Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

সবজি-পানে রপ্তানির লক্ষ্য পূরণ ৬ মাসেই

বিএফভিএপিইএ সভাপতির মতে, এ বছর প্রায় ১৫ কোটি ডলারের সবজি রপ্তানি করা সম্ভব। ফাইল ছবি
বিএফভিএপিইএ সভাপতির মতে, এ বছর প্রায় ১৫ কোটি ডলারের সবজি রপ্তানি করা সম্ভব। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

সবজি রপ্তানি গত ৬ বছর ধরে ছিল নিম্নমুখী। তবে চলতি অর্থবছরে বদলে গেছে সেই চিত্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেখানে সবজি রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬.৪৬ কোটি ডলার, সেখানে প্রথম ছয় মাসেই এসেছে ৬.৪১ কোটি ডলার। অর্থাৎ পুরো বছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছয় মাসেই অর্জিত হয়েছে প্রায়। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৯২ শতাংশ।

একই চিত্র পান রপ্তানিতেও। চলতি অর্থবছরে ১.৪ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় মাসেই এসেছে প্রায় ১.৪৩ কোটি ডলার। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর থেকে পান রপ্তানি বন্ধ ছিল। গত অর্থবছর থেকে আবার রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রথম বছরেই রপ্তানি হয় ১.২৭ কোটি ডলারের পান।

৫০ কোটি ডলারের সবজি রপ্তানি সম্ভব

সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ বছর প্রায় ১৫ কোটি ডলারের সবজি রপ্তানি করা সম্ভব।

বিএফভিএপিইএর তথ্য অনুসারে, করলা, চিচিঙ্গা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পটল, ঝিঙে, লেবু, বেগুন, সীম, মরিচ, নানান রকমের শাক সবজি রপ্তানি তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশসহ প্রায় অর্ধশতাধিক দেশে সবজি রপ্তানি হচ্ছে। সবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয়ের ৪৬ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, ৩০ শতাংশ ইউরোপ, ১৮ শতাংশ মালয়েশিয়া এবং বাকি ৬ শতাংশ আসে অন্যান্য দেশ থেকে। সবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড।

বিএফভিএপিইএর সভাপতি বলেন, “আমরা আমাদের সবজির গুণগত মান বৃদ্ধি করতে পেরেছি। চাষাবাদে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফলে আমাদের সবজির চাহিদা বহির্বিশ্বে তৈরি হয়েছে। এতে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

রপ্তানি বাড়লেও এতেই সন্তুষ্ট থাকতে রাজি নন তিনি। জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে বিশ্ববাজারে আমাদের সবজির দাম বেশি পড়ে যাচ্ছে অন্যদের থেকে। ফলে আমরা আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি।”

বিমানে সবজি রপ্তানি করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কোনও কার্গো বিমান না থাকায় বেশি খরচে সবজি পাঠাতে হয়। এর ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোর থেকে বেশি দাম পড়ে যায় আমাদের রপ্তানি করা সবজিতে।”

সবজি রপ্তানি করার ক্ষেত্রে সরকার যদি পরিবহন সঙ্কট কাটানোর টেকসই ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সবজি মৌসুমি পণ্য হওয়ায় এটি প্রক্রিয়াজাত করে পাঠানোর সময় হাতে কম থাকে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার পরই রপ্তানি করা সম্ভব হয় উন্নত বিশ্বে।

সময়মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে সবজি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, বেগুন রপ্তানি করার সময় বেগুনের আলাদা সার্টিফিকেট নিতে হয়, ঠিক তেমনি যেকোনো সবজি পাঠানোর জন্য আলাদা আলাদা সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে পড়ে মাঝে-মধ্যে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবজি মাঝে-মধ্যেই পাঠানো সম্ভব হয় না।

তবে আগের তুলনায় বর্তমানে কাগজপত্র সংগ্রহ করার পদ্ধতি কিছুটা সহজ হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় যদি এসব সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করে, তাহলে প্রান্তিক চাষি থেকে খামারি সবার জন্যই লাভজনক হবে।

বিএফভিএপিইএর সভাপতি আক্ষেপ করেন, “আমাদের বিমানবন্দরে কোনও শীতলীকরণ ব্যবস্থা নেই, ফলে বিমানের অপেক্ষায় থেকে প্রচুর সবজি নষ্ট হয়।”

একই সঙ্গে রপ্তানি করার উদ্দেশ্যে চাষ করছে যে সকল চাষি তাদেরকে বিশেষ ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

সমস্যাগুলো সমাধান এবং সঠিক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হলে ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত সবজি রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন বিএফভিএপিইএর সভাপতি।

কার্গো বিমান হবে শিগগিরই

আন্তর্জাতিক বিধি অনুসরণ করে বিদেশে উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম বৃদ্ধি ও গতিশীল করতে কাজ করেছে ‘উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং’। উইংয়ের পরিচালক ড. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয়ে সভা করেছি। সেই সভাতে কার্গো বিমান ক্রয়সহ সবজি রপ্তানি বৃদ্ধিতে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে রপ্তানিকারকদের বহুদিনের যে সঙ্কট, তা আর বেশিদিন থাকবে না। আমরা স্থায়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলব। এ উদ্দেশে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।”

রপ্তানি বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “বর্তমানে রপ্তানিকারকরা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করছে এবং তা মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। সবজি চাষ থেকে প্যাকেজিং পর্যন্ত রপ্তানি করার যে বৈশ্বিক মান রয়েছে তা আমরা অর্জন করতে পারছি। এর ফলে আমাদের সবজির গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিদেশের বাজারে আমাদের সবজির চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

একই সঙ্গে সবজি রপ্তানিতে সরকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করায় সবজি চাষিরা রপ্তানিতে আগ্রহী হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

তার মতে, পরিবহন সঙ্কট দূর করতে পারলে রপ্তানি আরও বাড়বে এবং আমাদের রপ্তানিকারকরাও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা ২০২০ অনুযায়ী এ বছর রপ্তানিযোগ্য সবজি চাষ হচ্ছে সর্বমোট ১০৫৬.৯৫ একর জমিতে এবং রপ্তানি হবে প্রায় ৯২৬৭.৫৭ টন সবজি। বর্তমানে সবজি চাষে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত