Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

হুমকিতে টিকাদান, হারানো রোগগুলোর ফিরে আসার শঙ্কা

vaccination-africa-unicef-1
[publishpress_authors_box]

এপ্রিলের ২০ থেকে ৩০ তারিখ; পালিত হয় বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ।

গত পাঁচ দশকে নানা টিকা ১৫ কোটির বেশি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন হ্রাস এই গুরুত্বপূর্ণ অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলেছে, বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস।

এবার টিকাদান সপ্তাহ উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) বলছে, অর্থায়ন সঙ্কটের পাশাপাশি ভুল তথ্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মানবিক সংকটে বিশ্বজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে এবং এতে কোটি কোটি শিশু, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এই কারণে পৃথিবী থেকে প্রায় নির্মূল হয়ে যাওয়া রোগগুলোও ফিরে আসার শঙ্কার কথাও তারা বলেছেন বৃহস্পতিবার দেওয়া এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সেখানে বলা হয়েছে, হাম, মেনিনজাইটিস, ইয়েলো ফিভারের মতো টিকা-প্রতিরোধযোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। এমনকি ডিপথেরিয়ার মতো বহু আগে নিয়ন্ত্রণে আসা বা অনেক দেশ থেকে প্রায় নির্মূল হওয়া রোগগুলোও ফিরে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক গেব্রেয়াসুস বলেন, “টিকা-প্রতিরোধযোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, যা জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে এবং দেশগুলোকে চিকিৎসা ও প্রতিক্রিয়ায় বিপুল ব্যয়ে ঠেলে দিচ্ছে।”

চাপের মুখে স্বাস্থ্যব্যবস্থা

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষভাবে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনকভাবে ফিরে আসার কথা বলা হয়।

২০২১ সাল থেকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতি বছর বেড়ে চলেছে, যা কোভিড-১৯ মহামারির সময় ও পরবর্তী সময়ে টিকাদান হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৩ সালে হাম আক্রান্তের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১ কোটি ৩ লাখ, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

২০২৪ ও ২০২৫ সালেও এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে, কারণ বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব আরও বেড়েছে। গত এক বছরে ১৩৮টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে ৬১টি দেশে বড় প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে, যা ২০১৯ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।

আফ্রিকায় মেনিনজাইটিস রোগও ২০২৪ সালে ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং এই ঊর্ধ্বগতি ২০২৫ সালেও চলছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ২২টি দেশে ৫ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন রোগী এবং প্রায় ৩০০ রোগীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। যেখানে আগের বছর অর্থ্যাৎ ২০২৩ সালে ২৪টি দেশে প্রায় ২৬ হাজার রোগী রোগী শনাক্ত এবং ১ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

আফ্রিকায় ইয়েলো ফিভার রোগ সংক্রমণেরও ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে ১২টি দেশে ১২৪ রোগী ধরার পড়েছে। অথচ গত দশকে টিকা কার্যক্রমের কারণে রোগটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল।

আফ্রিকার পাশাপাশি আমেরিকায়ও ২০২৫ সালের শুরু থেকে ইয়েলো ফিভারের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলে ১৩১ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও গ্যাভির বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রাদুর্ভাবগুলো ঘটছে এমন এক সময়ে, যখন বৈশ্বিক অর্থায়ন সঙ্কট চলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, গ্যাভি জানাচ্ছে, প্রতি বছর ৪২ লাখ প্রাণ রক্ষা পায় ১৪টি রোগের বিরুদ্ধে টিকা দিয়ে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০৮টি দেশে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের (বেশিরভাগই নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ) প্রায় অর্ধেকই টিকাদান কর্মসূচি, নিয়মিত টিকাদান ও সরবরাহ ব্যবস্থায় মাঝারি থেকে গুরুতর ব্যাঘাতের মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোগ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও।

অন্যদিকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টিকাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে বলা হয়, ২০২৩ সালে আনুমানিক ১ কোটি ৪৫ লাখ শিশু নিয়মিত টিকা একটিও পায়নি, যা ২০২২ সালে ছিল ১ কোটি ৩৯ লাখ এবং ২০১৯ সালে ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ।

এই শিশুদের অর্ধেকের বেশি এমন দেশগুলোতে বাস করে, যেখানে সংঘাত, অস্থিতিশীলতা বা সংকট বিদ্যমান এবং যেখানে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানান, অর্থায়ন সঙ্কটের কারণে তারা প্রায় দেড় কোটি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে হাম প্রতিরোধী টিকা দিতে পারছেন না।

প্রায় ৫০টি দেশে টিকাদান সেবা, রোগ নজরদারি এবং প্রাদুর্ভাব প্রতিক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কথা বলেন তিনি, যেমনটা দেখা গিয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারির সময়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত