Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

জেনোসাইড চালাচ্ছে ইসরায়েল, দাবি জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের

জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। ছবি: লুকাস কোচ। ইপিএ-ইএফই।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। ছবি: লুকাস কোচ। ইপিএ-ইএফই।
[publishpress_authors_box]

গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল জেনোসাইড চালাচ্ছে বলে দাবি উঠেছে একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ইসরায়েল যে গাজায় জেনোসাইড ঘটিয়েছে, তা বিশ্বাস করার ‘যুক্তিসঙ্গত’ ভিত্তি রয়েছে।

একটা জাতি, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী কিংবা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত কার্যক্রমগুলো জেনোসাইড বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ১৯৪৮ সালে গৃহীত জেনোসাইড কনভেশনে।

সেই কনভেনশনে যে পাঁচটি ঘটনা ঘটলে জেনোসাইড বলে মনে করা হয়, গাজায় তার তিনটিই ইসরায়েল ঘটিয়েছে বলে আলবানিজ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন।

ইসরায়েল যে তিনটি ঘটনা ঘটিয়েছে, তা হলো- কোনও জনগোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা, জনগোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও জনগোষ্ঠীর ওপর এমন পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া, যা শারীরিকভাবে তাদের আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারে।

প্রথমটির বিষয়ে আলবানিজ বলেন, ইসরায়েল ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আরও ১২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে, তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে।

নিহতদের ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। বাকি ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। তারা সক্রিয় হামাস যোদ্ধা বলে ইসরায়েলের দাবি। তবে তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়া গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের ফলে প্রতিদিন না খেয়ে মারা যাচ্ছে ১০টি শিশুসহ বহু মানুষ।

দ্বিতীয়টির বিষয়ে আলবানিজ বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৭০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পুরুষ ও কিশোরকে। তাদের উপর নির্যাতন চালানো ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।

তৃতীয় বিষয়ে আলবানিজ বলেন, ইসরায়েল হাসপাতাল ও কৃষি জমিসহ গাজার জীবন-ধারণকারী অবকাঠামোর অধিকাংশ ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

জেনোসাইডকে বৈধতা দিতেও সক্রিয়

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ আলবানিজ বলেন, গাজায় নিজেদের যুদ্ধাপরাধ ঢাকা দিতে আইনি আবরণ হিসেবে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিভিন্ন ধারণা ব্যবহার করছে ইসরায়েল। যেমন, মানব ঢাল, যুদ্ধের সমপার্শ্বিক ক্ষতি এবং নিরাপদ অঞ্চল ইত্যাদি ধারণার অপব্যবহার করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েল গাজার সমস্ত জনসংখ্যাকে হামাসের মানব ঢাল হিসেবে চিত্রায়িত করেছে। ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা ক্রমাগতভাবে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের হামাসের কর্মী, ‘সহযোগী’ বা মানব ঢাল হিসেবে আখ্যায়িত করে, যাদের মধ্যে হামাস সদস্যরা লুকিয়ে রয়েছে।

আলবানিজ লিখেছেন, “ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে আইনিভাবে সুরক্ষা প্রাপ্য একটি সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এবং এর জীবন-ধারণকারী অবকাঠামোকে ‘সন্ত্রাসী’ বা ‘সন্ত্রাসী-সমর্থক’ হিসেবে চিত্রায়িত করেছে। এভাবে সবকিছু এবং প্রত্যেককে হয় হামলার লক্ষ্যবস্তু বা যুদ্ধের সমপার্শ্বিক ক্ষতিতে রূপান্তরিত করেছে, ফলে তারা তাদের কাছে হত্যাযোগ্য বা ধ্বংসযোগ্য।

“গাজার কোনও ফিলিস্তিনি আক্ষরিক অর্থেই নিরাপদ নয়। এটি ধ্বংসাত্মক ও ইচ্ছাকৃত প্রভাব ফেলেছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনির জীবন কেড়ে নিচ্ছে, গাজার জীবন কাঠামো ধ্বংস করছে এবং এর সমগ্র জনগোষ্ঠীর অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।”

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত