Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ভেনেজুয়েলায় মাদুরোকে জয়ী ঘোষণা, বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান

নিকোলাস মাদুরো।
নিকোলাস মাদুরো।
[publishpress_authors_box]

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ৮০ শতাংশ ভোট গণনার পর দেশটির জাতীয় নির্বাচনী পরিষদ তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে।

রবিবার দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় গণনা। ফল প্রকাশ করা হয় মধ্যরাতের পর।

মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মিত্র জাতীয় নির্বাচনী পরিষদের প্রধান এলভিস আমরোসো বলেছেন, ৮০ শতাংশ ব্যালট গণনার পর দেখা গেছে মাদুরো ৫১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।

তবে বিরোধী জোট এই ঘোষণাকে প্রতারণামূলক বলে প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচনের ফলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ঘোষণা দিয়েছে।

বিরোধী জোটের দাবি, তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। জোটটি জোর দিয়ে বলছে, তিনিই সত্যিকার অর্থে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

বিরোধীরা বলছে, বুথফেরত জরিপ ও দ্রুত গণনায় তারা যে ভোটের হিসাব পেয়েছেন, তাতে দেখা গেছে গঞ্জালেস ৪০ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে মাদুরোর চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিকোলাস মাদুরোকে পরাজিত করতে এবার দেশটির বিরোধী দলগুলো গঞ্জালেসের নেতৃত্বে জোট বেধে নির্বাচন করেছিল।

বিরোধীদলগুলো এই ফলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, মাদুরো ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবেন। আরও ছয় বছর দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন তিনি।

নিকোলাস মাদুরো ১১ বছর ধরে এবং তার সমাজতান্ত্রিক দল ২৫ বছর ধরে দেশটির ক্ষমতায় আছে। এর শুরু হয়েছিল প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের হাত ধরে। ২০১৩ সালে শ্যাভেজের মৃত্যুর পর মাদুরো দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। মাদুরো ছিলেন শ্যাভেজের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

নির্বাচনের আগে পরিচালিত জনমত জরিপগুলোতেও দেখা গিয়েছিল গঞ্জালেস এবার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে পরাজিত করতে চলেছেন।

এই নির্বাচনের ফল ২ কোটি ৯৪ লাখ জনসংখ্যার দেশটির সীমানা ছাড়িয়ে দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে প্রভাব ফেলবে।

গত ১০ বছরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ৭৮ লাখ মানুষ ভেনেজুয়েলা থেকে পালিয়ে গেছে।

নির্বাচনের আগে পরিচালিত জরিপগুলোতে ইঙ্গিত মিলেছে, ভোটের পর দেশত্যাগ আরও বাড়তে পারে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ভেনেজুয়েলার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মানুষ দেশত্যাগ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভিবাসন একটি গুরুত্বপুর্ণ ইস্যু। ফলে ওয়াশিংটনসহ লাতিন আমেরিকার যেসব দেশে ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছে, সেসব দেশেও এই নির্বাচনের প্রভাব পড়বে।

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের জন্যও এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশটিতে বিশ্বের বৃহত্তম তেলের রিজার্ভ রয়েছে।

মাদুরো তার দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী বলয় কিউবা, চীন, ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা গড়ে তুলেছেন।

মাদুরো ক্ষমতা হারালে ভেনেজুয়েলা এই দেশগুলো সহ তার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। আর মাদুরো ক্ষমতায় থাকলে এই মিত্রদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও গভীর হবে।

মাদুরো সরকারের ভোট জালিয়াতির ব্যাপক আশঙ্কা সত্ত্বেও বিরোধীদের আশা ছিল, তারা এতো বেশি ভোট পাবে যে, মাদুরো প্রশাসনের ভোট কারচুপির চেষ্টা ব্যর্থ হবে।

ভেনেজুয়েলার জাতীয় নির্বাচনী পরিষদ ভোটের ফলাফল ঘোষণা করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এনিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সংস্থাটিতে মাদুরোর প্রতি অনুগত কর্মকর্তার সংখ্যাই বেশি।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে যে, ঘোষিত ফলে ভেনেজুয়েলার জনগণের ইচ্ছা বা ভোটের প্রতিফলন ঘটেনি।”

চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিকও বলেছেন, তিনি এই ফল ’বিশ্বাস করা কঠিন’ বলে মনে করছেন।

বোরিক ’ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে ফলের সত্যতা যাচাই করানোর’ দাবি জানান।

উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট মাদুরো সরকার সম্পর্কে বলেছে, “প্রকৃত ফল যাইহোক না কেন তারাই জিতবে।”

এদিকে ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মাদুরোর মিত্ররা তাকে অভিনন্দন জানায়।

কিউবার প্রেসিডেন্ট বলেন, “ভেনেজুয়েলার জনগণের মর্যাদা ও সাহসিকতা বহিরাগত চাপ ও কারসাজির বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছে।”

মাদুরো কারকাসে তার উল্লাসিত সমর্থকদের সামনে এই ফলকে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার জয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ভেনেজুয়েলার নির্বাচন ব্যবস্থার প্রশংসা করে মাদুরো এই নির্বাচনকে স্বচ্ছ বলে বর্ণনা করেন। এছাড়া বিরোধীদের উপহাস করেন এই বলে যে, তারা প্রতিটি নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে কান্নাকাটি করে।

বিরোধীদের অভিযোগ, এবার তারা তাদের নিজস্ব ভোট গণনার জন্য দেশে হাজার হাজার এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে মোতায়েন করলেও তাদেরকে ভোট গণনা করতে দেওয়া হয়নি।

গঞ্জালেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র থেকেই তাদের এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনেও মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ এবারও মাদুরো সরকার ভোট জালিয়াতি করেছে। কারণ এবার নির্বাচনের আগেই মাদুরো ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি যেকোনও উপায়ে ভোটে জিতবেন।

ভেনেজুয়েলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। সেই মেশিন থেকে ভোটের ফল সরাসরি জাতীয় নির্বাচনী পরিষদের সদরদপ্তরে চলে যায়। তবে প্রতিটি ভোটের বিপরীতে মেশিনটি থেকে একটি কাগজের রসিদও বের হয়, যা একটি ব্যালট বাক্সে রাখা হয়।

আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এই কাগজের রসিদ গণনার জন্য তাদের সাক্ষী বা এজেন্ট রাখতে পারেন। কিন্তু এবার বিরোধী জোটের সাক্ষীদেরকে সেই রসিদ গণনা করতে দেওয়া হয়নি।

বিরোধীদের পরিকল্পনা ছিল, জাতীয় নির্বাচনী পরিষদের ঘোষিত ফলাফলের সঙ্গে কাগজের রসিদের মিল আছে কিনা তা তারা গণনা করে দেখবে। কিন্তু রবিবার দিনশেষে বিরোধী জোটের অভিযোগ, কাগজের রসিদের মাত্র এক তৃতীয়াংশেরও কম তাদের গণনা করতে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত