কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন এক ব্যক্তি। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহের দল আরসার নেতা বলে র্যাব জানিয়েছে।
মো. জাকারিয়া নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার সকালে ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব-১৫।
তার কাছ থেকে ৫ রাউন্ড গুলিসহ যে জি থ্রি রাইফেলটি পাওয়া গেছে, তা মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ব্যবহার করে বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দমন পীড়নের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় নিয়ে আছে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান। তাদের অধিকাংশই থাকছে সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে।
এদিকে মিয়ানমারে এখন বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর তীব্র সংঘাত চলছে। রাখাইনের বিভিন্ন এলাকার দখল বিদ্রোহীরা নিয়ে নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে, টেকনাফে নাফ নদীতে ছুটে আসা গুলিতেও সংঘাতের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। তারমধ্যেই রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) নেতা বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর এল।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, উখিয়ার বালুখালীর ১০ নম্বর ক্যাম্পে আরসার কতিপয় সদস্য মিয়ানমার থেকে অস্ত্র এনেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার ভোরে সেখানে অভিযান চালিয়ে জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকারিয়া স্বীকার করেছে, সে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করত। মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্র পালংখালী ইউনিয়নের ঘাটি বিলে লুকিয়ে রেখেছে। ওই স্থানে অভিযান চালিয়ে পাশের দেশের (মিয়ানমার) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ১টি জি থ্রি রাইফেল ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।”
গ্রেপ্তার জাকারিয়া বালুখালীর ১০ নম্বর ক্যাম্পের মৃত আলী জোহরের ছেলে। তিনি ২০১৭ সালে সপরিবারে বাংলাদেশে আসার পর ওই ক্যাম্পেই থাকতেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ বলেন, “মিয়ানমারে আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল জাকারিয়ার। প্রথম দিকে সে আরসার নেট দল (সংবাদদাতা) এবং পরবর্তীকালে গান গ্রুপের সক্রিয় হয়। ২০২৩ সালের শেষের দিকে সে ১০ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক-এফ/১৭ এর ব্লক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়।
“সে আরসার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্য পরিচালনা করত।”
২০২২ সালে অভিযানের মুখে জাকারিয়া মিয়ানমারে পালিয়েছিলেন বলে জানায় র্যাব। পরে আবার ফিরে আসেন।
জাকারিয়ার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি দুইবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন বলে র্যাব জানায়। এবার তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দিয়ে তাকে উখিয়া থানার সোপর্দ করেছে র্যাব।
সৈকতে অজ্ঞাত লাশ
টেকনাফ উপজেলার নোয়াখালিয়া পাড়া সংলগ্ন সৈকতে ভেসে এসেছে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ।
শুক্রবার দুপুরে লাশটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
নিহতের নাম ও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তার আনুমানিক বয়স ৪০ বছর।
স্থানীয়দের বরাতে ইলিয়াছ বলেন, দুপুরে জোয়ারের সময় সৈকতে লাশটি ভেসে আসে। তখন পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও টেকনাফ সৈকত ও নাফ নদীর জালিয়াপাড়া পয়েন্টে অজ্ঞাত পরিচয়ের দুটি লাশ ভেসে এসেছিল। ওই লাশগুলোর শরীর ও চেহারার অবয়ব দেখে মিয়ানমারের নাগরিক বলে ধারণা করা হয়।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।