পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য আগামী ৫ নভেম্বর ভোট দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা।
এবারের নির্বাচনেও ২০২০ সালের মতো রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু জুলাইয়ে জো বাইডেন সরে দাঁড়ালে তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান।
এখন বড় প্রশ্ন হল— ডোনাল্ড ট্রাম্প কি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য জয়ী হবেন নাকি আমেরিকা প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে?
জনমত জরিপগুলো বলছে, ভোটের মাঠে এবার রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে।
জরিপে কে এগিয়ে
বাইডেনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগের মাসগুলোতে পরিচালিত জরিপগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বাইডেনকে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। এতে ডেমোক্রেটরা হতাশ হয়ে পড়ে।
এমনকি সেই সময়ের বেশ কয়েকটি জরিপে দেখা গিয়েছিল কমলা হ্যারিসও খুব বেশি ভাল করতে পারবেন না।
তবে কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করার পর তার জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। এমনকি তিনি ট্রাম্পকেও ছাড়িয়ে যান, যদিও তা সামান্য ব্যবধানে। সেই ব্যবধান এখনো বজায় রেখেছেন হ্যারিস।
গত ১৯ থেকে ২২ আগস্ট শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের মধ্যে কমলার সমর্থন ৪৭ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর আর তার সমর্থন তেমন বাড়েনি।
ট্রাম্পের গড় সমর্থনও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, প্রায় ৪৪ শতাংশের আশেপাশে।
রবার্ট এফ কেনেডির সমর্থনেও কোনও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি, যিনি ২৩ আগস্ট তার স্বতন্ত্র প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
তবে গত রবিবার প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের এক জরিপে দেখা গেছে, পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে হিসাবে নিলে জনসমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। জরিপে তিনি পেয়েছেন ৪৮ পয়েন্ট। আর কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৭ পয়েন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর হিসাবে উইসকনসিন, মিসিগান ও পেনসিলভেনিয়ায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা।
আর দোদুল্যমান চার অঙ্গরাজ্য- নেভাডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও অ্যারিজোনায় তাদের সমর্থন সমান সমান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো।
রবিবারই প্রকাশিত সিবিএস ও ইউগভ এর জরিপে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ট্রাম্প-কমলার তুমুল লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তাদের জরিপে দেখা যায়, মিসিগানে কমলার সমর্থন ৫০ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৯ শতাংশ।
উইসকনসিনেও ২ শতাংশ সমর্থনে এগিয়ে কমলা। পেনসিলভেনিয়ায় দুজনই সমান সমর্থন পেয়েছেন।
তার মানে এখন পর্যন্ত পরিচালিত জরিপগুলো বলছে, ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প-কমলার মধ্যে হাড্ডহাড্ডি লড়াই হবে।
তবে এবিসি নিউজ আয়োজিত বিতর্কের পর তাদের উভয়েরই সমর্থন কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায়) ফিলাডেলফিয়ায় নির্বাচনী বিতর্কের মঞ্চে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন ট্রাম্প-কমলা।
সিএনএন আয়োজিত আগের বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে হেরে গিয়েছিলেন বাইডেন, যে কারণে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।
এই জাতীয় জরিপগুলো সমগ্র দেশে একজন প্রার্থী কতটা জনপ্রিয় তার জন্য একটি দরকারী নির্দেশিকা। তবে নির্বাচনের ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য এটি সঠিক উপায় নয়।
কারণ যুক্তরাষ্ট্র তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি ব্যবহার কর। তাই সবচেয়ে বেশি ভোটে জয়লাভ করা, তারা কোথায় জিতেছেন তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্য রয়েছে। কিন্তু যেহেতু তাদের বেশিরভাগই প্রায় সবসময় একই দলকে ভোট দেয়, বাস্তবে এমন কিছু রাজ্যও আছে যেখানে উভয় প্রার্থীই জয়ী হওয়ার সুযোগ পায়। এই রাজ্যগুলোই নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণ করে দেয়। এগুলো যুদ্ধক্ষেত্র রাজ্য হিসাবে পরিচিত।
যুদ্ধক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে কে এগিয়ে
এই মুহূর্তে সাতটি যুদ্ধক্ষেত্রের রাজ্যে জরিপে টানটান অবস্থা দেখা গেছে। তাই কে সত্যিই দৌড়ে এগিয়ে আছেন তা জানা কঠিন।
সাম্প্রতিক জরিপগুলি দেখায় যে, কিছু রাজ্যে দুই প্রার্থী মাত্র এক শতাংশেরও কম পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে বা পিছিয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে পেনসিলভানিয়া, যা খুবেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজের সর্বাধিক সংখ্যক ভোট রয়েছে। এই রাজ্যে যিনি জয় পাবেন তার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেক্টারাল ভোটে পৌঁছানো সহজ হবে।
পেনসিলভেনিয়া, মিসিগান এবং উইসকনসিন ডেমোক্রেটদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে ২০১৬ সালে ট্রাম্প এই রাজ্যগুলোতে জয় তুলে নিয়েছিলেন।
বাইডেন ২০২০ সালে সেগুলো পুনরুদ্ধার করেছিলেন। হ্যারিস যদি এই বছর একই কাজ করতে পারেন তবে তিনি নির্বাচনে জয়ী হবেন।
হ্যারিস প্রার্থী হওয়ার পর এই রাজ্যগুলোতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থন বাড়তে থাকে। জো বাইডেনের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সময় তিনি এই সাতটি যুদ্ধক্ষেত্রের রাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে গড়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন।
আর সেই রাজ্যগুলোতে এখন কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্পের সমর্থন প্রায় সমান সমান।
জরিপে কি আস্থা রাখা যায়
এই মুহূর্তে জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয়ভাবে এবং যুদ্ধক্ষেত্র উভয় রাজ্যে একে অপরের কাছাকাছি রয়েছেন। তবে নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এসে কে বিজয়ী হবেন সেই ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন।
২০১৬ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের আগে জরিপগুলোতে ট্রাম্পের সমর্থন অবমূল্যায়িত হয়েছিল। বাস্তবে ট্রাম্পের যা সমর্থন ছিল জরিপে তার চেয়ে কম দেখা গেছে।
এবারও তেমনটা ঘটে থাকলে ট্রাম্পের সমর্থন হয়তো বাস্তবে আরও বেশিও হতে পারে। তবে তা জানার জন্য ভোটের দিন পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হবে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি