Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান, বিক্ষোভে উত্তাল ভেনেজুয়েলা

Venejuella-Clash_3
[publishpress_authors_box]

লাতিন আমেরিকান দেশ ভেনেজুয়েলাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেশটিতে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ।

রবিবার দেশটিতে ভোটাভুটির পর প্রাপ্ত ফলে ক্ষমতাসীন নিকোলাস মাদুরোকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। আর এই ফলকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধীরা দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেয়।

সোমবার ফলপ্রকাশের পরে দেখা যায়, ৫১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মাদুরো। আর বিরোধী জোটের প্রার্থী পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।

কিন্তু বিরোধীদের দাবি, তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস উরুশিয়া ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। কারচুপি করে বদলে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনের ফল।

বিরোধী দলনেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো দাবি করেন, মাদুরোর থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছেন তাদের প্রার্থী।

নির্বাচনের আগে পরিচালিত একাধিক জরিপেও বিরোধী জোটের প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেসের সুস্পষ্ট বিজয়ের আভাস পাওয়া গিয়েছিল।

বিরোধী জোট এই ফলাফলকে প্রতারণামূলক বলে প্রত্যাখ্যান করে চ্যালেঞ্জ জানানোর ঘোষণা দেয়। এরপর সোমবারই শুরু হয় বিক্ষোভ।

বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। ফলে প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ।

রাজধানী কারাকাসে সোমবার সন্ধ্যায় হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামেন। বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন ‘মিরাফ্লোরেসে’র দিকে এগোতে শুরু করেন।

এসময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

সোমবার ফ্যালকন রাজ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পূর্বসূরি হুগো শ্যাভেজের একটি মূর্তি ভাঙার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সোশাল মিডিয়ায় লাখ লাখ মানুষ ‘স্বৈরাচারের পতন চাই’ লিখে পোস্ট দেন।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা এবং তাদের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে যেতে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে জলকামান সহ সেনা ও পুলিশ নামানো হয় রাস্তায়।

জনতা স্লোগান দেয় ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা!’, এবং সরকার পতনের ডাক দেয়। পুলিশ, সেনা ও বামপন্থী আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং শহরের কেন্দ্রের চারপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়।

সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

নিকোলাস মাদুরো ১১ বছর ধরে ও তার সমাজতান্ত্রিক দল ২৫ বছর ধরে দেশটির ক্ষমতায় আছে। এর শুরু হয়েছিল প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের হাত ধরে। ২০১৩ সালে শ্যাভেজের মৃত্যুর পর মাদুরো দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। মাদুরো ছিলেন শ্যাভেজের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার সময়ে দেশটি ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।

অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলগুলো এবার মাদুরো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জোট বেধেছে। মাদুরো তার দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেন।

নির্বাচনের আগে পরিচালিত জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, গঞ্জালেস এবার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে স্পষ্ট ব্যাবধানে পরাজিত করতে চলেছেন।

ফলে মাদুরো সরকারের ভোট জালিয়াতির ব্যাপক আশঙ্কা সত্ত্বেও বিরোধীদের আশা ছিল, তারা এতো বেশি ভোট পাবে যে, মাদুরো প্রশাসনের ভোট কারচুপির চেষ্টা ব্যর্থ হবে। কিন্তু তাদের সেই আশার গুড়ে বালি পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ, জাতিসংঘ এবং দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনাসহ কয়েকটি দেশও এই ফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।

এর জবাবে লাতিন আমেরিকার সাতটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ভেনেজুয়েলা। আর্জেন্টিনা, চিলি, কোস্টারিকা, পানামা, পেরু, ডমিনিকান রিপাবলিক ও উরুগুয়ে থেকে রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে দেশটি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত