রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেনে সমরাস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, যা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীই উদঘাটন করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসিসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
সিকিউরিটি সার্ভিস অব ইউক্রেন (এসবিইউ) জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনার সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লভিভ আর্সেনালের ঊর্ধ্বতন পাঁচ কর্মকর্তা ওই দুর্নীতি করে।
এসবিইউ আরও জানায়, গত বছরের আগস্ট মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ১ লাখ মর্টার শেল কিনতে একটি চুক্তি করে, যার অর্থ আগেই পরিশোধ করা হয়। সেই অর্থের কিছু অংশ বিদেশে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু কোনও মর্টারই সরবরাহ করা হয়নি।
ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার চেষ্টায় দুর্নীতি একটি বড় বাধা।
তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভকে গত সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছিল। যদিও তিনি পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে কিয়েভের আলোচনায় প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
এসবিইউ জানিয়েছে, তাদের তদন্তে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং অস্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লভিভ আর্সেনালের ব্যবস্থাপকদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা মর্টার শেল কেনার ক্ষেত্রে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন রিভনিয়া (প্রায় ১২ কোটি ডলার) আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
সংস্থাটির মতে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রধানরা এই তছরুপের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে একজন সম্প্রতি দেশত্যাগের চেষ্টা করতে গিয়ে আটক হয়েছেন। তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল বলেছেন, চুরি করা যে তহবিল জব্দ করা হয়েছে তা প্রতিরক্ষা বাজেটে যুক্ত করা হবে।
অস্ত্র বিক্রেতা কোম্পানি নিয়ে ধোঁয়াশা
ইউক্রেনের লভিভ আর্সেনাল কোম্পাানিটির প্রতিষ্ঠা হয় ২০১৬ সালে। শুরুতে এটি আসবাবপত্র, নির্মাণ কাজের উপকরণ এবং কৃষিপণ্যের ব্যবসা করতো। কিন্তু ২০২২ সালে কোম্পানিটি প্রায় হঠাৎ করেই সামরিক খাতের বাণিজ্যে চলে যায়।
শুরুতেই কোম্পানিটি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অস্ত্র সরবরাহের চুক্তি করে। যতদূর জানা যায়, তখন পর্যন্ত কোম্পানিটির অস্ত্র উৎপাদনের নিজস্ব কোনও কারখানা ছিল না। সেক্ষেত্রে কোম্পানিটি তৃতীয় কোন পক্ষ থেকে অস্ত্র কিনে তা ফের ইউক্রেনের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল, তা পরিস্কার নয়।
লভিভ কোম্পানি নিয়ে আরও একটি ধোঁয়াশার জায়গা এর মালিকানার বিষয়টি। এই প্রতিবেদন লেখার সময় কোম্পানিটির ওয়েবসাইট খুঁজলে জানা যায়, সেটি গত কয়েকদিন ধরে আর অনলাইনে নেই।
ইউক্রেনের স্থানীয় মিডিয়া ও ব্যবসা নথিকরণ প্রতিষ্ঠান ওপেনডাটাবট ও ইউকন্ট্রোল জানায়, কোম্পানির মালিকের নাম ইউরি ইভানোভিচ বেতনিয়েভ। অনলাইনে তার নামে কোথাও কোনও তথ্য মেলেনি। তবে দেশটির মিডিয়া বলছে, ২০২২ সালের শেষের দিকে লভিভ আর্সেনালের দায়িত্ব থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। এখন কোম্পানিটির মালিক বা পরিচালনা পর্ষদ সম্পর্কে কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি।