Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একক সিদ্ধান্ত নিতে চান না উপাচার্য

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর হলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর হলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা রকম বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে উপাচার্যের একপেশে হয়ে যাওয়া রোধে নতুন নিয়মের কথা ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। এক্ষেত্রে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার নিয়ে এই নিয়ম করার পক্ষে মত তার।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর হলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন হয়, যাতে সঞ্চালক ও সভাপতির ভূমিকা পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

সভায় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দুই পর্বের ৯ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেখানে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ভাবনা ও ক্ষমতা কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের বিষয় আলোকপাত করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বজনতার বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, “আমাদের মধ্যে যে সিনিয়র টিম ম্যানেজমেন্ট- এটা আসলে এখনও ওই অর্থে কাগজে-কলমে নেই। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য,  কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ এনাদের মধ্যে একটা নিয়ম করা যেতে পারে, যাতে উপাচার্যকে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না হয়। উপাচার্য যাতে একপেশে না হয়ে যায়। এই যোগাযোগটা এখন যে পর্যায়ে আছে, সেটা তূলনামূলকভাবে কার্যকর পর্যায়ে আছে।

“আমার টিমে লোকসংখ্যা খুব কম আপনারা জানেন। সহকর্মী হিসেবে আমরা তিনজন আছি। স্পিরিটটাকে ধারণ করতে পারছি। সিদ্ধান্তগুলো একসাথে নিচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারও ব্যাক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটা জনগণের সম্পদ, জনগণ যেভাবে চাইবে সেভাবে চলবে।”  

অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত বিচারে সমাজের প্রতিষ্ঠান। সবার প্রতিষ্ঠান। কৃষকের প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকের প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক সমাজের এই প্রস্তাবনাটি খুব পরিশ্রম করে করা হয়েছে। এখানে অনেক বিষয় আছে, যা ইহজনমে ও পরজনম মিলিয়েও আমার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এর যে আন্তরিকতা, এর পিছনে যে পরিশ্রম হয়েছে তাকে আমরা সম্মান জানাই। এর কিছু কিছু আমি এখনও বিশ্বাস করি, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে বাস্তবায়ন সম্ভব।”

উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে বেশকিছু মতামত অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সবার একটা আগ্রহ থাকে। আলোচনার মূল যে স্পিরিট অংশীজনদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা। সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করা। আমরা ১০ দিন আগে দায়িত্বে এসেছি। অনেক সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে। আমরা চেষ্টা করছি। শুরু করেছি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে হল পর্যায়ে যোগাযোগ করার মাধ্যমে। কারণ হচ্ছে, হলগুলো আমাদের খুঁটি।”

শিক্ষকদের দেওয়া এই প্রস্তাবনা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি আর বেসরকারি হয় না, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন ব্যবস্থা সরকারি বা বেসরকারি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক লক্ষ্য এটি সমাজের প্রতিষ্ঠান, সমাজের জন্য জ্ঞান উৎপাদন করবে। সঞ্চালন করবে।”  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ থাকে শিক্ষকরা এসে ক্লাস নিতে পারেন না। আমরা কি কখনও ভেবেছি শিক্ষকদের ট্রেনিং দেওয়া হয় না। তাদের কোনোদিন বলিনি কোন পদ্ধতিতে পড়ালে ভালো হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্রতে রূপান্তর করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে এই অধ্যাপক বলেন, “যে বিশ্ববিদ্যালয় হবে এদেশে জ্ঞান উৎপাদনের নেতৃত্বের পুরোধা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “যে প্রস্তাবনাটা দেওয়া হয়েছে, শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে এটা যদি করতে না পারি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় বলে আওয়াজ করার কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন মনিটর করতে হবে, তারা এই কাজগুলো করছে কি না।”

রাষ্ট্রের চরিত্র ও রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতকে ব্যবহার করা হয়েছে।”

সব ফ্যাকাল্টিকে মাথায় রেখে এই প্রস্তাবনাটি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, “যেকোনো প্রস্তাবনা সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, কলা ভবন, সর্বোচ্চ বিজনেস ফ্যাকাল্টি পর্যন্ত যায়। সাইয়েন্স ফ্যাকাল্টি পর্যন্ত যায় না।”

বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রবান্ধব, শিক্ষকবান্ধব করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, “আরও বেশি ছাত্র-শিক্ষক যুক্ত করে সকলকে ইনক্লুড করে হওয়াটা জরুরি।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটের জন্য নিজের মেরুদণ্ড ও স্বকীয়তা বিকিয়ে দিতে হয়। রাতদিন গণরুম গেস্টরুমে অপসংস্কৃতিতে থাকতে হয়। সিট সংকট কৃত্রিম সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিকতা প্রয়োজন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত