নিয়োগ নীতিমালা সংশোধনসহ ১১ দফা দাবিতে সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) পূর্বাঞ্চলের সদস্যরা।
রবিবার চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন আরএনবি সদস্যরা। যারা মূলত রেলের পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত।
এর আগে গত মঙ্গলবার একই দাবি আদায়ে একদিন কর্মবিরতি পালন করেছিলেন আনএবি সদস্যরা। তবে রেল কর্মকর্তারা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে কর্মবিরতি তুলে নেন তারা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতির এক পর্যায়ে দেশে বন্ধ হয়ে যায় রেল যোগাযোগ। এরপর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তোড়জোড় শুরু হয় রেল সেবা চালুর।
সেই সময় সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে নিজেদের দাবি তুলে ধরলেন আরএনবি সদস্যরা।
দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন বলেন, “রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ২০১৬ সনের ২ নম্বর আইন অনুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে একটি শৃঙ্খলা বাহিনী হলে অন্যান্য বাহিনীর মতো আমরা সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পাই না। আমরা এখনও সাদা পোশাকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে রেলওয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আগামী সাত দিনের মধ্যে আমাদের ১১ দফা দাবি বাস্তাবায়ন না হলে কর্মস্থলত্যাগসহ কর্ম বিরতি পালন করব।”
আরএনবির অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে-রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন– ২০১৬ অনুযায়ী কর্মচারী না বাহিনী তা সুনিশ্চিত করতে হবে, যদি বাহিনী হয় তাহলে বাহিনীর সকল সুযোগসুবিধা (রেশন, ঝুঁকিভাতা, যাতায়াত ভাতা) নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করে প্রতিবছর নিয়োগ কার্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে এবং তিন বছর পরপর পদোন্নতি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাহিনীর নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সার্কেলের ব্যারাক সংস্কার এবং সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ, প্রত্যেক সদস্যের আট কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হলে তার বিপরীতে ভাতা প্রদান এবং বেতন বৈষম্য দূর করা।
আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক’শ আনসার সদস্য।
সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, দেশে প্রায় ৬০ হাজার সদস্যকে জাতীয়করণের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও সরকারের উচ্চ দপ্তরে তাদের দাবি তোলা হয়নি। একদফা দাবি আদায় না হয়া পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়বেন না।
দেশে এ মুহূর্তে থানাসহ বিভিন্ন স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন আনসার সদস্যরা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও রয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় সকালে চট্টগ্রামে ইউনিফরম পরিহিত কয়েকশ সাধারণ আনসার সদস্য বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
চট্টগ্রামের জামাল খান সড়কের প্রেসক্লাবের সামনে যেখানে তারা বিক্ষোভ করছিলেন সেখান থেকে আনসার-ভিডিপির হেড অফিসের দূরত্ব আধ কিলোমিটার। কিন্তু সাধারণ সদস্যদের বিক্ষোভের বিষয়ে সেই অফিসের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সমাবেশে উপস্থিত আনসার সদস্য মফিজুল ইসলাম বলেন, “আমরা দেশের সেবা করি। দেশের সম্পদ রক্ষার্থে কাজ করছি। কোনো উপায় না দেখেই এখন এক দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। সারাদেশের অঙ্গীভূত সাধারণ আনসাররা রাস্তায় নেমেছে। আমরা আমাদের দাবি আদায় করে ছাড়ব।”
মো. নাছিম মিয়া নামের আরেক সদস্য বলেন, “আনসারের মহাপরিচালক জাতিকে নানান মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। যারা ভিডিপি কিংবা গ্রাম পুলিশ, তারা আনসারের সদস্য নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানটাই ‘আনসার-ভিডিপি’ নামে। সারাদেশে আমাদের অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার রয়েছে ৬০ হাজারের কম। দীর্ঘদিন ধরে আমরা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো সরকারের উচ্চদপ্তরে তোলা হয় নি কখনোই।”
ব্যাটালিয়ন আনসারের চেয়ে তারা বেশি কাজ করেন দাবি করে তৌহিদুল ইসলাম নামে এক সদস্য বলেন, “আমরা প্রশিক্ষিত এবং স্মার্টকার্ডধারী। সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, দপ্তর সশস্ত্র পাহারা দিই। অথচ তিন বছর পর আমরা বেকার হয়ে যাই। কয়েকমাস বেকার থাকার পর আবার অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজে নেওয়া হয়।
“অথচ আমাদের চেয়ে কম কাজ করে ব্যাটালিয়ান আনসাররা। এখন থানায় পুলিশ নেই। আমরা নির্দেশনা মেনে থানা পাহারা দিচ্ছি। সড়কে ট্রাফিকের কাজ করছি। তবু আমাদের দেখার কেউ নেই।”