বিএনপিবিহীন সংসদ নির্বাচনে যে কৌশলে খেলেছে আওয়ামী লীগ; আসছে উপজেলা নির্বাচনেও কি সেই কৌশল হবে, তা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা। খবর নিয়ে জানা গেল, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা। বিএনপি কী করে, তা দেখে নিতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনৃুষ্ঠিত হয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় এতে অংশ নেয়নি বিএনপি। তাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় বসেছে আওয়ামী লীগ।
সংসদ নির্বাচন শেষ করে এখন ৪৮৫ উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এবার সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় নৌকার প্রার্থী রেখেও দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। তাতে ভোট জমে ওঠার পাশাপাশি ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ীও হন।
এখন উপজেলার ক্ষেত্রে কী হবে- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখনও কোনেও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জানা যাবে।”
নৌকা প্রতীক ভোটে না রাখার আলোচনা রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আলোচনা আছে নৌকা প্রতীক উন্মুক্ত রাখার। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন জানান, তারা সব দলকে ভোটে দেখতে চান।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, প্রত্যেকটা দল যাতে ভোটে আসে। সবাই ভোটে আসলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হয়। ইলেকশনটা ভালো হয়।”
আওয়ামী লীগের কৌশল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিএনপির মতো দল যদি ভোটে আসে, তাহলে অবশ্যই নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে তারা যদি না আসে, তাহলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে।”
বিএনপি সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে তারা।
এদিকে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি জানিয়ে রমেশ সেন বলেন, “এখনও তফসিল হয়নি। আগে তফসিল হোক, তারপরই মনোনয়ন বোর্ডের সভার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
ইসি উপজেলা ভোট ধাপে ধাপে করতে চায়। আর প্রথম ধাপ শেষ করতে চায় রোজা শুরুর আগেই। সেক্ষেত্রে মার্চের প্রথম সপ্তাহের আগে প্রথম ধাপের ভোট হবে।
চলতি সপ্তাহেই উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা হবে কি না- জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা তো কমিশন বলতে পারবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত।”
কমিশন সভা কবে হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও তো সভার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় নাই। কালকে বোঝা যাবে কী হয়?”
স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ সংশোধন আইন ২০১৫ অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান সাধারণ ও সংরক্ষিত পদের নির্বাচনের জন্য কোনো প্রার্থীকে রাজনৈতিক দলের মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদে নির্দলীয়ভাবে অর্থাৎ দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোট হয়েছিল।এরপর ২০১৭ সালে দেশের প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ ভোট হয়। তারপর থেকে দলীয় প্রতীকেই এই ভোট হয়ে আসছে।
২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রার্থী দল থেকে মনোনয়ন দেয়নি।