Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

শেখ হাসিনার পতনের পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের কী অবস্থান

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আনন্দ প্রকাশে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে গণভবনের একটি টাওয়ারে উঠেছেন কয়েকজন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আনন্দ প্রকাশে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে গণভবনের একটি টাওয়ারে উঠেছেন কয়েকজন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা যাই হোক না কেন, তা যেন বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছায় হয়, তাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এলে ওয়াশিংটনের অবস্থান প্রকাশ করেন এই বিভাগের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

বাংলাদেশে সেনাবাহিনী বিক্ষোভরত জনতার ওপর গুলি চালাতে অসম্মতি জানানোর খবর পেয়েছেন জানিয়ে তার প্রশংসা করেন তিনি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে নামা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক দফায় রূপ নেওয়ার পর ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে সোমবারই পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়ে সোমবার বিকালে বলেন, এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে।

পরে মধ্যরাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই কথা জানান। এই সরকারের রূপরেখা এখনও স্পষ্ট না হলেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছে।

সরকারশূন্য এই অবস্থায় বাংলাদেশে যে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়েছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কী অবস্থান নিচ্ছে, তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয় মিলারকে।

তিনি শুরুতেই গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশজুড়ে চলা সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

মিলার বলেন, “আমরা এখন গুরুত্ব দিচ্ছি সহিংসতা বন্ধ করার ওপর, জবাবদিহি ফিরিয়ে আনার ওপর। আর অন্তর্বর্তী সরকার হল তা যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়, আইনের শাসন যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে চাইবে, সেভাবে যেন হয়।”

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করুক যে তাদের দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে।”

ম্যাথিউ মিলার।

বাংলাদেশে পরিবর্তিত অবস্থায় সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্র কী চোখে দেখছে- জানতে চাওয়া হলে মিলার বলেন, “আমরা বিভিন্ন রিপোর্টে দেখেছি যে জনতার বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনীকে বলা হলেও তারা সেটা করেনি। এটা যদি সত্য হয়, তা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক খবর।

“গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা বলে আসছিলাম যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার জনগণের রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই খবরটি একটি ভালো অগ্রগতি। তবে শেষ বিচারে আমরা চাইব, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের মানুষই যেন তাদের সরকার গঠন করে।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীকে নামিয়েছিল সরকার, তার দায় বর্তমান সামরিক বাহিনীর প্রধানরা এড়াতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল মিলারকে।

জবাবে তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে সহিংসতায় মৃত্যুর যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং দায়ীদের যেন শাস্তি হয়।

দেশ ছাড়ার পর শেখ হাসিনা গেছেন ভারতে। তিনি যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা কোনও দেশে আশ্রয় পেতে চাইছেন বলে খবর এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে মিলার বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর তারা শুনেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানেন না।

“আমরা বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা শুনেছি যে তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে হয়েছে, তা এখনও আমরা জানি না।”

শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্রে তার আশ্রয় পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এমন কোনও অনুরোধ পাওয়ার কথা তাদের জানা নেই।

শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা গিয়েছিল। গত বছর শেখ হাসিনা এমনও বলেছিলেন যে ‍যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়।

বাংলাদেশের পাশে একটি একটি ‘খ্রিস্টান রাষ্ট্র’ তৈরির ষড়যন্ত্র চলছে বলেও সম্প্রতি দাবি করেছিলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মিলার জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। এই প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের কথা বলেন তিনি।

মিলার বলেন, শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশকে ২১ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে।

এমন সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দেয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত