এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। রাজস্থান-লখনউ ম্যাচে ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশীর অভিষেকটা এমনই। প্রথম বলেই মেরেছেন ছক্কা। আবার আউট হওয়ার পর আটকে রাখতে পারেননি চোখের পানি।
গুগল-এর সিইও সুন্দর পিচাই কেবল সূর্যবংশীর অভিষেক ম্যাচ দেখার জন্য ঘুম থেকে ওঠেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘অষ্টম শ্রেণির বাচ্চার আইপিএল ম্যাচ দেখার জন্য ঘুম থেকে উঠেছি। কী দুর্দান্ত অভিষেক!’’
১৪ বছর ২৩ দিন বয়সী বৈভব সূর্যবংশী অভিষেকেই গড়েছেন ইতিহাস। এত কম বয়সে আইপিএলে অভিষেক হয়নি কারও। আইপিএল চালু হওয়ার পর জন্ম নেওয়া প্রথম খেলোয়াড় হিসেবেও টুর্নামেন্টেটিতে খেলার ইতিহাস গড়েছেন তিনি। আইপিএল ২০০৮ সালে শুলু হলেও সূর্যবংশীর জন্ম ২০১১ সালে।
শার্দূল ঠাকুরের মতো পোড়খাওয়া বোলারের প্রথম বলেই কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে শুরু বৈভবের। আইপিএলে সবচেয়ে কম বয়সে ছক্কা মারার রেকর্ডও এখন তারই। আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই ছক্কা—এটিও রেকর্ড। তবে এ রেকর্ডে তার সঙ্গী অস্ট্রেলিয়ার রব কুইনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেভন কুপার, আন্দ্রে রাসেল, জাভোন সিয়ারলেস ও কার্লোস ব্রাফেট, ভারতের অনিকেত চৌধুরী, সিদ্ধেশ লাড ও সামির রিজভী ও শ্রীলঙ্কার মহীশ থিকশানা।
পরের ওভারে আবেশ খানের বলে আরও একটা ছক্কা। এটা সোজা বোলারের মাথার উপর দিয়ে। প্রথম চার বলেই তার জোড়া ছক্কা ঘোষণা করে দিল, ভারতীয় ক্রিকেটের ‘বৈভব’ হয়ে ওঠার সব গুণ তার মধ্যে রয়েছে।
পেসার, স্পিনার সবার বিপক্ষে শট খেলে আউট হয়েছেন ২০ বলে ৩৪ করে। রাজস্থান অবশ্য ২ রানে হেরেছে ম্যাচটা। লখনউয়ের ১৮০ রানের জবাবে ৫ উইকেটে ১৭৮ রানে থামে তারা। তবে জয় পরাজয় ছাপিয়ে এই ম্যাচে আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন ১৪ বছরের বৈভব।
বিহারের তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা বৈভব চার বছর বয়সে বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীর কাছে ক্রিকেট শেখা শুরু করেন। বাড়ির পিছনে ছোট একটু জায়গা পরিষ্কার করে ছেলেকে ক্রিকেট শেখাতে শুরু করেছিলেন তার কৃষক বাবা।
৯ বছর বয়সে সমস্তিপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয় বৈভব। সেখানে আড়াই বছর শেখার পর বিজয় মার্চেন্ট ট্রফির জন্য ট্রায়ালে যায় বৈভব। ভাল পারফর্ম করলেও কম বয়সের কথা ভেবে তাকে স্ট্যান্ড বাই রেখেছিলেন বিহারের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের নির্বাচকেরা। সেখানেই চোখে পড়ে যান প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার মণীশ ওঝার। তার পর থেকে তিনিই বৈভবের কোচ।
১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিডল অর্ডার ব্যাটার বৈভবের। ২১১ দিনের জন্য রেকর্ড হয়নি তার। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সব থেকে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে আলিমুদ্দিনের। গত ১ অক্টোবর বেসরকারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে আলোচনায় উঠে আসে ১৩ বছরের বৈভব। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম সেঞ্চুরি।
আইপিএল নিলামে তার ন্যূনতম দাম ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিলামের সঞ্চালিকা মল্লিকা সাগর বৈভবের নাম ঘোষণা করতেই আগ্রহ দেখান দিল্লি । তবে ভবিষ্যতের লগ্নি হিসাবে এগিয়ে যান রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। তারা ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দাম দিতে লড়াই থেকে সরে যায় দিল্লি। সেই বৈভব মাতালেন অভিষেকেই।
