সীমান্তে হিজবুল্লাহর হামলার প্রতিক্রিয়ায় লেবাননে ব্যাপক মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল। সোমবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত লেবাননের দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ইহুদি রাষ্ট্রটির বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ৫৬৯ জন। হাজার হাজার লেবানিজ প্রাণ বাঁচাতে দক্ষিণাঞ্চল ছেড়ে পালাচ্ছে।
লেবাননের আধাসামরিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে বলা হলেও ইসরায়েলের উপর্যুপরি বোমা হামলায় ৫০ জন শিশুর পাশাপাশি নিহত হয়েছে বহু নারী। আহত হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষ।
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাজ আবিয়াদের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর মধ্যে মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইব্রাহিম কুবাইসি নামে হিজবুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হন বলে।
ইসরায়েলের দাবি, ইব্রাহিম কুবাইসি ছিলেন হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট বাহিনীর প্রধান।
এমন যখন পরিস্থিতি, তখন লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ বাউ হাবিব ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়ে বসলেন। বললেন, ইসরায়েল আর হিজবুল্লাহর লড়াই একমাত্র তারাই পারে থামাতে। দিতে পারে মুক্তির দিশা।
প্রায় এক বছর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যে শুরু হওয়া উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দু’পক্ষের লড়াই গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরুর পর হিজবুল্লাহ অঙ্গীকার করেছিল, ইহুদি রাষ্ট্রটিকে গাজায় হামলা বন্ধ করতে হবে, নতুবা ইসরায়েলে হামলা করবে তারা।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়নি, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। হিজবুল্লাহও অঙ্গীকার অনুযায়ী গত প্রায় এক বছর ধরে থেমে থেমে ইসরায়েল সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে গেছে। তাদের দিকে পাল্টা আক্রমণও আসতে থাকে ইসরায়েলের তরফ থেকে।
পরিস্থিতি অনেক বেশি নাজুক হয়ে পড়ে গত সপ্তাহে যখন হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা কয়েক হাজার পেজার ও ওয়াকি-টকিতে বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েল, যে ঘটনায় যোদ্ধাসহ ৩৯ জনের প্রাণহানি হয়, আহত হয় হাজারো ব্যক্তি।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যুক্তরাজ্য তার নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “লেবানন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। লেবাননের জনগণ, ইসরায়েলের জনগণ, সমগ্র বিশ্ববাসী লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত হতে দেখার অবস্থায় নেই।”
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও বিবদমান পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “সর্বাত্মক যুদ্ধ কারও স্বার্থ হাসিল করবে না। উত্তেজনা বাড়লেও কূটনৈতিকভাবে সমাধানের পথ এখনও খোলা আছে।”
লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ বাউ হাবিব অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাইডেনের অবস্থানের সমালোচনা করে মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তিনি ‘কঠোর, প্রতিশ্রুতিশীল কোনোটিই নন’।
তবে একইসঙ্গে এও বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যে মধ্যপ্রাচ্যে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রই পারে আমাদের মুক্তি দিতে।”