‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। এর অংশ হিসেবে রবিবার সপ্তম দিনের মতো কর্মবিরতির পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলবে।
তিনি বলেন, “আমরা আন্দোলনে সাড়া পাচ্ছি। মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরাও আজকে এখানে এসেছেন। শিগগিরই তারাও ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করবেন।”
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন শুরুর পর বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাদের বৈঠকে বসার কথা ছিল। তবে ওবায়দুল কাদেরের ব্যস্ততার কারণে বৃহস্পতিবার সেই বৈঠক হয়নি।
এরপর আলোচনার জন্য সরকারের কাছ থেকে নতুন করে আর ডাক পাননি জানিয়ে ড. নিজামুল হক বলেন, “বৃহস্পতিবার ব্যস্ততার কারণে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সভাটি হয়নি। আশা করি সভাটি দ্রুত হবে।”
সরকারের একটি অংশ ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে এই শিক্ষকনেতা বলেন, “সরকারের ভেতরে একটি অংশ ষড়যন্ত্র করছে। ২০১৫ সালেও এরাই জটিলতা করেছিল। এবারও করছে। এজন্য আমরা আলাদা পে-স্কেল চেয়েছি। যেন কেউ শিক্ষকদের নিয়ে আর ষড়যন্ত্র না করতে পারে।”
সরকার কেন শিক্ষকদের সঙ্গে বসছে না– এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সরকার কেন বসছে না তা তো আমি জানি না। এটা সরকারই ভালো বলতে পারবে।”
তবে সরকার তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক এই কর্মবিরতি চলতে থাকবে বলেও জানান এই শিক্ষকনেতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পেনশন নতুন ‘প্রত্যয়’ স্কিমে নেওয়ার বিরোধিতা করে গত সোমবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এতদিন সরকারি কর্মচারীদের মতোই পেনশন সুবিধা পেতেন। তবে সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশনও সেই ব্যবস্থায় নিয়েছে। সেজন্য নতুন একটি স্কিম করা হয়েছে, যার নাম প্রত্যয়।
স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের চলতি জুলাই থেকে এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা শুরু থেকে প্রত্যয় স্কিমে তাদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে আসছিলেন। সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিলে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তারা। তাতে সাড়া না পেয়ে ১ জুলাই এই স্কিম কার্যকর হওয়ার পর তারা ধর্মঘট শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি, ‘প্রত্যয়’ স্কিমে তাদের পেনশন সুবিধা আগের চেয়ে কমে যাবে।
তাদের আশ্বস্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি তিনটি– ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে চালু করা হয় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। শুরুতে ‘প্রবাস’, ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ স্কিম নিয়ে এ ব্যবস্থা চালু হলেও সাত মাস পর যুক্ত হয় ‘প্রত্যয়’।