Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

যুদ্ধে ইউক্রেনের জয়ের আশা কি আছে

গত সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেনের আভদিভকা শহরটির পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়।
গত সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেনের আভদিভকা শহরটির পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়।
[publishpress_authors_box]

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ গত বছর ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া আভদিভকা পুনর্দখল করেছে, যা গত নয় মাসের মধ্যে যুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও নীরবে নতুন সামরিক বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসনের কৌশলও এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত ইউক্রেনকে রক্ষণাত্মক অবস্থানে রাখা। এরপর দীর্ঘ যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে ধীরে ধীরে পরাজিত করা।

এই কৌশলটি যথেষ্ট সুবুদ্ধিপূর্ণ বলেই মনে হয়। কিন্তু এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব পরিণতি এবং একটি সম্ভাব্য বিপর্যয়কর ত্রুটি রয়েছে, যা এখনও পশ্চিম বা ইউক্রেনের গণবিতর্কগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হচ্ছে না।

অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউক্রেনের রক্ষণাত্মক অবস্থানে থাকার মানে হলো, যদি তা সফলভাবেও করা হয়, বর্তমানে রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলো স্থায়ীভাবে হারানো। রাশিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে যেসব অঞ্চল ধরে রাখতে পারছে, তা তারা কখনোই শুধু আলোচনায় ফিরিয়ে দিতে রাজি হবে না।

তার মানে এই নয় যে ইউক্রেনকেও আনুষ্ঠানিকভাবে ওই অঞ্চলগুলো ছেড়ে দিতে বলা উচিৎ। কারণ কোনও ইউক্রেন সরকারের পক্ষেই তা করা সম্ভব হবে না। তবে ভবিষ্যতে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য বিষয়টি তুলে রাখতে হবে। ক্রিমিয়া ও পূর্ব দনবাস নিয়ে যুদ্ধের শুরুতে জেলেনস্কি যেমনটা প্রস্তাব করেছিলেন।

সাইপ্রাসের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এই ধরনের আলোচনা কয়েক দশক ধরে চলতে পারে, এমনকি কোনও সমাধান বা নতুন করে সংঘাত ছাড়াই। ১৯৭৪ সাল থেকে সাইপ্রাস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গ্রিক রিপাবলিক অব সাইপ্রাস এবং তুর্কি রিপাবলিক অফ নর্দার্ন সাইপ্রাসে বিভক্ত হয়ে আছে।

তবে ইউক্রেন এখনও নিজের সমস্ত মূল ঐতিহাসিক ভূমিসহ ৮২ শতাংশ ভূমির দখল ধরে রেখেছে। এছাড়া নিজের স্বাধীনতা ও একটি পশ্চিমা গণতন্ত্র হিসেবে বিকাশের স্বাধীনতাও বজায় রেখেছে। ইউক্রেনীয়দের আগের প্রজন্মগুলোর কাছে এটি একটি সত্যিকারের বিজয় হিসেবেই বিবেচিত হবে, যদিও তা সম্পূর্ণ বিজয় নয়।

ইউক্রেনের অনেক নাগরিকও শান্তির বিনিময়ে কিছু অঞ্চল হারানোর বিষয়টিকে মেনে নিতে প্রস্তুত আছেন। এই অল্প কিছু অঞ্চলের জন্য তারা রাশিয়ার সঙ্গে আর বছরের পর বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চান না। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনের খুব একটা সহায়ক হতে পারছে না।

তথাপি ইউক্রেনের পূর্ণ বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেও রয়েছেন অনেকে। এরা একটু অতিরিক্ত আশাবাদী এবং জাদুকরী কিছু একটা ঘটার প্রত্যাশাও করেন। এমনই একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বেন হজেস। তার মতে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বোমা হামলার মাধ্যমে রাশিয়াকে ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডসহ এমনকি ক্রিমিয়া দ্বীপ থেকেও হটানো সম্ভব।

ইউক্রেন হয়ত রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় রণতরীর বিরুদ্ধে কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারে তাদের একই সঙ্গে জল ও স্থলে যুদ্ধ করার ব্যাপক সক্ষমতা লাগবে। কিন্তু অত কঠিন অভিযান চালানোর জন্য তাদের যথেষ্ট জাহাজ ও জনবল নেই।

রাশিয়ার অবকাঠামোর উপর হামলা চালানোর যে সামান্য সক্ষমতা রয়েছে ইউক্রেনের, তা রাশিয়ার আকার ও সামর্থ্যের হিসাবে অনেকটা পিন দিয়ে খোঁচানোর মতো হবে।

তার চেয়ে এই বছর রক্ষণাত্মক অবস্থানে থাকাটাই ইউক্রেনের জন্য বেশি বাস্তবসম্মত হবে এবং এই সময়ে রাশিয়াকে দুর্বল করারও চেষ্টা করতে হবে। যাতে নতুন অস্ত্রশস্ত্র পাওয়ার পর ২০২৫ সালে সফলভাবে পাল্টা আক্রমণ চালানো যায়।

কিন্তু ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে খেলাতে চায়, রাশিয়া যদি সেভাবে খেলে, তাহলেই শুধু এটা সম্ভব, নতুবা নয়।

বর্তমানে রাশিয়ার কৌশল ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। তারাই উল্টো ইউক্রেনকে আবদিভকার মতো ছোট অঞ্চলের জন্য দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে আটকে রেখেছে। নিজের গোলবারুদ এবং যুদ্ধাস্ত্রে শ্রেষ্ঠত্বের উপর নির্ভর করে রাশিয়া ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে গেছে। ইউক্রেনের একটি শেলের জবাবে রাশিয়া তিনটি শেল নিক্ষেপ করেছে। আর ইরানের সহায়তায় প্রচুর সংখ্যক ড্রোনও মোতায়েন করতে পেরেছে।

সামরিক ইতিহাস বলে যে, ইউক্রেনকে জিততে হলে জনবলের দিক থেকে প্রতি দুইজন রুশ সেনার বিপরীতে তিনজন করে সেনা নিয়োগ করতে হবে। রাশিয়ার তুলনায় যথেষ্ট বেশি অস্ত্রশস্ত্রও লাগবে।

যুদ্ধের প্রথম বছরে ইউক্রেন এই সুবিধাগুলো উপভোগ করেছিল। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার সরবরাহ কমে যাওয়ায় তারা এখন রাশিয়ার চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে গেছে। ইউক্রেনের এই ঘাটতি মেটানোও খুব কঠিন বলেই মনে হচ্ছে।

বাইডেন প্রশাসনের এই সতর্কতা সম্পূর্ণ সঠিক যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ছাড়া এই বছর ইউক্রেনের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের এই বাস্তবতাও স্বীকার করতে হবে যে, সামিরক সাহায্য অব্যাহত থাকলেও পরের বছর বা তার পরের বছরও ইউক্রেনের পুরোপুরি বিজয়েরও বাস্তবসম্মত কোনও সম্ভাবনা নেই। ইউক্রেন তার সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুললে রাশিয়াও তার প্রতিরক্ষা আরও গভীর করতে পারে।

রাশিয়া শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে পুতিন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার আন্তরিকতা বা অকৃত্রিমতা পরীক্ষা করার জন্য বাইডেন প্রশাসনেরও জোরালো উৎসাহ রয়েছে। একটি সফল শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নিঃসন্দেহে ইউক্রেন ও পশ্চিমকে কিছু বেদনাদায়ক ছাড় দিতে হবে। তবে এমন বেদনা আমলে না নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

কারণ শান্তির জন্য পুতিনকেও কম ছাড় দিতে হবে না। পুরো ইউক্রেনকে একটি করদ রাষ্ট্রে পরিণত করার যে পরিকল্পনা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিল রাশিয়া, পুতিনকেও তা বাদ দিতে হবে। এছাড়া পুতিনকে ইউক্রেনের বর্তমান আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা তথা ইউক্রেনের আর কোনও অঞ্চল নতুন করে দখল না করার প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে।

ইউক্রেনকেও যেসব অঞ্চল হাতছাড়া হয়েছে সেসব ফিরে পাওয়ার আশা বাদ দিতে হবে।

ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দিয়েও লাভ নেই। কারণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাতে ন্যাটো জোটের রাজি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সর্বোপরি, এখন একটি শান্তি চুক্তি যতই বেদনাদায়ক হোক না কেন, যুদ্ধ চলতে থাকলে এবং ইউক্রেন পরাজিত হলে তা আরও অনেক বেশি বেদনাদায়ক হবে।

[টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে]

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত