Beta
শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

‘আপনাদের হাতে খুনের রক্ত’– শুনতে হলো টেক জায়ান্টদের

সেনেট কমিটির শুনানিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীরা। ছবি : এএফপি
সেনেট কমিটির শুনানিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীরা। ছবি : এএফপি
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

[publishpress_authors_box]

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার জন্য এ খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটররা।

বুধবার শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা (সিইও) রীতিমতো তোপের মুখে পড়েন। সিনেটররা “আপনাদের হাতে খুনের রক্ত” বলে প্রধান নির্বাহীদের তিরস্কার করেন। পাশাপাশি অনলাইনে শিশুদের যৌন হয়রানির উপকরণ বন্ধে কংগ্রেসে দ্রুত আইন পাসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শিশুদের নিরাপত্তার চেয়ে তাদের মুনাফার প্রতি বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে অভিভাবক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেট এই শুনানির আয়োজন করে।

শুনানিতে মেটার (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি) সিইও মার্ক জাকারবার্গ, এক্স (সাবেক টুইটার) সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো, স্ন্যাপের সিইও ইভান স্পাইগেল, টিকটকের সিইও শোউ ঝি চিউ ও ডিসকর্ডের সিইও জেসন সিট্রন অংশ নেন।

শুনানির একপর্যায়ে রিপাবলিকান সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে উদ্দেশ করে বলেন, “জাকারবার্গ, আপনি এবং আমাদের সামনে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো, আমি জানি আপনাদের উদ্দেশ্য খারাপ নয়, কিন্তু আপনাদের হাতে রক্ত লেগেছে। আপনাদের এমন একটি পণ্য আছে যা মানুষ হত্যা করছে।”

সিনেট বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাটিক দলীয় সেনেটর ডিক ডারবিন শুনানিতে অলাভজনক সংস্থা ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লোইটেড চিলড্রেন’-এর উপাত্তের বরাত দেন, যেখানে বলা হয়, যৌনতাকে পুঁজি করে অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয় ব্যাপক বাড়ছে, যেখানে অর্থলোভীরা কৌশলে শিশুদের কাছে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে তা তাদের দেখতে বাধ্য করে।

শুনানিতে ডারবিন বলেন, “শিশুদের যৌন নির্যাতনের এই চিত্র উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধির মূল কারণ একটিই, আর তা হলো প্রযুক্তির পরিবর্তন।”

শুনানির শুরুতে সেনেট কমিটি একটি ভিডিও প্রদর্শন করে, যেখানে শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। ভিডিওতে পরিচয় গোপন রাখা একটি শিশুকে বলতে শোনা যায়, “ফেসবুকে আমি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছি।”

শুনানিতে উপস্থিত অনেক বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানায়। জাকারবার্গের উদ্বোধনী বক্তব্যের সময় কয়েকজন বাবা-মা তাকে তিরস্কার করেন। এছাড়া শুনানি চলাকালেও বিভিন্ন সময়ে চিৎকার করে তাদের বিভিন্ন মন্তব্য করতে শোনা যায়।

এক পর্যায়ে সেনেটর জোশ হাওলি জাকারবার্গকে সরাসরি ক্ষমা চাইতে বলেন। তখন জুকারবার্গ ঘুরে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে গেলে বেশ কয়েকজন আবারও হাতে থাকা শিশুদের ছবি উঁচিয়ে ধরেন।

জাকারবার্গ এ সময় বিরূপ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাওয়ায় তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং তাদের মতো আর কাউকে যাতে এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।

শুনানির এক পর্যায়ে সিনেট কমিটি নীতিমালা বিষয়ক মেটার শীর্ষ কর্মকর্তার একটি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে জাকারবার্গের ইমেলের কপি প্রদর্শন করে, যেখানে সুরক্ষা বাড়াতে ৪৫ থেকে ৮৪ জন প্রকৌশলী নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছিল।

শুনানিতে সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের এক প্রশ্নের জবাবে টিকটকের সিইও জানান, তার কোম্পানি আস্থা ও সুরক্ষা প্রচেষ্টার পেছনে ২০০ কোটি ডলার খরচ করে। তবে এই অর্থ কোম্পানিটির মোট আয়ের কত শতাংশ তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

রিপাবলিকান আরেক সেনেটর টেড ক্রুজ ইনস্টাগ্রামে ভিডিও বা ছবি প্রদর্শনের আগে সতর্কবার্তার কথা উল্লেখ করে বলেন, সতর্কবার্তায় শিশুকে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু তারপরও সেই ছবি বা ভিডিও দেখার সুযোগ দেওয়া হয়। এর জন্য তিনি কড়া ভাষায় জাকারবার্গের সমালোচনা করেন।

জবাবে জাকারবার্গ বলেন, এ ধরনের কনটেন্ট ব্লক করার পরিবর্তে ব্যবহারকারীকে এ সংক্রান্ত উপকারী তথ্য প্রদর্শনের বিষয়টিকেই এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আগামী সতর্কবার্তায় আরও তথ্য সংযুক্ত করার কথাও বলেন তিনি।

ডেমোক্রেটিক সেনেটর অ্যামি ক্লোবুচার গত মাসের শুরুতে বোয়িংয়ের একটি উড়োজাহাজের দরজা ভেঙে পড়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “কয়েক সপ্তাহ আগে যখন বোয়িংয়ের একটি উড়োজাহাজের দরজা ভেঙে পড়ল, তখন ওই মডেলের সব উড়োজাহাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তাহলে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোর বিপদের বিষয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কেন নিতে পারছি না, যখন আমরা জানি যে, এগুলো শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে?”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত