দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন নব্বইয়ের ছাত্রনেতা শফি আহমেদ। কিন্তু মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় তার আর ভোট করা হয়নি।
সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্বাচনী আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থন সম্বলিত স্বাক্ষরসহ তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়।
নেত্রকোণায় শফি আহমেদের আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ জন। ফলে তাকে আড়াই হাজার ভোটারের সই জমা দিতে হয়েছিল। কিন্তু তাতে গরমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
একই কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। তবে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফেরত পেয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামতে পেরেছিলেন তিনি।
শফি আহমেদ কিংবা মাহির মতো অনেকেই সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গিয়ে ভোটারের স্বাক্ষর নিয়ে জটিলতায় পড়েছিলেন।
তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান, তাদের জটিলতা কমই হবে। কেননা এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আড়াইশ ভোটারের স্বাক্ষর হলেই চলে।
ফলে শফি আহমেদের যেখানে আড়াই হাজারের বেশি ভোটারের সই মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হয়েছিল, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে লাগছে তার ১০ ভাগের এক ভাগ।
সংসদ নির্বাচনের পর মাস না গড়াতেই উপজেলা নির্বাচন আয়োজনে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। ৪৮৫ উপজেলায় কয়েক ধাপে ভোট হবে। তবে এপ্রিলের মধ্যে তা শুরুর পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও এবার বড় দুটি দল যে পথে এগোচ্ছে, তাতে এবার স্বতন্ত্ররাই হবেন মূল প্রার্থী।
বিএনপিবিহীন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থী মনোননন দিলেও দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল। তাতে ভোট জমলেও সংঘাত ও কোন্দল দেখা দেওয়ায় উপজেলায় দলীয় প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফলে উপজেলা ভোটে নৌকা কেউ পাচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগের কাউকে স্বতন্ত্র প্রার্থীই হতে হবে। ফলে এবার কয়েক হাজার নয়, আড়াইশ ভোটারের সই জমা দিয়েই প্রার্থী হতে পারবেন তিনি।
অন্যদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপির সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর উপজেলা নির্বাচনে আসার কোনও লক্ষণ নেই। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনেই না যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে তাদের।
বিএনপির মধ্যে কৌশলে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনা রয়েছে। তবে তাতে দলের প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে বিএনপি নেতাদেরও ভোটের মাঠে দেখা যেতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে।
বাংলাদেশে আগে শুধু সংসদ নির্বাচনই দলীয় প্রতীকে হত। স্থানীয় সরকারের বাকি সব নির্বাচন হত নির্দলীয়ভাবে।
এক দশক আগে স্থানীয় সরকারের আইনগুলো সংশোধনের পর এখন সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদেও ভোট দলীয় প্রতীকে হচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সব নির্বাচনের জন্যই খোলা; তবে তাতে শর্তে রয়েছে ভিন্নতা।
কোন নির্বাচনে কী শর্ত
সংসদ নির্বাচন: সংসদ নির্বাচনে ভোট করতে গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্দিষ্ট সংসদীয় আসনের মোট ভোটার সংখ্যার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন বা স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী (প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন যাচাই) বিধিমালা ২০১১ এ তা বলা আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী যে নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, সেই এলাকার ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি স্বাক্ষরে গরমিল পান কিংবা ১ শতাংশের কম সই পান, তাহলে মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি আগে কখনও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে থাকেন, তাহলে তার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য নয়।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ২৫০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হবে। তবে কেউ যদি আগে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে থাকেন, তবে তাকে ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দাখিল করতে হবে না।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে নির্বাচনী এলাকার ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দাখিল করতে হয়। তবে কেউ মেয়র পদে আগে নির্বাচিত হলে তার জন্য এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না।
পৌরসভা নির্বাচন: পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট এলাকার ১০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হয়। এক্ষেত্রেও আগে নির্বাচিত মেয়ররা ছাড় পান।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: স্থানীয় সরকারের সব ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ভোটারে সমর্থনযুক্ত তালিকা দেওয়া লাগলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোনো ভোটারের সমর্থন বা স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হয় না। ফলে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সবচেয়ে সহজ।