ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই জানালেন অদ্ভুত এক আবদার; তা হলো- গাজা তার চাই। ফিলিস্তিনিদের এই ভূখণ্ড নিয়ে নিজের পরিকল্পনাও ধনকুবের এই আবাসন ব্যবসায়ী তুলে ধরলেন। ভূমধ্যসাগর তীরের গাজাকে প্রমোদ নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে চান তিনি।
তার ওই পরিকল্পনা শুনে ফিলিস্তিনিরা তো বটেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তুলেছিল আপত্তি। তাতে বিষয়টি চাপা পড়ে গেলেও আসলে যে চাপা পড়েনি, তা জানা গেল এপির এক প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, গাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এখনও বহাল আছে। তাদের আফ্রিকার সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ধরে কাজ চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
এই লক্ষ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। দেশগুলো হলো- সুদান, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ড। সোমালিয়ার একটি অংশ নিয়ে গড়ে ওঠা সোমালিল্যান্ড এখনও দেশ হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।
বর্তমানে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ভেতর যে দুটি অংশ নিয়ে ফিলিস্তিন, তার পশ্চিম অংশটি হলো গাজা। ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত গাজায় মানুষের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। এর ৯৯ শতাংশই মুসলমান।
বৃহৎ অংশ পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গাজার নিয়ন্ত্রণকর্তা চরমপন্থি দল হামাস। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি অভিযানে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গাজা।
যুদ্ধবিরতির পর যখন গাজার বাসিন্দারা স্বভূমে ফিরতে শুরু করে, ঠিক তখনই গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে নিজের গাজা পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প।
আবাসন ব্যবসা দিয়ে ধনকুবের হয়ে ওঠা ট্রাম্প বলেন, গাজাকে ‘মিডল ইস্ট রিভেইরা’ হিসাবে গড়ে তুলতে চান তিনি। অর্থাৎ স্পেন ও ফ্রান্সের সাগরতটের নগরগুলোর মতো চাকচিক্যময় শহর হবে সেখানে। নতুন নতুন ভবন উঠবে সেখানে। গাজা হবে বিশ্ববাসীর শহর।
তার সেই পরিকল্পনা ধরেই গাজাবাসীকে সরিয়ে নেওয়ার স্থান খুঁজতে শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা, আর তা চলছে অন্যন্ত গোপনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই দেশের একাধিক কর্মকর্তাই এপির কাছে এই তথ্য স্বীকার করেছে। সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কথা উভয় দেশের কর্মকর্তারাই বলেছেন। তার সঙ্গে সুদানের কথা বলেছেন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
এটা কেবল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শুরু। তা কতটা এগিয়েছে, সেই বিষয়ে কোনও দেশের কর্মকর্তারাই স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি।
ঘটনা কত দূর গড়িয়েছে, তা জানতে আফ্রিকার দেশ তিনটির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল এপি।
তার মধ্যে সুদানের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এমন একটি প্রস্তাব পেয়েছিলেন, তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা বিষয়ঠি স্বীকার করতে চাইছেন না। তারা বলছেন, তারা এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।
এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েলের কোনও কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাইছেন না।
তবে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেসেলেল স্মট্রিখ সম্প্রতি বলেন যে গাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে কোথায় নেওয়া যায়, তেমন উপযুক্ত দেশ তারা খুঁজছেন।
গাজার বাসিন্দাদের জায়গা দেওয়ার বিনিময়ে আফ্রিকার দেশগুলোকে অর্থ দেওয়াসহ নানা ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করাই যায়।
যেমন সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা। সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আবদিরহিম মোহামেদ আব্দুল্লাহির কাছে এখন বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সোমালিয়াকে কেন বেছে নেওয়া হলো এবং সোমালিয়াও কেন রাজি হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। কারণ সোমালিয়া রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির দাবিতে বরাবরই সোচ্চার।
এবিষয়ে সংঘাত পর্যবেক্ষক হিসাবে কাজ করে আসা কেনিয়ার আইনজীবী সামবু চেপকরির এপিকে বলেন, “এটা বোঝা সত্যিই কঠিন। বিভিন্ন বিষয়ে অনেকের অবস্থানও বদলেছে। তাই সোমালিয়া কেন, এর ভেতরে লুকানো কোনও বিষয় থাকতে পারে।”
এদিকে ট্রাম্পের গাজার দখল নেওয়ার পরিকল্পনা যে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আগে থেকে সতর্ক করে আসছেন। সেই পরিকল্পনা ধরে এগিয়ে যাওয়ার খবরে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
কাতারের দোহা ইনস্টিটিউট অব গ্র্যজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামের কারমুত আল জাজিরাকে বলেন, গাজার বাসিন্দাদের জোর করে সরিয়ে নেওয়া হবে এমন একটি সীমা অতিক্রম, যা পেরোনো ঠিক হবে না।
এই ধরনের যে কোনও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঠেকানো বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে কেউ যেন না জড়ায়, তার ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
আফ্রিকার যে দেশগুলোকে ভাবা হচ্ছে, সেই দেশগুলো এমনিতেই উপনিবেশিক শাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্তির পরও এখনও দাঁড়াতে পারেনি, তাদের ওখানে ফিলিস্তিনিদের নেওয়া নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি করবে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা