সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
তিন বছর আগে ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধ করতে সৌদি আরবকে চাপ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এরপর ২০২২ সালে সৌদি আরব ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য কিছু অস্ত্র সৌদি আরবের কাছে বিক্রির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। প্রচলিত অস্ত্র হস্তান্তর নীতি অনুযায়ী ধাপে ধাপে এসব অস্ত্র সৌদি আরবকে দেওয়া হবে।
পাঁচটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রথম এই সিদ্ধান্তের খবর দিয়েছে। শুক্রবারের আগেই এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টকে জানায়।
সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রি আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হতে পারে। শুক্রবার বিকাল থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাইডেন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরানের সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতিরাও ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে। এ ছাড়া ইরাক-সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোও সেই হামলায় যোগ দিতে পারে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া গত ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন। ইরান ও হামাস এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর জোট ওআইসি ইরানকে ইসরায়েলে হামলা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে ইসরায়েলে হামলা না চালানোর আহ্বান জানায়।
কিন্তু গতকাল শুক্রবারও ইরান ইসরায়েলে হামলার ইঙ্গিত দেয়। শুক্রবার ইরানের ইসলমি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানায়, ইসরায়েলকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারাও ইসরায়েলকে রক্ষায় প্রস্তুত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, “ইসরায়েলকে রক্ষা করতে আমরা সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত। এই ধরনের কোনও হুমকি শুনলে আমরা সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গেই নেই।”
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী গত সপ্তাহেই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমানসহ অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল। আর এবার সৌদি আরবের কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি ভাবা শুরু করে।
এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র একটি বিস্তৃত চুক্তির অংশ হিসেবে সৌদিদের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি নিয়েও আলোচনা করছিল। বিনিময়ে সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হবে। কিন্তু গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেই চুক্তি থমকে গেছে। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বেধে গেলে সেই চুক্তিও হতে পারে।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা