে। তার মধ্যে সুপারমার্কেট জায়ান্ট ডেভিড সেন্সবারি একাই দিয়েছে ২৫ লাখ পাউন্ড।

এবছরের এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত গত এক বছরে কনজারভেটিভদের তহবিলে জমা হয়েছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড। আর লেবার পার্টি পেয়েছিল ২ কোটি ৪৬ লাখ পাউন্ড।

আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ায় দাতারা কনজারভেটিভ পার্টির ওপর আস্থা হারিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

দলটি জুনের প্রথম সপ্তাহে ১০টি অনুদান পেয়েছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ছিল ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যের। কিন্তু সেটাও এসেছে কনজারভেটিভ পার্টির জমির চৌধুরীর মালিকানাধীন বেস্টওয়ে থেকে।

ক্ষমতাসীনরা এমনকি নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টির চেয়েও পিছিয়ে আছে। ফারাজ চলতি মাসের শুরুতে ক্ল্যাকটন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে তার দলের তহবিলে ৭ লাখ ৪২ হাজার পাউন্ড জমা পড়েছে।

তবে এর মধ্যে ৫ লাখ পাউন্ডই দিয়েছে ব্রিটেন মিনস বিজনেস, যার মালিক দলটির সাবেক নেতা রিচার্ড টাইস। তিনি বোস্টন ও স্কেগনেস থেকে নির্বাচনে দাঁড়াবেন। সাবেক টিভি তারকা এবং গায়ক হলি ভ্যালান্স দিয়েছেন ৫০ হাজার ডলার। প্রপার্টি ডেভেলপার নিক ক্যান্ডিকে বিয়ে করা এই টিভি তারকা আগে একজন কনজারভেটিভ সমর্থক ছিলেন।

এমনকি লিবারেল ডেমোক্রেটরাও ৬-১২ জুনের সপ্তাহে ক্ষমতাসীনদের চেয়ে বেশি অর্থ (৩ লাখ ৩৫ হাজার পাউন্ড) সংগ্রহ করেছে। দুই সপ্তাহে তাদের তহবিলে মোট ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ পাউন্ড জমা পড়েছে।

দ্বিতীয় সপ্তাহে লেবার পার্টির মোট ৪৪ লাখ পাউন্ডের মধ্যে ২৫ লাখ এসেছে সাবেক সুপারমার্কেট বস লর্ড ডেভিড সেন্সবারির কাছ থেকে। এর আগে তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটদেরও অর্থ দিতেন। কিন্তু গত বছর থেকে শুধু লেবার পার্টিকেই দিচ্ছেন।

এছাড়া লেবার পার্টি বেলরনের সাবেক সিইও গ্যারি লুবনারের কাছ থেকে ৯ লাখ পাউন্ড আর হেজ ফান্ড বস মার্টিন টেলরের কাছ থেকে ৭ লাখ পাউন্ড পেয়েছে।

মধ্য বাম দল লেবার পার্টির এবারের তহবিল সংগ্রহ থেকে দেখা যাচ্ছে, দলটি অনুদানের জন্য আরও ধনী ব্যক্তি এবং কোম্পানিগুলোর প্রতি ঝুঁকেছে।

এবারের নির্বাচনে দলগুলোর জন্য নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা ১ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড তথা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। গত বছর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার নির্বাচনী ব্যয় বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নেয়।

যুক্তরাজ্যের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে। কিন্তু তার পাঁচ মাস আগেই নির্বাচনের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

সুনাকের এই ঘোষণায় দেশটিতে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কারণ সময় মতো নির্বাচন করলে ঋষি সুনাক অন্তত মোট দুই বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতেন এবং অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর বাড়তি সুযোগও পেতেন।

ফলে প্রশ্ন উঠে, কেন সেই সুযোগ না নিয়ে সময়ের আগেই নির্বাচনের ঘোষণা দেন ঋষি সুনাক?

এছাড়া তিনি এমন এক সময়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন যখন জনমত জরিপেও বিরোধী দল লেবার পার্টি এগিয়ে রয়েছে। গত ২ মে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনেও ভরাডুবি হয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর লেবার পার্টিও সরকারের প্রতি আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

সব পূর্বাভাসেই দেখা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা লেবার পার্টিই যুক্তরাজ্যে নতুন সরকার গঠন করবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রচণ্ড চাপের মধ্যে নির্বাচনে নেমেছেন।

কেন ঋষি সুনাক ভোট এগিয়ে দিলেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বছরের প্রথম মাসগুলোতে সুনাক একের পর এক খারাপ খবর পেয়েছেন। তাই তিনি পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে দেন।

সুনাক মনে করছেন যে তিনি সম্প্রতি যেসব ইতিবাচক নীতি ঘোষণা করেছেন, সেগুলোর কারণে এখন তার দলের প্রতি ভোটারদের সহানুভূতি কাজ করতে পারে। সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সেই সহানুভূতি নাও থাকতে পারে।

সুনাক হয়তো হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপই হবে। তার দল এখন জরিপে লেবার পার্টি থেকে ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে এবং যদি তিনি শরৎকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, তাহলে আরও ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়তে পারেন।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে কোনও প্রধানমন্ত্রীই নিজ দলের এতটা খারাপ অবস্থায় আগাম নির্বাচনের ডাক দেননি। কিন্তু জরিপে সামনের দিনে দলের অবস্থা ভালো হওয়ার কোনও লক্ষণও নেই। সুনাকের ব্যক্তিগত রেটিংগুলোও সর্বনিম্নে রয়েছে এবং তা আরও কমছে। নিজ দলের ভেতরেই আস্থা হারিয়েছেন সুনাক। দলের অনেকেই মনে করছেন সুনাক আরও কয়েক মাস ক্ষমতায় থাকলে দলের আরও বেশি ভরাডুবি হবে।

কিন্তু এখন তহবিল সংগ্রহে ব্যর্থতা থেকেও কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আরও কমেছে বলেই মনে হচ্ছে।

প্রায় পাঁচ বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের সমর্থনে দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে ২০২২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুনাক।

তার আগে বরিস জনসন পদত্যাগ করার পর প্রথমে নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। কিন্তু তাকে হারিয়ে তখন প্রধানমন্ত্রী হওয়া লিজ ট্রাসও মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় টিকেছিলেন।

মিথ্যা বলার কেলেঙ্কারিতে পড়ে বরিস জনসন ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন। বরিস জনসনের সময় কোভিড-১৯ মহামারি এবং অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা সংকটে পড়ে যুক্তরাজ্য। সেই সংকট থেকে যুক্তরাজ্যকে আর বের করে আনতে পারেনি কনজারভেটিভ পার্টি।

এমন পরিস্থিতিতে লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশিরভাগ ব্রিটিশ নাগরিকের মন জয় করে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি, দ্যা গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত