Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ট্রাম্পের পক্ষে আদালতের আদেশ ‘অশুভ সংকেত’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলীয় প্রার্থী হতে আইনি বাধা দূর হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলীয় প্রার্থী হতে আইনি বাধা দূর হলো।
[publishpress_authors_box]

রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অংশ নিতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছিল দেশটির কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট।

তাদের যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রার্থিতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়াতে পারেন না।

সেই সংশোধনীর একটি ধারায় বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে কেউ যদি অভ্যুত্থান বা বিদ্রোহ করে, তবে তিনি সরকারি কোনও দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।     

কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের গত বছরের ডিসেম্বরের আদেশে বলা বলেছিল, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের প্ররোচনায় যে সহিংসতা হয়েছিল, তা সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী অনুযায়ী তার পরবর্তী নির্বাচনের প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়।          

অঙ্গরাজ্যটির ওই সিদ্ধান্ত সোমবার খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। তাদের মতে, কলোরাডো রাজ্য ট্রাম্পকে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিযোগিতা থেকে সরাতে পারে না।

স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশকে বিজয় হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প। তবে তার সমালোচকরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ জবাবদিহিতার সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানবে।                             

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা এই আদেশে অবাক হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে ট্রাম্পের অংশ নেওয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে তারা স্বাভাবিক মনে করছেন।

তবে তাদের উদ্বেগ অন্য জায়গায়।       

যুক্তরাষ্ট্রের সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক টমাস কেক আল জাজিরাকে বলেছেন, “কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের মামলা দীর্ঘদিন ধরে কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট এই অঙ্গরাজ্যের রায়কে খারিজ করেছে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই।

“তবে ট্রাম্পের পক্ষে আদেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিল। প্রশ্নটি হচ্ছে, দেশের গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ সেক্ষেত্রে কী হবে?”

এই অধ্যাপক আরও বলেন, “ক্যাপিটল হিলে হামলার তিন বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বলতে গেলে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অশুভ সংকেত।”             

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ওই মামলার মধ্য দিয়ে তিনি রাজনৈতিক ও আইনিভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হন, যার উদ্দেশ্য ছিল তার পুনরায় নির্বাচনে দাঁড়ানো বাধাগ্রস্ত করা। 

ট্রাম্পের মতো তার দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারাও সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশে উচ্ছ্বসিত।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিটিজেনস ফর রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটনের (সিআরইডব্লিউ) সহায়তায় কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ছয় জন ভোটার ট্রাম্পের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।

আবেদনে তারা বলেছিলেন, ক্যাপিটল হিলে ২০২১ সালের দাঙ্গায় সাবেক প্রেসিডেন্টের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।

কলোরাডোর আদালত তাদের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে দুই মাস পর ডিসেম্বরে ট্রাম্পের বিপক্ষে আদেশ দেয়, যাতে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী ট্রাম্প তার দলের প্রার্থী মনোনয়নের লড়াইয়ে দাঁড়ানার যোগ্যতা রাখেন না।    

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।

কলোরাডো আদালতের ওই আদেশের বিপক্ষে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ছয় বিচারকের সিদ্ধান্ত আসে। এদের তিনজন রক্ষণশীল ঘরানার, বাকিরা বামঘেঁষা।

আদেশে তারা প্রত্যেকেই বলেন, কোনও অঙ্গরাজ্য কেবল তার অভ্যন্তরীণ কোনও সরকারি পদে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করার এখতিয়ার রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদ ভিন্ন বিষয়। সেই পদে কেউ দাঁড়াতে চাইলে তা ঠেকানো অধিকার অঙ্গরাজ্যের নেই।

ওই ছয় বিচারক বলেন, সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর তিন নম্বর ধারা প্রয়োগ করার ক্ষমতাও কোনও অঙ্গরাজ্যের নেই। 

এই আদেশকে ‘অত্যন্ত বিস্ময়কর’ হিসেবে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া ল স্কুলের সেন্টার ফর এথিকস অ্যান্ড দ্য রুল অব ল-এর পরিচালক ক্লেয়ার ফিনকেনস্টেইন।     

তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি মেনে নেওয়া হলে সেক্ষেত্রে দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হনও কোর্ট তাকে প্রার্থিতা বাছাইয়ের লড়াইয়ে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারবে না।” 

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নেতাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে এক ধরনের দায়মুক্তি দিয়েছে বলে মনে করেন  সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক টমাস কেক।

তিনি এই ঘটনার সঙ্গে ব্রাজিলের সাবেক কট্টর ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর তুলনা করেন। ২০২২ সালে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এক অভ্যুত্থানচেষ্টায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

বলসোনারোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে ব্রাজিলের আদালত। তারা বলেছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত সরকারি কোনও দায়িত্বে থাকতে পারবেন না বলসোনারো।   

কেক বলেন, “ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের দেশের ঘটনার তুলনা করলে বিষয়টা পরিষ্কার বোঝা যাবে।

“ব্রাজিল যখন দেখল তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও পদ ছাড়তে চাইছেন না এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই পদ ধরে রাখতে চাইছেন, তখন তারা এত বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পিছপা হলো না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত