বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা বাদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া এল; এর আগে বিভিন্ন দেশ বিবৃতি-অভিনন্দন জানিয়ে ফেললেও ওয়াশিংটন এই ভোটকে কীভাবে দেখেছে, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কারণ এবারে ভোটের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের নানা পদক্ষেপ, বিশেষ করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ছিল আলোচনায়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের অনেকটাই ফারাক ছিল। সেবার সব দল অংশ নিয়েছিল ভোটে, এবার বিএনপিসহ ডজনখানেক দল ছিল ভোটের বাইরে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের গত বারের বিবৃতির সঙ্গে এবারের বিবৃতিরও ফারাক দেখা গেছে।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের যে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এসেছিল, তা ছিল চার প্যারায় ১৯৬ শব্দে। এবার তিন প্যারায় ১৭১ শব্দে প্রতিক্রিয়া সাজিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
গত বারের বিবৃতির শুরুটা হয়েছিল সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি সামনে এনে ইতিবাচক সুরে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করা কোটি বাংলাদেশির প্রশংসাও করা হয়েছিল।
এবার শুরুটা হয়েছে গণতন্ত্র আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়ে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থনের কথা আগে বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে যে, ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ এর সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতেছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বিরোধীদলের হাজার হাজার সদস্যের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন নানা অনিয়মের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।”
গতবার ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ আসার কথা বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বলেছিল বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানির কথা। এসব কারণে ভোটের উপর আস্থা কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
এবারের বিবৃতিতে সরাসরি বলা হয়েছে, “অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। এটাও দুঃখজনক যে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল না।”
নির্বাচনি সহিংসতা নিয়ে গতবারও উদ্বেগ জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারও নির্বাচন চলাকালে এবং একে কেন্দ্র করে যেসব সহিংসতা ঘটেছে, তার নিন্দা জানিয়েছে।
বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার এসব ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করবে এবং অপরাধীদের যথাযথ জবাবদিহির আওতায় নেবে।”
গতবারের বিবৃতির দ্বিতীয় প্যারায় ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা মাত্রা তুলে ধরে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং গণতন্ত্রের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকছে।
এবারের বিবৃতির শেষ প্যারায় এসেছে সে ধরনের কথা। তবে ভাষা বদলে ইন্দো-প্যাসিফিক মুক্ত রাখার বিষয়ে পারস্পরিক অংশীদারত্ব এগিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মানবাধিকার এবং নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থনের কথাও বলেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা লম্বা সময় ধরে রয়েছে আলোচনায়। ওয়াশিংটন গত বছরের সেপ্টেম্বরে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যারা বাধা হবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবে না।
বাংলাদেশে ভোটের ঠিক আগে সম্প্রতি গুয়েতেমালার জন্য এমন ভিসা নীতি প্রয়োগ করতে দেখা গেছে ওয়াশিংটনকে। দেশটির ৩০০ শতাধিক ব্যক্তির উপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে, যার মধ্যে শতাধিক এমপি রয়েছেন।
তবে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ হয়নি বলে প্রতিক্রিয়া জানালেও বিবৃতিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনও কথা বলা হয়নি।