স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৫৩ উপজেলার তফসিল নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ঢাকার নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এই বৈঠক হবে। এদিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিজ দপ্তরে বুধবার এসব তথ্য জানান।
বৃহস্পতিবার কমিশনের বৈঠক আছে জানিয়ে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে হবে, সে সিদ্ধান্ত আগেই জানানো হয়েছে। আশা করি, আগামীকাল প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা করতে পারব।”
দেশের ছয়টি নির্বাচনী অঞ্চলের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন কবে কোন ধাপে হবে, তা আগেই জানিয়েছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
চার ধাপের এ ভোট ৪ মে থেকে শুরু করে ২৫ মে শেষ করতে চায় কমিশন। প্রথম ধাপের ভোট ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপের ভোট ১১ মে, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট যথাক্রমে ১৮ ও ২৫ মে হবে।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালায় কিছু পরিবর্তন এনে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের (মতামত) জন্য পাঠিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে। পরিবর্তিত বিধিমালা বিজি প্রেস থেকে প্রিন্ট হয়ে গেজেট হয়ে গেছে।”
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ এবার ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনসূচক সইসহ তালিকা জমা দেওয়ার বিধানও বাদ দেওয়া হয়েছে।
এসবসহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিমালায় আরও কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে এসব সংশোধনী প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে ইসি। মঙ্গলবার এটি প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি এসব সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি।
নির্বাচন কমিশনের সব প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব বলেন, “মোটাদাগে যা চেয়েছি, তাই রয়েছে। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিষয়টা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এসব কারণে উপজেলায় প্রার্থীদের ভোট করতে এবার সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হয় ১ শতাংশ সমর্থন স্বাক্ষরের জন্য। ২৫০ জনের স্বাক্ষর নেওয়া কঠিন কাজ ছিল। কে কাকে ভোট দিবে, তা প্রকাশ করতে চায় না। ভোটাররা স্বাক্ষর দিয়ে চায় না বলে অনেকে জাল স্বাক্ষর নেয়। বিষয়টি চিন্তা করে কমিশন মনে করেছে, এটা খুব কঠিন। তাই এক্ষেত্রে সহজ হবে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করতে।”
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও)-এ কোনও পরিবর্তন করা হবে কি না জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “আরপিও তো আইন। আইন সংশোধন করতে একটু সময় লাগে। এটা তো আইন, বিধি না। এটা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”
প্রেসে পোস্টার সাদাকালো ছাপাতে গিয়ে অনেকের সমস্যা হয় বলে প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সাদাকালো পোস্টার ছাপানো ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে রঙিন পোস্টারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে সংশোধিত বিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের জামানত রক্ষায় প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে। এতদিন তা ছিল এক অষ্টমাংশ। এছাড়া এবার থেকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে অনলাইনে।
প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। তারা সাদাকালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ও ব্যানার করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোটের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে ইসির ক্ষমতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালায় স্পষ্ট করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা এবার স্থানীয় সরকারের কোনও নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না।
অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।