বিরোধী দলে থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে এই যুদ্ধ কখনোই বাধত না।
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনেই থামিয়ে দিতে পারেন- এমন কথাও গত জুলাইয়ে নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেন ট্রাম্প।
রিপাবলিকান পার্টি এখন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবারের নির্বাচনে দলটি ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে। ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ২৯৪টিই তাদের ঝুলিতে। এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তিনটি অঙ্গরাজ্যে ফল ঘোষণা এখনও বাকি।
ইলেকটোরাল কলেজের ম্যাজিক ফিগার ২৭০ পার করার পাশাপাশি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে চলে যাচ্ছে। ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ২২৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে এরই মধ্যে পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন দেখে অনেকের ধারণা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হয়তো আর বেশিদিন স্থায়ী হবে না।
সিএনএনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রোডিউসার জেনিফার হ্যান্সলারের ভাষ্য, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জোর সম্ভাবনা আছে, ইউক্রেনকে নৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়া কমিয়ে দেবে তার প্রশাসন। সেক্ষেত্রে মুশকিলে পড়বেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের পর্যাপ্ত সহায়তা ছাড়া তার পক্ষে ক্ষমতাধর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন। ২০২২ সালের শুরু থেকে এ যুদ্ধ তিনি করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভরসায়। ট্রাম্পের পুনরুত্থান তার সেই ভরসার জায়গাকে নড়বড়ে করে দিতে পারে।
এ বছর নির্বাচনী প্রচারণার পুরো সময়জুড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার রানিং মেইট জে ডি ভ্যান্স বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসতে পারে।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প এও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ছাড় দেওয়া চুক্তি করতে ইউক্রেনকে চাপ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
জেনিফার হ্যান্সলার বলেন, ট্রাম্প এমন সময়ে হোয়াইট হাউসে বসতে যাচ্ছেন, যখন পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের বড় অংশই মস্কোর দখলে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পুরো দনবাসই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে চাইছেন।
তাছাড়া ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে জেলেনস্কির বাহিনী যে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, তাও নয়। রাশিয়ার অব্যাহত হামলায় সম্মুখযুদ্ধ থেকে তাদের বারবার পিছু হটতে হচ্ছে।
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান অলেকসান্দার সিরস্কি গত শনিবার টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে জানান, যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি এখনও জটিল। দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে সেনা মোতায়েন আরও বাড়ানো জরুরি।
ইউক্রেনের জন্য পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়, যখন খবর আসে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সীমান্তে সেনা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সম্পর্ক বেশ মজবুত। সেই সুবাদে এ মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার ১০ হাজার সেনা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থান করছে।
অল্প সময়ের মধ্যে রুশ সেনাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনারা অংশ নেবে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
আড়াই বছরের বেশি সময় আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্রসহ অন্যান্য সহায়তা কিয়েভকে দেয়।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বসার আগে যতটা সম্ভব সহায়তা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে বাইডেন প্রশাসনের।
অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিউ ইয়র্কে গেলে ট্রাম্প তাকে বলেন, “আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। আপনি জানেন, পুতিনের সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক আছে।
“আমি মনে করি, আমার দল নির্বাচিত হলে রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। মস্কো-কিয়েভ দুজনের জন্য ভালো হয়, এমন কিছু করা হবে বলে আশা রাখি।”
তবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমবে না বলেই আশাবাদী জেলেনস্কি।
গত অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “ট্রাম্প অনেক কথা বলেন, তবে আমি তাকে বলতে শুনিনি যে তিনি ইউক্রেনের জন্য সহায়তা কমিয়ে দেবেন।”
এমন পরিস্থিতিতে আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা সমাধানে কোন পথে আগান, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।