বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে রবিবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
এর আগে ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতায় ১৩ দিন ধরে কর্মবিরতিসহ আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি আকতারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর নিজামুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্লামেন্টে ভাষণে সবার জন্য পেনশন স্কিমের যে ডেটটা বলেছেন, শিক্ষকদের ব্যাপারে যে তথ্যটা গেছে এটা মিসটেক। এটাই সত্যি, সবাইকে পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার তারিখ হচ্ছে ২০২৫ সালের ১ জুলাই। এটা তাদেরকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি।”
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে চালু করা হয় সর্বজনীন পেনশন। তখন এতে চারটি স্কিম রাখা হয়। প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা স্কিম ঘোষণার সাত মাস পর যুক্ত করা হয় নতুন স্কিম ‘প্রত্যয়’।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তখন জানায়, দেশের চারশর বেশি স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ফলে এ সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরের পর মাসিক ভাতা পাবেন।
কিন্তু এই ঘোষণা আসার সঙ্গেসঙ্গেই এর বিরোধিতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিলে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। তাতে সাড়া না পেয়ে গত ১ জুলাই ‘প্রত্যয়’ স্কিম কার্যকর হওয়ার পর তারা ধর্মঘট শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি, ‘প্রত্যয়’ স্কিমে তাদের পেনশন সুবিধা আগের চেয়ে কমে যাবে।
শিক্ষকদের দাবির প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আশা প্রকাশ করেন, আলাপ-আলোচনার মধ্যে অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি বলেন, “সুপার গ্রেড ও স্বতন্ত্র উচ্চগত স্কেল প্রদানের বিষয়টি আলোচনা হবে। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের মর্যাদা, আর্থিক সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি আলোচনা করে তারা লিখিত যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে, প্রধানমন্ত্রী কাছে আমরা উত্থাপন করব।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমরা আলাপ-আলোচনা করে নেব। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আশা করি, সব সমস্যার অচিরেই সমাধান হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষক নেতারা সাংগঠনিকভাবে তাদের ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।”
সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গেও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্য সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “কোটা নিয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।”
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, “একটা কুচক্রী মহল কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। গেল কয়েকটি বছরে কোটা না থাকায় নারীদের অংশগ্রহণ হতাশাজনক। পিছিয়ে পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও।”
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য বাংলাদেশে কোটায় নিয়োগ সবচেয়ে কম জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের ৬০ শতাংশ, পাকিস্তানের ৯২.৫ শতাংশ, নেপালে ৪৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৫০ শতাংশ চাকরিতে ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ৬০ শতাংশ কোটা চালু রয়েছে।
এদিকে, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা বৈঠক করলেও এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, “শিক্ষক ফেডারেশনের সভা চলছে। আমি সভাতেই আছি। আজকে সারাদিনই হয়তো আমাদের সভা চলবে। সবার সাথে কথা বলে আমরা আমাদের অবস্থান জানাব।”
বৈঠকে সরকারের অবস্থান ইতিবাচক ছিল কিনা জানতে চাইলে এই শিক্ষকনেতা বলেন, “আমরা আমাদের কথা বলেছি খোলা মনে। সরকারও কিছু কথা বলেছে আমাদের। সেসব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই আমরা সভা করছি।”