পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করেন অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটির সম্মুখীন তা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা– একথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা ভালোর দিকে গেছে এবং এখন দেশকে নিশ্চিত করতে হবে যে উৎসবের আমেজ যাতে কুৎসিত রূপ নেয় না।
মানুষকে উৎসবের পর বাড়ি ফিরে যেতে হবে এবং সকাল থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে সোমবার বিদেশ চলে যাওয়ার পর সরকারশূন্য অবস্থায় অরাজকতা চলছে বাংলাদেশে।
সেদিন উল্লসিত জনতা গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবনেও অবাধে ঢুকে পড়ে তছনছ করে। পাশাপাশি দেশের অনেক স্থানে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও দলটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ভবনের পাশাপাশি পুলিশের থানাগুলোতেও আগুন দেওয়া হয়।
গত এক মাসে সরকারের দমন অভিযানে ৫ শতাধিক মানুষ নিহতের জন্য পুলিশ ছিল ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তু। সেই কারণে পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। সড়কে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও অনুপস্থিত।
এমন পরিস্থিতিতে কারফিউ তুলে নিয়ে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হয় মঙ্গলবার। এতে অফিস বা স্কুলগামী যাত্রীদের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে ঢাকার বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
আন্দোলনকারীদের কে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিণতি কী হতে পারে– এমন প্রশ্নের জবাবে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেন, “এটি খুব সুখকর কোনও পরিস্থিতি হবে না।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করলে এর প্রভাব পুরো বাংলাদেশে, মিয়ানমার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সেভেন সিস্টার্স– সর্বত্র বিস্তৃতি লাভ করবে।”
ড. ইউনূসের মতে, “আমাদের চারপাশে এবং মিয়ানমারে এটি একটি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো হবে… এবং এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ এখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আছে।”
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এখানে ১৭ কোটি মানুষ আছে, যাদের বেশিরভাগই তরুণ যারা কখনও ভোট দেয়নি।
“আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে তারা খুশি থাকে এবং আইন মেনে চলে এবং তারা যাতে বুঝতে পারে দেশে গণতন্ত্র রয়েছে… এই তরুণরা তাদের জীবনে কখনও ভোট দেয়নি। তারা কখনোই ভোটকেন্দ্রে যায়নি, কারণ সেই ধরনের নির্বাচন কখনও হয়নি… শুরুতে এই তরুণদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে।”