Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

মেট্রোরেলের ক্ষতির অঙ্ক মেলাতে ‘সময় লাগছে’

ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

আট বছর ধরে সাজানো-গোছানো হয়েছিল স্বপ্নের মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন। দিন ছয়েক আগেও এই স্টেশন দিয়ে ট্রেনে চড়ে মতিঝিল বা উত্তরায় ‍নির্বিঘ্নে চলাচল করত হাজার হাজার মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মুখর থাকত এই স্টেশন। তবে এখন সেখানে দিনের বেলায়ও থাকছে সুনশান নীরবতা।

সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই শুক্রবার মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা চালানো হয়। রাতভর চলে লুটপাট। স্টেশনটির এমন কোনও জায়গা নেই যে, সেখানে তাণ্ডব চলেনি।

একই দিন কাছাকাছি সময়ে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনেও হামলা হয়। হামলায় দুই স্টেশনে আসলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার অঙ্ক মেলাতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, ১৯ জুলাইয়ের হামলায় মেট্রোরেলের এই দুই স্টেশনের মধ্যে ক্ষতি বেশি হয়েছে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে। এর পুরোপুরি হিসাব পেতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে।

মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু করতে এক বছরের বেশি সময়ও লাগতে পারে বলে মনে করছেন ডিএমটিসিএল এমডি।

ডিএমটিসিএলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনের সিভিল, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল- সব সেক্টরেই ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাজীপাড়া স্টেশনে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির আনুমানিক ধারণা পাওয়া গেছে। মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকার মতো হতে পারে।

ডিএমটিসিএল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে ‘বেশ প্রস্তুতি নিয়ে’ হামলা চালানো হয়। হামলার শুরুটা হয় ১৭ জুলাই বুধবার দুপুর থেকেই।

মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনের আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা সকাল সন্ধ্যাকে জানান, কোটা বাতিল দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ১৭ জুলাই দুপুরে প্রথম গোলচত্বর অবরোধ করেন। সন্ধ্যার আগে তারা চলে গেলেও সেখানে অসংখ্য অছাত্র ও বয়স্ক মানুষ অবস্থান নেয়। রাতে মেট্রোরেল স্টেশনের গেটগুলো ভাঙ্গার চেষ্টা চলে। পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরে তাদের সরিয়ে দেয়।

পরদিন ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও বেলা ১১টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করা হয়।

এদিনের অবরোধ, আন্দোলনে যারা ছিলেন তারা কেউই শিক্ষার্থী নন। তাদের অনেকে মাথায় গামছা বেঁধে, মুখে সাদা ক্রিম মেখে ও মাস্ক পরে লাঠি-রড নিয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নেন।

ভাঙচুরের শিকার হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ভাঙচুরের শিকার হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

কিছুক্ষণ পরপর পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকালে মিরপুর মেট্রোরেল স্টেশন এলাকা বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তখন স্টেশনটির গেইট ভাঙা শুরু হয়। এরই মাঝে মেট্রোরেল চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ডিএমটিসিএল। রাত ১১টার দিকে পুলিশ স্টেশন এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।

শুক্রবার ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর পুরো ১০ নম্বর গোলচত্বর ঘিরে ফেলা হয়। এতে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের মধ্যে কোনও শিক্ষার্থী ছিলেন না।

জুমার নামাজের পর কয়েক দফায় স্টেশনের গেইট ভাঙার কাজ জোরেশোরে শুরু হয়। বিকাল নাগাদ স্টেশনের সব প্রান্তের গেইট ভাঙা হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে দোতলায় উঠে স্টেশনের গ্লাস ভাঙতে শুরু করেন। এরপর একে একে টিকিট কাউন্টার, কার্ড কালেকশন মেশিন ও কার্ড পাঞ্চিং মেশিন, ডিসপ্লে মনিটর, কম্পিউটারসহ সামনে যা পড়েছে, সবই ভাঙচুর করেন তারা।

এদের কয়েকটি দল স্টেশনের পাশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে ঢুকে ৩০টি ট্রাকে আগুন দেয়। এসময় মিরপুর-১০ নম্বরে ছিল কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ। তাদেরহামলার কারণে রাস্তার পশ্চিম পাশে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণকারী গাড়িগুলো থাকলেও ঘটনাস্থলে আসতে পারেনি।

সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনের ভেতরে চলে লুটপাট। স্টেশনের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকলেও মোবাইলের লাইট ও টর্চ লাইট জ্বালিয়ে এই লুটপাট চালানো হয়। স্টেশনের বড় মনিটর, কম্পিউটার, চেয়ার, লাইট, ফ্যান, এসিসহ যে যা পেয়েছে, সবই লুট করেছে। লুণ্ঠিত মালামালের বেশিরভাগ মিরপুর-১০ নম্বর বাজার, বিহারী ক্যাম্প, মিরপুর-১৩ নম্বরের দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

দুই স্টেশনের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে ডিএমটিসিএল এমডি এম এ এন ছিদ্দিক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে প্রায় একই সময় হামলা হয়। তবে মিরপুর-১০ স্টেশনের দুই প্রান্ত থেকেই হামলা হয়। পুরো স্টেশন তছনছ করা হয়েছে। স্টেশনের অতি মূল্যবান সরঞ্জাম লুট করা হয়। বর্বর হামলার দিন কয়েক পেরিয়ে গেলেও টাকার অঙ্কের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “দুই স্টেশনের এমন সব মূল্যবান সরঞ্জাম ভাংচুর করা হয়েছে, যেগুলো বিদেশ থেকে নতুন করে আনতে হলে অর্ডার দিতে হবে। এটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ন্যূনতম এক বছরের আগে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা যাবে না। এর বেশি সময়ও লাগতে পারে।”

গত ১৯ জুলাইয়ের হামলার পরদিন ২০ জুলাই ডিএমটিসিএলের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাকারিয়াকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত