Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

যে কারণে আমিরাতকে টপকে রেমিটেন্সের শীর্ষ উৎস এখন যুক্তরাষ্ট্র

SS-US-dollars-120824
[publishpress_authors_box]

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। আর এতে ‘চমক’ দেখাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮৯৩ কোটি ৭১ লাখ (৮.৯৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।

আর রেমিটেন্সের এই উল্লম্ফনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা; দেশটি থেকে জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৪১ কোটি ৮৩ লাখ (১.৪২ বিলিয়ন) এসেছে, যা মোট রেমিটেন্সের ১৬ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১০৪ শতাংশ।

এর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে রেমিটেন্স আহরণে হঠাৎ করেই শীর্ষ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের চেয়ে অনেক কম বাংলাদেশি অবস্থান করেন যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার রেমিটেন্স প্রবাহের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে আরব আমিরাত থেকে এসেছে ১৩৬ কোটি ৫৮ লাখ (১.৩৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স। সৌদি আরব থেকে এসেছে ১১৭ কোটি ৬১ লাখ (১.১৭ বিলিয়ন) ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৮১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৭৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা শুরু হয় বাংলাদেশে। ওই বছরে ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই রেমিটেন্স দুই হাজার গুণের বেশি বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

গত অর্থবছরের আগে পঞ্চাশ বছরে প্রতিবারই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদিকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।

শুধু তাই নয়, রেমিটেন্স আহরণের তালিকায় সৌদি আরব নেমে যায় চতুর্থ স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র; তৃতীয় স্থানে যুক্তরাজ্য।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদি আরবের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রেমিটেন্স আসে আমিরাত থেকে। ওই অর্থবছরে সৌদি থেকে ২৭৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার আসে। আমিরাত থেকে আসে ৪৬০ কোটি ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার এসেছিল।

এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সময়ে সৌদি আরব থেকে ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার এসেছিল। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ কম, ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৩৫২ কোটি ২০ লাখ ও ২০৮ কোটি ৪ লাখ ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিসাবেও সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল আরব আমিরাত থেকে; ১০৩ কোটি ২২ লাখ (১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন) ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯২ কোটি ৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। সৌদি আরব থেকে আসে ৮৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। এই মাসে দেশটিতে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৫০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বাড়ার কারণ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স কেন বাড়ছে– এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রথমত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছিল; মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশটির মানুষের পাশাপাশি সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদেরও খরচ বেড়েছিল। সে কারণে সেখানকার প্রবাসীরা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে কম টাকা পাঠিয়েছিলেন।

“এখন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়েছে; ২ শতাংশে নেমেছে। অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। তাই এখন আমাদের প্রবাসীরা বেশি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন।”

এ ছাড়া আরও কিছু কারণ আছে জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “মূল্যস্ফীতি কমাতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র এক ধাপে নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়েছে। এর আগেও কয়েক দফা বাড়িয়েছিল। এর বিপরীতে বাংলাদেশে সুদহার বাড়ছে।

“আবার বৈদেশিক মুদ্রায় সঞ্চয়ের বিভিন্ন নীতিমালা সহজ হয়েছে। আবার সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য, সরকার পরিবর্তনের পর হুন্ডি কমাসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে।”

মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের ভালো অর্থনৈতিক অবস্থাও দেশটি থেকে রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা পেশাগতভাবে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছেন। ফলে তাদের উপার্জনও হয় বেশি। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা দেশে টাকা পাঠান, তারা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারেন। তাদের অনেকেই আবার বন্ডে বিনিয়োগ করেন।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রেমিটেন্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরেছে। বেশ কিছু দিন ডলারের দর স্থিতিশীল আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি হচ্ছে।”

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বৃদ্ধির নানা কারণ থাকতে পারে। তবে একটি কারণ হলো– যে দেশের এক্সচেঞ্জ হাউস রেমিট্যান্স কেনে, সাধারণত ওই দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে আসে। ফলে ঢালাওভাবে বলা যাবে না, এর সবই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে।”

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, দেড় কোটি প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ লাখ আছেন সৌদি আরবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে ১০ লাখের মতো। আর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন ৪ লাখ প্রবাসী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত