Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান যুদ্ধে জড়ালে কী হবে

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষ হবে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিধ্বংসী বোমার বিস্ফোরণের মতো।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষ হবে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিধ্বংসী বোমার বিস্ফোরণের মতো।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে ছায়া যুদ্ধ চালিয়ে আসছিল। এই সময়কালে একাধিকবার তাদের মধ্যে সরাসির সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হলেও তারা তা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। কারণ দুটি দেশই জানে যে, তারা যদি একজন আরেকজনকে আঘাত করে তাহলে অপরজন সমানভাবেই পাল্টা আঘাত হানবে। কিন্তু সেই সংযমের বাধ হয়তো এবার ভেঙে পড়তে চলেছে।

দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা ও তার জবাবে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি বোমার সলতের আগায়ও আগুন জ্বলে উঠে। আর যেই ভয়ঙ্কর ও বিধ্বংসী বোমাটির সঙ্গে সেই সলতেটি যুক্ত— যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ— তাতেও এবার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

গাজায় ইসরায়েলের প্রতিটি বোমা হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের নিহত হওয়ার হিসাবের প্রতিটি নতুন অঙ্কের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের স্বার্থের ‍ওপর ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের প্রতিটি হামলার সঙ্গে সঙ্গে সলতেটিও জ্বলতে জ্বলতে ছোট হতে থাকে। ফলে তা এখন যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষের বিধ্বংসী বোমাটিতেও বিস্ফোরণ ঘটানোর দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। আর এই বিস্ফোরণের পরিণতি পুরো বিশ্বের জন্যই বিপর্যয়কর হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

এর ফলে এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও বেধে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেইন অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষণেও বিশ্বব্যাপী চলমান আঞ্চলিক সংঘাতগুলোকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালের বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, হামাস-ইসরায়েল নৃশংস সংঘাত ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ছায়াযুদ্ধ শেষমেষ একটি বৈশ্বিক সংঘর্ষের দিকে গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ফরেইন অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষকরা। আর তাতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের সংযমের বাধ ভেঙে পড়ছে

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের জেরে গত চার মাসে লোহিত সাগর থেকে শুরু করে ইরাক-সিরিয়া ও লেবানন-জর্ডান পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যেও ছায়াযুদ্ধ তীব্র আকার ধারন করে। দৃশ্যত যার একদিকে আছে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো আর অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র।

হামাস ইসরায়েল-যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইরাক ও সিরিয়াজুড়ে মর্কিন সেনাদের ওপর প্রায় ১৬০ বার হামলা করে। এ ছাড়া ইয়েমেনের হুতিদের সঙ্গে লোহিত সাগরেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অন্তত ৩৭টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

তবে এতো হামলার পরও ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে সংযম ধরে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গত রবিবার জর্ডানে সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সংযমের বাধ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এরপরও ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টা করছে।

সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতেই ইরানের মাটিতে হামলা না চালিয়ে শুধু ইরাক ও সিরিয়াজুড়ে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠনগুলোসহ ইরানি সেনাঘাঁটি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দপ্তর হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনায়ও অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। যে কোনও সময় শুরু হয়ে যেতে পারে হামলা।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষের ঝুঁকি কতটা

জর্ডানে সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতাদের চাপের মুখে রয়েছেন। তারা ইরানের ভেতরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চাইছেন। তবে বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে বড় পরিসরে যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাও আর বাড়াতে চান না।

আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকরা অবশ্য সতর্ক করেছেন, ইরানের ভেতরে না হলেও এই ধরনের হামলায়ও উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি আছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শুক্রবার এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, যে কেউ তাদের হুমকি দিলে তার দেশ কঠোরভাবে জবাব দেবে।

ইব্রাহিম রাইসি বলেন, “আমরা কোনও যুদ্ধ শুরু করব না, কিন্তু কেউ যদি আমাদের হুমকি দিতে চায় তাহলে তাদের কঠোর জবাব দেওয়া হবে। আগে, যখন তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল, তখন তারা আমাদের ভয় দেখিয়েছিল, সংলাপে কাজ না হলে তারা সামরিক বিকল্প বেছে নেবে। তারাই এখন বলছে ইরানের সঙ্গে সংঘাতের কোনও ইচ্ছা তাদের নেই।”

ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “তেহরানের সামরিক শক্তি এই অঞ্চলের কোনও দেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেনি এবং করবেও না। ইরানের শক্তি শুধুমাত্র তার আশেপাশের দেশগুলোকে ঘিরে শক্তিশালি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।”

ইরান জর্ডানে ড্রোন হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বলছে যে, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটেছে তারা তা আর বাড়াতে চায় না।

তবে বৃহস্পতিবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেন সালামি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তেহরান মার্কিন হামলার কড়া জবাব দেবে।

জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর তেহরান ও ওয়াশিংটন যে বার্তা বিনিময় করেছে, সেখানেও ইরান তার মাটিতে হামলার ব্যাপারে কড়াভাবে সতর্ক করেছে বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির আগ্রাসী নেতারা ইরানের উপর সরাসরি হামলার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় থাকার সময়ই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের বাগদাদ বিমান বন্দরে হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে। এরপর থেকেই মূলত ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠনগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা বাড়ানো শুরু করে, যা হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধের পর সর্বোচ্চে উঠে।

জর্ডানে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করা ইরাকের সশস্ত্র ইসলামি প্রতিরোধ গোষ্ঠী বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিরুদ্ধে তাদের সব সামরিক অভিযান স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেছেন, ওয়াশিংটন শুধু কথা নয় কাজের দিকে নজর রাখবে।

তবে ইরাকের আরেক ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন আল-নুজাবা আন্দোলন শুক্রবার বলেছে, মার্কিন সৈন্যদের ইরাক ছেড়ে যাওয়া এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে যাবে। এবছরের জানুয়ারির শুরুতে মার্কিন বিমান হামলায় আল-নুজাবার একজন সিনিয়র কমান্ডার নিহত হন।

ইরানের কৌশল

ইরান যদিও বারবার দাবি করছে যে, জর্ডানে হামলার পেছনে তাদের হাত নেই, কিন্তু ওয়াশিংটনের খুব কম লোকই তাদের একথা বিশ্বাস করে। কারণ ইরান দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ইরান পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সামরিক অশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ইরান বরাবরের মতো এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

তবে ইরান এই সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ বলে আখ্যায়িত করে। আর এই কথিত প্রতিরোধের অক্ষ গড়ে তোলার পেছনে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মূলত ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের আল-কুদস ফোর্সের জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। যে কারণে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।

দীর্ঘমেয়াদে ইরানের কৌশলগত লক্ষ্য হলো ইরাক, সিরিয়া ও উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আমেরিকান সৈন্যদের তাড়ানোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যের অবসান ঘটানো। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ইরানের সামনে সেই উদ্দেশ্যকে আরও এগিয়ে নেওয়ার একটি অপ্রত্যাশিত সুযোগ এনে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে হিসাব-নিকাশে ভুল করে ফেলেছেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী জনমত তীব্র হওয়ার পাশাপাশি ইরানের প্রতিও মানুষের সমর্থন বাড়ছে।

ফরেইন অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষণেও দেখানো হয়েছে, কীভাবে গাজায় ইসরায়েলের বিধ্বংসী যুদ্ধের ফলে আরব জনগণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের প্রতিও জনসমর্থন কমে আসছে। তার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে সহিংসভাবে প্রতিরোধে ইরানের কৌশলের প্রতিই আরবদের সমর্থন বাড়ছে।

এখন বাইডেন যদি ফের আরেকবার ভুল হিসাব-নিকাশ করে বসেন তাহলে তা ভয়ানক পরিণতি বয়ে আনবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি ভুল থেকে সুবিধা আদায়ের সুযোগের সদ্ব্যবহারে ওঁৎ পেতে বসে আছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষের পরিণতি কী হতে পারে

দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক প্রতিশোধ বিপর্যয় বয়ে আনবে। এতে গাজা সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হবে। এটি প্রায় নিশ্চিতভাবে ইসরায়েলের উপর হিজবুল্লাহর সর্বাত্মক আক্রমণ উস্কে দেবে। এটি ছোট একটি আগুনের কুণ্ডলীকে ইরাক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ নরকে পরিণত করতে পারে এবং মিশর, জর্ডান ও উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারগুলোকেও অস্থিরতায় ফেলে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষ পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোর মধ্যেও সম্ভবত স্থায়ীভাবে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, যুক্তরাজ্য হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করবে। কিন্তু ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মতো দেশগুলো তেহরানের সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করাকে বাস্তবসম্মতরূপে অগ্রাধিকার দিতে পারে।

গাজা যুদ্ধের জেরে লোহিত সাগরের বাব আল-মান্দেব প্রণালিতে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতিদের অবিরাম হামলায় ইতিমধ্যেই ফ্রান্স ও ইতালির মতো ভূমধ্যসাগর উপকূলীয় দেশগুলোর সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের খরচ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। কারণ বিশ্ববাণিজ্যের জাহাজগুলো আরব সাগর থেকে লোহিত সাগর ও সুয়েজখাল হয়ে সরাসরি ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করতে পারছে না। আফ্রিকা হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে ইউরোপে খাদ্য ও ‍জ্বালানির দামও বাড়ছে।

এখন ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘর্ষ শুরু হলে হরমুজ প্রণালিও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ইউরোপের জ্বালানি সংকট আরও বাড়বে। বিশ্বের তেলবাণিজ্যের পাঁচ ভাগের একভাগ বা প্রায় ২১ শতাংশই হয় পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি দিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি সংঘর্ষ চীনকেও তার গণতন্ত্র বিরোধী ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা জোরদারে এবং রাশিয়াকে ইউক্রেনে আগ্রাসনের ন্যায্যতা দিতে সহায়তা করবে।

তার চেয়েও বেশি, এটি হবে নেতানিয়াহুর জন্য একটি উপহার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সামরিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে নেতানিয়াহুর প্রধান নীতি হলো অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।

ইরানে আক্রমণ করলে পশ্চিমাদের নিরাপত্তা বজায় রাখা ও মোল্লাদের আচরণ পরিবর্তনের মৌলিক দুই লক্ষ্যও অর্জিত হবে না। এতে কোনও কাজই হবে না। বরং ইরানের ওপর আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের প্রতিই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা স্বার্থের ওপর হামলা আরও বাড়বে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠনগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

ফলে একটা বিষয় নিশ্চিত— মধ্যপ্রাচ্যের এই বিধ্বংসী বোমার বিস্ফোরণ কারও জন্যই উপকার বয়ে আনবে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত