ভোট শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফল আসাটা প্রত্যাশিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গতবার বেধেছিল গোল; চার দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল ফলের জন্য।
এবছর জনমত জরিপগুলো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে, তার সঙ্গে আবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের একজন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ক্ষ্যাপাটে একজন। ফলে এবারও দেরির শঙ্কাই জাগছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা মঙ্গলবার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দিচ্ছেন। বিশাল এই দেশে রাজ্যগুলো নানা সময় অঞ্চলে, ফলে ভোট শুরু ও শেষ হওয়াটা একই সময় হচ্ছে না।
কোনও কোনও রাজ্যে স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা) ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, সকাল ১০টার মধ্যে অবশ্য অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই খুলে গেছে। ভোটগ্রহণ শেষ হতে সন্ধ্যা বা মধ্যরাত (বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর পর্যন্ত) হয়ে যাবে কোনও কোনও রাজ্যে।
এরপর গণনা শেষে ফল ঘোষণা হবে। তাতে জানা যাবে, কে হচ্ছেন দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট।
প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর যেই জিতুক না কেন, তা নতুন ইতিহাস গড়বে যুক্তরাষ্ট্রে। ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জিতলে তিনি হবেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। আবার ট্রামাপ জিতলে তিনি হবেন দুই বার অভিসংসিত হওয়ার পরও হোয়াইট হাউসে ফেরা প্রথম ব্যক্তি।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী কর্মকর্তারাও ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। এবার কে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, তা জানতে ভোটের পরও কয়েক দিন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
গতবার ফল ঘোষণায় কেন হয়েছিল দেরি?
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার। তবে পেনসিলভেনিয়ার ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পর ৭ নভেম্বর সকালে জো বাইডেনের বিজয় নিশ্চিত হয়।
সেবার রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ফল মানতে রাজিই ছিলেন না। তিনি কারচুপির অভিযোগ তোলেন। এমনটা সচরাচর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
গত দুই দশকে কোনও নির্বাচনেরই ফল জানতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয় ভোটগ্রহণের পর রাত ৩টার কিছুক্ষণ আগে। সেবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছিলেন হিলারি ক্লিটনটনকে হারিয়ে।
২০১২ সালে যখন বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন, তখন ভোটের দিন মধ্যরাতের আগেই তার বিজয় অনুমান করা হয়েছিল।
তবে জর্জ ডব্লিউ বুশ (জুনিয়র বুশ) এবং আল গোরের মধ্যে ২০০০ সালের নির্বাচন একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছিল।
সেবার ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৭ নভেম্বর। কিন্তু ফ্লোরিডায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যটির ভোট পুনঃগণনা প্রক্রিয়া শেষ করার পক্ষে রায় দেয়। দ্বিতীয়বারের গণনায়ও বুশ বেশি ভোট পেলে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এবারের ফল হতে পারে কখন?
এর আগে অনেক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ীর নাম নির্বাচনের রাতে বা পরের দিন ভোরে সংবাদমাধ্যমে চলে এসেছিল। এবার অনেক রাজ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার অর্থ হতে পারে, কে জিতেছে তা অনুমান করার আগে সংবাদমাধ্যগুলোও অপেক্ষা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জরিপগুলোতে পরস্পরের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছিলেন। জাতীয়ভাবে যেসব জনমত জরিপ হয়েছে, তার গড় করে দেখা গেছে, রবিবার পর্যন্ত কমলা হ্যারিসের পক্ষে সমর্থন ছিল ৪৮ শতাংশ। আর ট্রাম্পের পক্ষে ৪৭ শতাংশ।
এছাড়া দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে ব্যবধান এতই কম যে কোন প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন, তা বলাই মুশকিল। এমনকি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে দুই প্রার্থীর প্রতি ভোটারদের সমর্থন নিয়মিত ওঠানামা করতেও দেখা গেছে।
ফলে জোরালোভাবে অনুমানও করা যাচ্ছে না যে কোন প্রার্থীর পাল্লা বেশি ভারী। তাই একটু এদিক ওদিক হলেই যে কোনও প্রার্থীই জিতে যেতে পারেন।
আর সামান্য ব্যবধানে বিজয়ের অর্থ দুবার ভোট গণনা হতে পারে।
প্রধান দোদুল্যামান রাজ্য পেনসিলভেনিয়ায় বিজয়ী এবং পরাজিতের ভোটের পার্থক্য ১ শতাংশের কম হলে রাজ্যব্যাপী ভোট পুনঃগণনার প্রয়োজন হবে।
২০২০ সালে এই ব্যবধান ছিল ১.১ শতাংশের সামান্য বেশি।
আবার আইনি চ্যালেঞ্জও ভোটের ফল ঘোষণা দেরি করিয়ে দিতে পারে। ভোটারদের নিবন্ধনের যোগ্যতা এবং ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জসহ রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যে ১০০টিরও বেশি প্রাক-নির্বাচনী মামলা দায়ের করেছে।
প্রধান প্রধান রাজ্যগুলোতে ভোটগ্রহণ শেষ কখন?
সারা দেশে প্রথম কোনও রাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং সর্বশেষ কোনও রাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হবে বুধবার রাত ১টায়।
তবে প্রধানত ৭টি দোদুল্যমান রাজ্যের ফলাফলের পরই বলে দেওয়া যাবে কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। রাজ্যগুলো হলো- অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিন।
জর্জিয়ায় ভোটগ্রহণ সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে। সেখানে স্বশরীরে দেওয়া ভোটের আগে প্রথমে আগাম এবং ডাকযোগে আসা ভোট গণনা করা হবে। জর্জিয়ার শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছে, প্রথম দুই ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট গণনা হয়ে যাবে এবং রাতের মধ্যেই গণনা শেষ হবে।
জর্জিয়ার ৩০ মিনিট পর ভোটগ্রহণ শেষ হবে নর্থ ক্যারোলাইনায়। সেখানে রাত শেষ হওয়ার আগেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সেপ্টেম্বরে হারিকেনে আক্রান্ত এলাকায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পেনসিলভেনিয়ায় রাত ৮টায় ভোটগ্রহণ শেষ শেষ হয়। এটি এবার প্রধান দোদুল্যামান রাজ্য। উইসকনসিনের মতো পেনসিলভানিয়ায়ও নির্বাচনের পরিদন সকালে ভোট গণনা শুরু হবে, ফলে ফলাফলেও প্রত্যাশিত বিলম্ব হবে। সেখানে ভোটগ্রহণের পর ফলাফল আসতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
মিশিগানে রাত ৯টায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে। সেখানে নির্বাচন দিবসের এক সপ্তাহ আগে থেকেই আগাম ও ডাকযোগে আসা ভোট গণনা শুরু হবে। তবে ফলাফল ভোটের দিনের পরদিন সন্ধ্যার আগে প্রকাশ করা হয় না। মিশিগানের শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেছেন, বুধবার দিনের শেষ পর্যন্ত ফলাফল আশা করা উচিৎ নয়।
উইসকনসিনে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে, আর ফল ঘোষণা হবে পরদিন।
অ্যারিজোনায় প্রাথমিক ফলাফল রাত ১০টার মধ্যেই আসতে পারে, তবে রাজ্যের বৃহত্তম কাউন্টি বলেছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ফলাফলের আশা করা যাবে না। এছাড়া রাজ্যের বৃহত্তম জেলা ম্যারিকোপা কাউন্টির কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনের দিনে পোস্টাল ব্যালটে আসা ভোট গণনা করতে ১৩ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
নেভাডাতেও ভোট গণনা করতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। কারণ রাজ্যটিও ভোটের দিন পর্যন্ত ডাকযোগে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেয়, যা আসতে ৯ নভেম্বর পর্যন্তও সময় লেগে যেতে পারে।
ভোট গণনা কীভাবে হয়
সাধারণত নির্বাচনের দিনে দেওয়া ভোটগুলো প্রথমে গণনা করা হয়। এরপর আগাম এবং ডাকযোগে আসা ব্যালটগুলো এবং তারপরে বিদেশ থেকে আসা এবং সামরিক ব্যালটগুলো গণনা করা হয়।
স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা— কখনও নিযুক্ত, কখনও কখনও নির্বাচিত— প্রতিটি ব্যালট যাচাই-বাছাই করেন, যা ক্যানভাসিং নামে পরিচিত।
ব্যালট যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে রয়েছে সক্রিয় ভোটারদের সংখ্যার সঙ্গে কত ভোট পড়েছে, তার তুলনা করা; ছেঁড়া-ফাটা, দাগ বা অন্যান্য সমস্যার জন্য ব্যালট বাতিল করা, ব্যালট খোলা এবং পরীক্ষা করা; কোনও অসঙ্গতি থাকলে ডকুমেন্টিং এবং তদন্ত করা।
গণনার জন্য প্রতিটি ব্যালটকে ইলেকট্রনিক স্ক্যানারে স্ক্যানও করা হয়, যা ফলাফলের সারণী তৈরি করে। কিছু পরিস্থিতিতে হাতে গণনা বা ডবল-চেক প্রয়োজন হয়।
এই প্রক্রিয়ায় কে অংশগ্রহণ করতে পারবে, কোন ক্রমে ভোট প্রক্রিয়া করা হবে এবং কোন অংশগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, সেসব বিষয়ে প্রতিটি রাজ্য এবং এলাকার কঠোর নিয়ম রয়েছে। যার মধ্যে দলীয় পর্যবেক্ষকরা ভোট গণনায় নিরীক্ষণ ও হস্তক্ষেপ করতে পারবেন কিনা তাও রয়েছে।
ফলাফল কীভাবে নির্ধারিত হয়
প্রতিটি বৈধ ভোট গণনা করে সাধারণ ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া কার্যকর হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগরিকদের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। নির্বাচনের দিন ভোটাররা মূলত ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের বা ইলেক্টরদের নির্বাচনের জন্য ভোট দেন।
নির্বাচন দিবসে ওয়াশিংটন ডিসি ও ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর বা নির্বাচককে নির্বাচন করেন। পরে এই ইলেক্টরদের ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে তাদের দলের বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিদেরকেই ‘ইলেক্টর’ হিসাবে মনোনয়ন দেয়। এই মনোনীত ইলেক্টরগণ বিজয়ী হলে নিজ নিজ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকেন।
প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই হলো ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটারদের একমাত্র কাজ। প্রতি চার বছর পরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই ইলেক্টোরাল কলেজ গঠন করা হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে কংগ্রেসে আসনের (সিনেটর এবং প্রতিনিধিদের) সম সংখ্যক ইলেক্টর নির্বাচিত করা হয়, কিন্তু তারা একই ব্যক্তি নন। এদের বলা যায় নির্বাচক মণ্ডলী।
ডিসেম্বরের ২য় বুধবারের পর প্রথম সোমবারে (এবছর ১৭ ডিসেম্বর) প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টররা নিজ নিজ রাজ্যের রাজধানীতে মিলিত হয়ে আলাদা আলাদা ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইলেক্টোরাল কলেজ এবং তাদের ভোটকে বলা হয় ইলেক্টোরাল ভোট।
ইলেক্টররা নির্বাচকরা ইলেক্টোরাল কলেজে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের জন্য তাদের ভোট দেন। অনেক সময় এই পর্যায়ে এসেও কে প্রেসিডেন্ট হবেন তা নির্ধারিত হয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য একজন প্রার্থীর অর্ধেকেরও বেশি— কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের প্রয়োজন হয়।
ভোটের দিন কংগ্রেস (পার্লামেন্ট) সদস্যরাও নির্বাচিত হন। নতুন কংগ্রেস ৬ জানুয়ারি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট গণনা করে নতুন প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করবে। আর ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ও শপথগ্রহণ এবং অভিষেক হবে।
তাত্ত্বিকভাবে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও সাধারণত মূল নির্বাচনের দিনই তথা সাধারণ ভোটারদের ভোটেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়ে যায়।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পাঁচবার এবং গত ২৪ বছরে দুবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জাতীয়ভাবে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি।
এর সর্বশেষ উদাহরণ হিলারি ক্লিনটন, যিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে জাতীয়ভাবে ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেলেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। তার মানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে হলে একজন প্রার্থীকে আসলে মূলত ইলেক্টারাল ভোটেই জিততে হয়।
কোনও রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি সাধারণ ভোটারদের ভোট পান, তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোটও পেয়ে যান।
২০২০ সালের নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ায় জো বাইডেন পেয়েছেন ১ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ৬৩৯ ভোট। ট্রাম্প পান ৬০ লাখ ৬ হাজার ৫১৮ ভোট। তার মানে জো বাইডেন বিজয়ী হন। সেসময় এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ছিল ৫৫টি। সাধারণ ভোটে জয়ী হওয়ায় বাইডেন এই ৫৫টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলোই পেয়ে যান। আর ট্রাম্প একটিও পাননি।
অন্যদিকে, টেক্সাসে ট্রাম্প পান ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ৩৪৭ ভোট। আর জো বাইডেন পান ৫২ লাখ ৫৯ হাজার ১২৬ ভোট। তার মানে ট্রাম্প বিজয়ী হন। সেসময় এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ছিল ৩৮টি। সাধারণ ভোটে জয়ী হওয়ায় ট্রাম্প এই ৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলোই পেয়ে যান। আর এই রাজ্যে বাইডেনের ঝুলি থাকে শূন্য।
এভাবে একেকটি রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ হতে হতে যে প্রার্থী ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যান— তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষিত হন।
এখানে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে ইলেক্টরদের নির্বাচন করেন, কিন্তু ব্যালটের মধ্যে সচরাচর ইলেক্টরদের নাম থাকে না, তার বদলে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম থাকে। তাদেরকে ভোট দিলেই তাদের মনোনীত ইলেক্টররাও নির্বাচিত বলে গণ্য হন।
তবে কোনও কোনও রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়, যেমন, ৮টি অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে ইলেক্টরদের নাম থাকে।
২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল তা হলো— তিনি নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ডেমোক্র্যাটিক অধ্যুষিত এবং জনবহুল অঙ্গরাজ্যগুলোতে অনেক বেশি সাধারণ ভোট পেয়েছিলেন।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন এবং সেসব রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে মোট ৩০৪টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যান। আর হিলারি ক্লিনটন পেয়েছিলেন মাত্র ২২৭টি ইলেক্টোরাল ভোট।
উভয় প্রার্থী যদি সমান সমান ইলেক্টোরাল ভোট পান, তাহলে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। একে বলা হয় কনটিনজেন্ট ইলেকশন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন নির্বাচন হয়েছিল তিন বার- ১৮০১, ১৮২৫ ও ১৮৩৭ সালে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি, আল জাজিরা