ইরান ও তার সহযোগী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সম্ভাব্য হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
সম্প্রতি ইরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও লেবাননে হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডারের হত্যাকাণ্ড ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পেন্টাগন জানিয়েছে, মোতায়েনের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ইসরায়েলকে সুরক্ষা প্রদানে তাদের ‘ইস্পাতদৃঢ়’ প্রতিশ্রুতি অটুট রয়েছে।
হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলকে ‘কঠোর সাজা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার পরই মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান ও জাহাজ মোতায়েনের ঘোষণা এলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে।
বুধবার তেহরানে হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়। ইরান ও হামাস এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে, যদিও ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
৬২ বছর বয়সী ইসমাইল হানিয়া হামাসের সামগ্রিক নেতা হিসেবে বিবেচিত হতেন এবং গাজা যুদ্ধ থামাতে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার লক্ষ্যে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।
তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েল দাবি করে, তারা লেবাননে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকুরকে হত্যা করেছে।
পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধবিমান ও জাহাজ মোতায়েনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তা এই অঞ্চলে নিয়োজিত “মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা বাড়াবে… ইসরাইলের সুরক্ষায় সহায়তা জোরদার করবে এবং…নিশ্চিত করবে যে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত রয়েছে”।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন করে যেসব যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে অতিরিক্ত ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরক্ষা ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রুজার এবং বিধ্বংসী জাহাজও থাকবে।”
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত ১৩ এপ্রিল ইরান যখন ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তার আগেও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছিল। ওইদিন ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ও তার মিত্ররা প্রায় ৩০০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তবে ইসরায়েল ও তার মিত্ররা এর প্রায় সবগুলোই ঠেকিয়ে দেয়।
গত বুধবার তেহরানে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার বিষয়ে ইসরায়েল সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শত্রুদের ওপর ‘বিধ্বংসী আঘাত’ হেনেছে, যার মধ্যে বৈরুতে ফুয়াদ শুকুরকে হত্যার ঘটনাটিও রয়েছে।
তিনি ইসরায়েলের জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, “সামনে চ্যালেঞ্জিং দিন আসছে… আমরা সব দিক থেকে হুমকি পাচ্ছি। আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি আছি।”
এর আগে পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়েছে– এমনটা বিশ্বাস করে না যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমরা আমাদের বার্তাটি খুব স্পষ্টভাবে দিচ্ছি যে, নিশ্চিতভাবে আমরা চাই না উত্তেজনা বাড়ুক এবং আমরা বিশ্বাস করি এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একটি পথ রয়েছে, আর তা হলো যুদ্ধবিরতি চুক্তি।”
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধি দল মিশরের রাজধানী কায়রো যাবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় প্রায় ১২শ’ মানুষ নিহত হয়। ওই ঘটনার পর ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড থেকে হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য গত প্রায় ১০ মাস ধরে গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া লক্ষাধিক মানুষ আহত এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।