Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

কী এই ‘ভেগানুয়ারি’ চ্যালেঞ্জ, যা বদলে দিচ্ছে মানুষের খাওয়ার সংস্কৃতি

veganuary-is-new-emerging-trend
[publishpress_authors_box]

মাছ-মাংসের দামের ঊর্ধ্বগতিতে এক মাস কেন, বছরের পর বছরও দারিদ্রসীমায় থাকা মানুষ এসবের স্বাদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতেই পারেন। তবে টাকা খরচ করতে হচ্ছে না, এমন কোনও উপলক্ষ পেলে তারা হয়তো আর মাছ-মাসের স্বাদ নেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন না। অর্থের অভাবে মাছ-মাংস না খাওয়া এক কথা, আর সংযমের জন্য এগুলো এড়ানো আরেক ব্যাপার। 

এসব আলাপের মাঝে পশ্চিমে খুব জনপ্রিয় হয়েছে ‘ভেগানুয়ারি’ ট্রেন্ড।

‘ভেগানুয়ারি’ বা মাছ-মাংসবিহীন কেবল ফল-সবজি ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেয়ে জানুয়ারি মাসটির উৎযাপন শুধু অর্থ সংকটের কারণে মাছ-মাংস না খেতে পারাদের নিয়ে নয়, বরং যারা মাছ-মাংস প্রিয় এবং নিত্যদিনের আহারে প্রাণিজাত আমিষ ছাড়া খাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারেন না, তাদেরকে নিয়েই।  

সম্প্রতি ব্রিটিশ গার্ডিয়ান পত্রিকায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন এসেছে। তাতে বলা হচ্ছে, প্রাণিজ আমিষ গ্রহণকারীরা প্রায়ই জানুয়ারি মাসে ভেগানুয়ারি চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে মানসিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। কেননা তারা মনে করেন, যে এক মাসের জন্য মাংস ছেড়ে দেওয়া তাদের জন্য খুব কঠিন হবে এবং গবেষণায় এ কথার সত্যতাও মিলেছে।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা জানুয়ারি মাসে প্রাণিজ পণ্য থেকে বিরত থাকেন, তাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে মাছ-মাংস খাওয়া নিয়ে অনীহা অনুভব করতে শুরু করেন।

এই গবেষণা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, এক মাসের জন্য মাংস এবং অন্যান্য প্রাণিজ পণ্য এড়ানোর পর অনেকেরই মাংস খাওয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাটালিয়া লরেন্স বলেন, “সাধারণত, ধারণাটি হলো মানুষকে প্রথমে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে শিক্ষিত করা, এবং আশা করা হয় তারা তাদের আচরণও পরিবর্তন করবে। তবে যদি আমরা এক মাসের জন্য তাদের আচরণ পরিবর্তন করতে রাজি করাতে পারি, তখন মনে হয় এই পরিবর্তনগুলি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।”

গবেষণার ফল অনুযায়ী, কিছু লোক ‘ভেগানুয়ারি’ মাস শেষে মাংস খাওয়া কমাতে শুরু করেছে, এমনকি তারা মাংস ছেড়ে দেওয়ার সময় শারীরিক বা মানসিকভাবে কষ্ট অনুভব করেন না।

২০১৪ সালে জেন ল্যান্ড এবং ম্যাথিউ গ্লোভার এর নেতৃত্বে ভেগানুয়ারি ট্রেন্ডটি শুরু হয়েছিল। এই জুটি এর আগের বছর নভেম্বরে ‘মুভেম্বর’ (Movember) নামে একটি সফল প্রচারাভিযান চালান।

তাদের লক্ষ্য ছিল পরের বছর থেকে জানুয়ারি মাসে মানুষদের উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা এক মাসের জন্য মাংস, দুধ, ডিম এবং অন্যান্য প্রাণিজ পণ্য এড়িয়ে চলেন। প্রথম বছর থেকেই এটি ব্যাপক সাড়া ফেলতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

ভেগানুয়ারির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানোর ধারণা আরো দৃঢ় হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, পরিবেশের ওপর প্রাণীজ খাদ্য উৎপাদনের প্রভাব এবং প্রাণী কল্যাণ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে অনেকেই ‘ভেগান’ জীবনযাপন শুরু করেছেন। তৃতীয়ত, ভেগানুয়ারি প্রতি বছর সারা বিশ্বে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা এই চ্যালেঞ্জের প্রতি আরও আগ্রহ তৈরি করে।

বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ জানুয়ারি মাস এলে ভেগান ডায়েট অনুসরণ করতে শুরু করেছেন। ভেষজ খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় বহু রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে তাদের মেনুতে উদ্ভিদজাত খাবারের বিকল্পের সংখ্যা বাড়িয়েছে।

বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করেছে, যারা প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ কমাতে আগ্রহী, তাদের মধ্যে অধিকাংশই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন।

এক্সেটারের পিএইচডি গবেষক সোফি হার্ন বলেন, “মানুষকে যদি তাদের পরিচয়ে উৎসাহিত করা হয় যে তারা মাংস কমাচ্ছে বা বাদ দিচ্ছে, তবে এটি তাদের দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে।”

একই ধরনের আরেকটি ট্রেন্ড পশ্চিমে চালু হয়েছে যা ‘শুষ্ক জানুয়ারি’ (Dry January) বা অ্যালকোহলমুক্ত জানুয়ারি হিসেবে পরিচিত। যেমনভাবে কিছু লোক ভেগানুয়ারি শেষে মাংস ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করতে শুরু করে, ঠিক তেমনি শুষ্ক জানুয়ারিতে অংশগ্রহণকারীরা অ্যালকোহল খাওয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব অনুভব করতে শুরু করেন।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানুয়ারি মাসে ভেগানুয়ারি এবং শুষ্ক জানুয়ারি উভয়ের প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে কিছু কৌশল পরীক্ষা করা হবে, যা অংশগ্রহণকারীদের খাদ্য বা পানীয় নিয়ে সামাজিক বাধা মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।

ভেগানুয়ারি বা শুষ্ক জানুয়ারি আসলে একটি সাময়িক চ্যালেঞ্জ হলেও, এটি দীর্ঘমেয়াদী খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে সহায়ক হতে পারে। ভেগানুয়ারি প্রতি বছর সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হচ্ছে, এবং এটি জানুয়ারিতে আয়োজিত অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উদ্যোগের মতোই মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এমনকি ভেগানুয়ারি পরবর্তীতে অনেক অংশগ্রহণকারী তাদের মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। ভেগানুয়ারির অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি বলেছেন, তারা স্থায়ীভাবে তাদের মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ হ্রাসের পরিকল্পনা করছেন।

এটি স্পষ্ট যে, ভেগানুয়ারির মতো প্রচারাভিযানগুলো শুধু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনছে না, বরং সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবও ফেলছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত