বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা নিয়ে ‘নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের’ আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি চায় বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘ক্র্যাকডাউনে’র বিশদ বিবরণও অবিলম্বে প্রকাশ হোক।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, সরকারকে সহিংসতায় নিহত, আহত বা আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিবরণ দিতে হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, “আমরা বুঝতে পারি, সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রুপগুলোর সহিংস আক্রমণের শিকার হয়েছে অনেক লোক। তাদের রক্ষা করার জন্য কোনও প্রচেষ্টাও চালানো হয়নি।”
আইন প্রয়োগে সব কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম ও মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ভলকার তুর্ক।
তিনি বলেন, “জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং সংলাপের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমি সরকারকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সব কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ম মেনে পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।
“বিক্ষোভে বল প্রয়োগসহ নিরাপত্তা রক্ষার কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়ম ও মানদণ্ড মেনে চলার আহ্বানও জানাই।”
সাংবাদিকসহ জনগণকে অবাধে যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি খুলে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তুর্ক।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ সময়ের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখার মতো চরম পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার প্রতিও অবহেলা করা হয়।
“এছাড়া মানুষের সংঘবদ্ধতা ও আন্দোলনের স্বাধীনতাসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার এবং বেশ কিছু অর্থনৈতিক অধিকারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
“ইন্টারনেট না থাকায় চলমান পরিস্থিতি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আচরণের ওপরও নজর রাখা কঠিন হয়। এতে তাদের কর্মকাণ্ডের দায়মুক্তি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”
হাইকমিশনার তার অফিসের সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগের একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানান।
আন্দোলন-বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সবার বিরুদ্ধে কোনও প্রতিশোধ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং সভা-সমিতির অধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংস্কারের কথাও বলেন ভলকার তুর্ক।
সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা উসকে দিতে পারে বা ভিন্নমতের বিরুদ্ধে আরও দমন-পীড়নের দিকে পরিচালিত করতে পারে—এমন কোনও বিবৃতি বা কাজ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তুর্ক।
এর আগে বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকও বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান।
বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ডুজারিক বলেন, মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে পারার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর কর্তৃপক্ষের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি অধিকার, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে রয়েছে।
ডুজারিক বলেন, সহিংসতার সব ঘটনা একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতিতে তদন্ত করা উচিৎ। দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় এনে সংলাপের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে, বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ দেখা গেছে। যেখানে তরুণরা বিশ্বের অবস্থা, নিজেদের ভবিষ্যৎ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের সংবেদনশীলতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, বিক্ষোভ যেখানেই হোক না কেন, গ্রেপ্তারের ভয় ছাড়াই, আহত বা আরও খারাপ পরিস্থিতির ভয় ছাড়াই মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অনুমতি দিতে হবে।